কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে মনুষ এতো ভয় পাচ্ছেন কেনো?

প্রকাশ: শুক্রবার, ০৭ মার্চ, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png নিজস্ব প্রতিবেদক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত
প্রযুক্তি দুনিয়ার আজ সর্বাধিক আলোচিত বিষয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। পদার্থবিদ্যায় এবারের নোবেল পুরস্কারও গেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা করা দুই শীর্ষ বিজ্ঞানীর হাতে। মানুষের মস্তিষ্কের মধ্যে যেভাবে থাকে স্মৃতির কারখানা ঠিক তেমনই এক কৃত্রিম নিউরন কাঠামো আবিষ্কারে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন এই দুই বিজ্ঞানী। এই আবিষ্কার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যাবে, যেখানে হার মানবে মানুষ।

তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষমতা, বিকাশের সম্ভাবনা ও শঙ্কা, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে গবেষক শ্রেণি, এমনকি দার্শনিকদেরও ভাবিয়ে তুলেছে। দীর্ঘদিন কৃত্রিম বুদ্ধির অন্যতম দিকপাল নোবেলজয়ী জেফ্রি হিন্টন এতদিন বিশ্বাস করতেন যে, মানুষের মগজ এআই থেকে অনেক উন্নত এবং এআইকে যত বেশি মানুষের মগজের মতো করার চেষ্টা করা হবে, তত উন্নতি তার হবে। কিন্তু, ২০২৩ সালে ভিন্ন একটা উপলব্ধি হলো তার।

গুগল এআই শাখার প্রধান এক বিজ্ঞানী এক লেকচারে বলেই বসলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরির যে জায়গায় আমরা আজ এসে দাঁড়িয়েছি, খুব সম্ভবত তা এখনই মানুষের মগজের চেয়ে ভালো, শুধু এটাকে আরেকটু বেশি মাত্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া বাকি। তিনি গোটা বিশ্বকে সতর্ক করে দিয়ে জানিয়ে দেন, এখন থেকেই যদি এআই’য়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পদক্ষেপ না নেয়া হয়, তাহলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে মানবজাতি।

মানুষের মগজের প্রায় ১০০ বিলিয়ন নিউরনের মধ্যে প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন আন্তঃসংযোগ আছে। আগামী পাঁচ বছরের কম সময়ে এআই সিস্টেম ১০০ ট্রিলিয়ন কানেকশন বা আন্তঃসংযোগ তৈরি করে ফেলতে পারবে। কারণে পৃথিবীজুড়ে নির্মাতারা প্রাণপণে চেষ্টা করছেন, যত বড় করেই সম্ভব, একটা এআই সিস্টেম তৈরি করতে। আর যেভাবে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে করে সেটি অর্জনও এখন সময়ের বিষয়।

নিউরাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অকল্পনীয় মাত্রায় তথ্য আত্মস্থ ও বিশ্লেষণ করতে হিন্টনের গবেষণা এআইকে সাহায্য করেছে। এ কারণেই এআই এখন ছবি চিনতে পারে, ভাষা বুঝতে পারে, নিজে গাড়ি চালাতে পারে। অবস্থাটা এখন দাঁড়িয়েছে অনেকটা ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের ঘটনার মতো, যে এআই তৈরিতে তিনি কাজ করেছেন, এখন তারই অতিমানবীয় ক্ষমতায় তিনি ভীত। তাই গুগলের ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ ছেড়ে দিয়েছেন।

হিন্টনের এমন সিদ্ধান্তের পর গোটা বিশ্ব এখন এআই নিয়ে চিন্তায়। এআই’য়ের অগ্রযাত্রা থামানো সম্ভব নয়, তাই সামনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেয়াকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশ এরিমধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়টিতে পাঠ্যক্রমে যুক্ত করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। তাছাড়া, এআই প্রযুক্তির ভালো দিকগুলো সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে আমেরিকাসহ বহু দেশে কাজও শুরু হয়েছে।

এটা এখন অনেকটাই নিশ্চিত, মানুষের সঙ্গে দৌড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জয় সুনিশ্চিত। যদিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কর্মপদ্ধতির সঙ্গে মানুষের জটিল চিন্তা শৈলীর বিস্তর তফাত। তবুও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ম্যাজিক দেখাবে তার উৎকর্ষে ও উৎপাদনশীলতায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা অনেক। তাকে দিতে হবে না বেতন, বা কোনও ভাতা। নেই ছুটির প্রয়োজন। রক্ষণাবেক্ষণের কৌশল জানলেই যথেষ্ট।

ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়বে লেখকদের কাজ। সাংবাদিকতায় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে এআই। স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে এটি। শিক্ষা ও বিনোদন জগতেও ছড়ি ঘোরাবে এআই। আর আইটি খাতের প্রায় পুরো নিয়ন্ত্রণই নেয়ার পথে এই প্রযুক্তি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের কারণে সারা পৃথিবীতে যেমন কিছু কাজ কমেছে, তেমনি কিছু খাতে চাকরির সম্ভাবনাও বাড়ছে।

তবে মানুষের চিন্তাশক্তির জটিলতা, আবেগ, অনুভূতি, এগুলো যন্ত্রের পক্ষে ধরা সম্ভব নয়। তাই যন্ত্রমানব বা রোবট যতই উন্নত হোক, মানুষের সঙ্গে তফাত থাকবেই। আর, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে উপেক্ষার উপায় যেহেতু নেই, এর ক্ষমতাকে কাজে লাগানোই উত্তম। সেই সঙ্গে যে কাজটা মানুষ করতে পারে, সেটা হলো প্রযুক্তির অপব্যবহারকে আটকানো। মানুষ যাতে নিজেই নিজেকে সঙ্কটে না ফেলে, তা দেখার দায়িত্ব মানুষেরই।

আপনার মতামত দিন