কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় নতুন বিপ্লব: রোবটের জন্য মানুষের মতো অনুভূতিসম্পন্ন ‘ত্বক’ তৈরি

প্রকাশ: শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত
রোবটিক প্রযুক্তির দীর্ঘদিনের সীমাবদ্ধতা ছিল একটি বিষয়ে-মানবসদৃশ অনুভূতি। এবার বিজ্ঞানীরা সেই সীমা ভেঙে নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। তাঁরা উদ্ভাবন করেছেন এক ধরনের কৃত্রিম ত্বক, যা একসঙ্গে স্পর্শ, তাপ এবং চাপ শনাক্ত করতে পারে। মানুষের মতো অনুভব করতে সক্ষম এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতের রোবটের চরিত্র পাল্টে দিতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সমস্যা কী ছিল?
মানবসদৃশ রোবট তৈরিতে যেমন বস্টন ডায়নামিকস এগিয়েছে, তেমনি রোবটের অনুভূতির ঘাটতি বরাবরই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এত দিন রোবটের জন্য স্পর্শ, গরম বা ঠান্ডা শনাক্ত করতে আলাদা আলাদা সেন্সর ব্যবহার করতে হতো। কিন্তু এসব সেন্সর ছিল সীমিত ক্ষমতার এবং একসঙ্গে একাধিক অনুভূতি শনাক্ত করতে পারত না। সেই সঙ্গে ‘ক্রস টক’ বা তথ্যের সংঘাতে ভুল ফলাফলের আশঙ্কাও থাকত।

নতুন প্রযুক্তির মূল বৈশিষ্ট্য কী?
ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজ এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষকদের তৈরি এই কৃত্রিম ত্বকের ভিত্তি এক ধরনের হাইড্রোজেল। এটি-
           >> নমনীয় ও প্রসারণযোগ্য
           >> একসঙ্গে একাধিক অনুভূতি শনাক্তে সক্ষম
           >> বিদ্যুৎ পরিবাহী
           >> পুনরায় গঠনযোগ্য ও ব্যবহারযোগ্য

এই হাইড্রোজেলের ত্বকে রয়েছে প্রায় ৮ লাখ ৬০ হাজার পৃথক পথ (pathways)-যা বিভিন্ন ধরনের স্পর্শ, চাপ, উষ্ণতা ও ঠান্ডার প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করে ডিজিটাল সংকেত হিসেবে রোবটকে পাঠাতে পারে।

বাস্তব পরীক্ষা ও ফলাফল
গবেষকেরা এই কৃত্রিম ত্বককে রোবটের হাতে মুড়ে দেন। এরপর এটি বিভিন্ন ধরনের সংস্পর্শে যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তা ছিল উল্লেখযোগ্য-
        >>হালকা ছোঁয়া থেকে চাপ-সব বুঝে সাড়া দিয়েছে রোবট।
        >>গরম বাতাসে আংশিক গলিয়ে আবার কেটে ফেলার পরও ত্বক আগের মতো কাজ করেছে।
        >>একাধিকবার গলিয়ে পুনরায় গঠন করেও কার্যকারিতা কমেনি।

এই পরীক্ষা প্রমাণ করে-ত্বকটি টেকসই, নমনীয় এবং পুনরায় ব্যবহারযোগ্য, যা বাস্তব ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।

সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ ব্যবহার
গবেষক টমাস জর্জ থুরুথেল বলেন, “এটি এখনো মানুষের ত্বকের সমতুল নয়, তবে অন্যান্য কৃত্রিম ত্বকের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর এবং সহজে প্রস্তুতযোগ্য।”

ভবিষ্যতে এই কৃত্রিম ত্বক ব্যবহার হতে পারে-
        >> দুর্যোগ মোকাবেলা ও উদ্ধার অভিযানে রোবটে
        >> কারখানায় সূক্ষ্ম কাজ করার রোবটিক বাহুতে
        >> স্বাস্থ্যসেবায় সহায়ক মানবসদৃশ রোবটে
        >> বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করার স্বচালিত যন্ত্রে

সীমাবদ্ধতা ও গবেষণার দিক
তবে এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে:
       >> সব অনুভূতি এখনো মানুষের মতো সূক্ষ্ম নয়
       >> প্রতিটি কাজে আলাদা ক্যালিব্রেশন দরকার হতে পারে
        >> দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহারে স্থায়িত্ব যাচাই বাকি

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এসব সমস্যা ধাপে ধাপে কাটিয়ে উঠলে রোবটিক্সে এক নতুন যুগের সূচনা হবে, যেখানে রোবট বুঝতে পারবে কোনো কিছু গরম না ঠান্ডা, শক্ত না ভঙ্গুর। এতে রোবট ও মানুষের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া আরও মানবিক ও নিরাপদ হয়ে উঠবে।

এই কৃত্রিম ত্বক শুধু প্রযুক্তিগত এক নতুন উদ্ভাবন নয়, বরং মানুষ ও রোবটের পারস্পরিক বোঝাপড়ার জগতে এক বড় অগ্রগতি। ভবিষ্যতে রোবটের ‘মানবিক স্পর্শ’ হয়তো আর কল্পনা নয়, এখন তা বাস্তবতার খুব কাছাকাছি। সূত্র: সায়েন্স রোবোটিকস জার্নাল, মেডিকেল ডিভাইস নেটওয়ার্ক

image

আপনার মতামত দিন