আমরা সাধারণত কালো রঙের হাতি দেখে অভ্যস্ত। বাস্তবে সামনে না দেখলেও, আমাদের কল্পনায় অনায়াসেই একটি কালো হাতির ছবি ফুটে ওঠে। এবার ভাবুন, যদি একটি হলুদ রঙের হাতি কল্পনা করতে বলা হয়! দেখবেন, চিন্তামাত্রই আপনার মস্তিষ্কে একটি হলুদ হাতির রূপ ভেসে উঠেছে। এটাই মানুষের চিন্তার শক্তি-বস্তুনিষ্ঠ বাস্তবতা ছাড়াও আমরা এমন কিছু ভাবতে পারি, যা আমাদের চোখের সামনে নেই বা বাস্তবে অস্তিত্ব নেই।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বিমূর্ত চিন্তা করার এই অসাধারণ ক্ষমতা শুধুমাত্র মানুষের মধ্যেই বিদ্যমান। অন্যান্য প্রাণী তাদের অভিজ্ঞতা, পরিবেশ এবং প্রয়োজন অনুসারে চিন্তা করতে পারে, কিন্তু মানুষের মতো এত জটিলভাবে অবাস্তব বা কল্পনামূলক বিষয় কল্পনা করতে পারে না।
মানুষের মস্তিষ্ক সব সময়ই নানা চিন্তায় ব্যস্ত থাকে। কল্পনা, স্মৃতি, আবেগ, বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো জটিল প্রক্রিয়াগুলো অবচেতনভাবেও আমাদের চিন্তার অংশ হয়ে থাকে। বিমূর্ত চিন্তাভাবনার এই ক্ষমতাই মানুষকে অন্যসব প্রাণীর থেকে পৃথক করেছে এবং সৃজনশীলতা, দর্শন, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও শিল্পের বিকাশ ঘটিয়েছে।
যে কোনো শারীরিকভাবে দৃশ্যমান নয় এমন বস্তু বা ধারণা নিয়ে চিন্তা করা এবং তা নিয়ে ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ বা নতুন কিছু সৃষ্টি করা মানুষের চিন্তার উচ্চতম রূপ। এই অনন্য কৌশলের কারণেই মানুষ ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করতে পারে, নতুন সম্ভাবনার কথা ভাবতে পারে এবং বাস্তবতাকে অতিক্রম করে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারে।
প্রথমবারের মতো মানুষের মস্তিষ্কের কোষের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা বিমূর্ত চিন্তাভাবনা করার কৌশল বের করেছেন। মস্তিষ্কের নিউরন কীভাবে এমন কৌশলে কাজ করেছে তা বের করার চেষ্টা করছেন তাঁরা। স্পেনের হসপিটাল ডেল মার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা নিউরনের এই কৌশল বের করেছেন।
সেল রিপোর্টস জার্নালে একটি গবেষণাপত্রে নিউরনের বিমূর্ত চিন্তার কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। একটি পৃথক নিউরনের এমন আচরণ মস্তিষ্কে উচ্চতর ও বিমূর্ত ধারণা গঠনের অনুমতি দেয় বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এই নিউরন মানুষের বুদ্ধিমত্তার ভিত্তি গঠন করে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
স্নায়ুবিজ্ঞানী রদ্রিগো কুইয়ান কুইরোগা বলেন, মানুষের নিউরোনাল কোডিংয়ের মূল নীতি অন্যান্য ক্ষেত্রে যা দেখা গেছে তার বিপরীত। এই নিউরনের উল্লেখযোগ্য প্রভাব দেখতে পাই আমরা। আমরা বিভিন্ন কাজে একই ধারণার প্রতি একই রকম একক-নিউরন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেছি। গবেষণার জন্য আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাজ্যের নয়জন মৃগীরোগীর মস্তিষ্কে ইলেকট্রোড স্থাপন করা হয়েছিল। এরপর তাদের নিউরনের পৃথক আচরণ শনাক্ত করার পাশাপাশি নিউরনের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার সুনির্দিষ্ট আচরণ ধারণ করা হয়। রোগীদের গবেষণার অংশ হিসেবে দুটি গল্প উপস্থাপন করা হয়। দুটি গল্পের জন্য রোগীদের মস্তিষ্কে একটি নিউরনের প্রতিক্রিয়া একই দেখা গেছে।
অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় মানুষের মধ্যে স্মৃতি অনেক বেশি বিমূর্তভাবে সংরক্ষিত হয়। আপনি যে প্রেক্ষাপটে যা শিখছেন, তার ওপর নির্ভর করে আপনি কেমন ধারণা রাখেন। এই নিউরন মানব বুদ্ধিমত্তার ভিত্তি হতে পারে। এই ক্ষমতা আমাদের নির্দিষ্ট ও সুনির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটের মধ্যে বিভিন্ন ধারণা সম্পর্কে ভাবতে বাধ্য করার চেয়ে বেশি বিমূর্ত ধারণা বুঝতে সহায়তা করে। বিভিন্ন জটিল সম্পর্ক ও অনুমান করার সুযোগ পায়। সূত্র: এনডিটিভি