মানবাকৃতি বা হিউম্যানয়েড রোবট বানাতে বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে মেটা। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের সিটিও অ্যান্ড্রু বসওয়ার্থ। এই প্রকল্পকে ঘিরে প্রযুক্তি দুনিয়ায় নতুন কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
মেটার নতুন মিশন
মার্ক জাকারবার্গের নির্দেশে এ বছরের শুরুতে বসওয়ার্থ একটি রোবোটিকস গবেষণা দল গঠন করেন। মেটার সদর দপ্তরে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, হার্ডওয়্যার নয়, বরং সফটওয়্যারই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
কেন সফটওয়্যারই আসল চ্যালেঞ্জ?
বসওয়ার্থ একটি গ্লাস হাতে নিয়ে বোঝান সমস্যাটা। রোবট সহজে দাঁড়াতে, দৌড়াতে কিংবা ডিগবাজি দিতে পারে। কিন্তু একটি গ্লাস তুলতে গিয়ে সেটি ভেঙে ফেলতে পারে বা পানি ফেলে দিতে পারে। এই দক্ষতা শেখানোর নাম ডেক্সটারাস ম্যানিপুলেশন, যার মাধ্যমে রোবট নিখুঁতভাবে জিনিসপত্র ধরতে পারবে।
‘মেটাবট’ ও ওপেন প্ল্যাটফর্ম
মেটা ইতিমধ্যেই নিজেদের হিউম্যানয়েড রোবট বানাচ্ছে। ভেতরে এর নাম রাখা হয়েছে ‘মেটাবট’। তবে মেটার লক্ষ্য শুধু রোবট বানানো নয়। তারা এমন একটি সফটওয়্যার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চায় যা অন্য রোবট নির্মাতারাও ব্যবহার করতে পারবে। ঠিক যেমন অ্যান্ড্রয়েডের সফটওয়্যার ফোন নির্মাতারা ব্যবহার করে।
‘ওয়ার্ল্ড মডেল’ তৈরি হচ্ছে
মেটার নতুন সুপার ইন্টেলিজেন্স এআই ল্যাব এখন রোবোটিকস দলের সঙ্গে কাজ করছে। তারা একসঙ্গে তৈরি করছে ‘ওয়ার্ল্ড মডেল’। এই সফটওয়্যার রোবটের হাতকে ‘ডেক্সটারাস হ্যান্ড’ হিসেবে কাজ করতে সাহায্য করবে। ফলে রোবট খুব নিখুঁতভাবে কোনো বস্তু ধরতে ও নড়াতে পারবে।
গুগল ডিপমাইন্ডের প্রধান ডেমিস হাসাবিসও আগেই এমন ধারণার কথা বলেছিলেন।
সেন্সর লুপ ও ডেটা সেট
বসওয়ার্থের মতে, মানুষের মতো রোবটকে কাজ শেখাতে দরকার একটি সেন্সর লুপ। যেমন, একজন মানুষ সহজেই জিন্সের পকেট থেকে চাবি বের করতে পারে। রোবটকে সেটি শেখাতে হলে বিপুল পরিমাণ ডেটা সেট তৈরি করতে হবে।
টেসলার সঙ্গে পার্থক্য
টেসলার হিউম্যানয়েড রোবট ‘অপটিমাস’ নিয়ে জানতে চাইলে বসওয়ার্থ বলেন, মেটা টেসলার পথ অনুসরণ করবে না।
টেসলা বলে, ‘আমরা লাইডার ব্যবহার করব না। মানুষ চোখ দিয়েই পারে, আমরাও পারব।’ কিন্তু বসওয়ার্থের মতে, গাড়ি ডেটা পেতে পারে। কিন্তু রোবটের জন্য সেই ডেটা কোথা থেকে আসবে, সেটাই বড় প্রশ্ন।
কারা এই প্রকল্পে কাজ করছেন?
এই বড় মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নামকরা ব্যক্তিরা, রোবোটিকস দল পরিচালনা করছেন ক্রুজ (Cruise)–এর সাবেক সিইও মার্ক হুইটেন। এমআইটির বিশ্বখ্যাত রোবোটিকস বিজ্ঞানী স্যাংবে কিম এই দলে যুক্ত হয়েছেন। ওরিয়ন এআর গ্লাসেসের সফটওয়্যার আর্কিটেক্ট জিনসঙ ইউ কাজ করছেন সফটওয়্যার আর্কিটেকচারে। রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ১৫ বছরের অভিজ্ঞ মেটা কর্মী নিং লি। আর পুরো এআই ল্যাব পরিচালনা করছেন স্কেল এআই-এর সাবেক সিইও আলেক্সান্ডার ওয়াং।
মেটার স্বপ্ন
মেটা শুধু রোবট বানাতে চায় না। তারা চায় যেকোনো কোম্পানি নির্দিষ্ট স্পেসিফিকেশন মেনে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারে। ঠিক যেমন গুগল তার সফটওয়্যার লাইসেন্স দেয় ফোন নির্মাতাদের। সূত্র: দ্য ভার্জ, গুগল ডিপমাইন্ড