ইরান আবারও মহাকাশ জয়ের পথে একধাপ এগিয়ে গেল। রাশিয়ার তৈরি রকেটের মাধ্যমে নিজেদের ডিজাইন করা একটি যোগাযোগ উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়েছে তারা। দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমের দাবি অনুযায়ী, শুক্রবার (২৫ জুলাই) সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে ‘নাহিদ-২’ নামের এই উপগ্রহ।
কী রয়েছে এই উৎক্ষেপণে?
ইরানের বিজ্ঞানীরা জানান, নাহিদ-২ একটি ১১০ কেজি ওজনের যোগাযোগ উপগ্রহ। এটি সম্পূর্ণ ইরানি প্রকৌশলীদের ডিজাইন ও নির্মিত, উৎক্ষেপণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে রাশিয়ার ভোস্তোচনি কসমোড্রোম এবং রকেট হিসেবে ছিল রাশিয়ার বিখ্যাত সয়ুজ। এই উৎক্ষেপণ ইরানের জন্য প্রযুক্তিগতভাবে একটি বড় অর্জন হলেও, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এটি নানা উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
কেন উদ্বিগ্ন পশ্চিমা বিশ্ব?
পশ্চিমা বিশ্বের (বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি) দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। তারা মনে করে, “ইরানের মহাকাশ গবেষণা কার্যক্রম গোপনে তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।”
ইরান এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তবে সময় ও প্রেক্ষাপটের কারণে এই উৎক্ষেপণ আরও বেশি সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।
কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট: পরমাণু আলোচনা ও উত্তেজনার ছায়া
উৎক্ষেপণের দিনই তুরস্কের ইস্তাম্বুলে শুরু হয় ইরান, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষ-পরবর্তী প্রথম কূটনৈতিক সমাবেশ হিসেবে।
গত জুনে ইসরায়েলের সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, যার জবাবে শুরু হয় ১২ দিনের সামরিক উত্তেজনা। এই প্রেক্ষাপটে ইরানের মহাকাশ কার্যক্রমকে কিছু বিশ্লেষক দেখছেন ‘কৌশলগত বার্তা’ হিসেবেও।
ইরানের মহাকাশ কর্মসূচির অগ্রগতি: কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নজির
>>ডিসেম্বর ২০২৩: ইরান দাবি করে, তারা দেশীয় রকেটের মাধ্যমে সবচেয়ে ভারী পেলোড পাঠাতে সক্ষম হয়েছে।
>>সেপ্টেম্বর ২০২৩: আইআরজিসি (Islamic Revolutionary Guard Corps)-র মহাকাশ বিভাগ তৈরি করে গায়েম-১০০ বাহক রকেট, যা দিয়ে কক্ষপথে পাঠানো হয় গবেষণা উপগ্রহ চামরান-১।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
ইরানের মহাকাশ কর্মসূচি এখন শুধু যোগাযোগ বা বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের একটি হাতিয়ার। এই উৎক্ষেপণ বিশ্ববাসীকে মনে করিয়ে দেয়- আধুনিক ভূরাজনীতি কেবল ভূমি ও সমুদ্রেই নয়, মহাকাশেও বিস্তৃত।
ইরানের ‘নাহিদ-২’ উৎক্ষেপণ নিঃসন্দেহে দেশটির প্রযুক্তি অগ্রগতির এক বড় প্রমাণ। তবে এই অর্জনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও নিরাপত্তা ইস্যুগুলো নতুনভাবে আলোচনায় আসছে। আগামী দিনগুলোতে ইরানের মহাকাশ কার্যক্রম যে শুধু বিজ্ঞান নয়, কূটনীতি ও ভূরাজনীতির অংশও হয়ে উঠবে তা বলাই বাহুল্য। সূত্র: আল জাজিরা