ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স এবার শুধু নভোচারী পাঠানোর কাজেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং সঙ্গে নিয়েছে এক ব্যতিক্রমী বৈজ্ঞানিক গবেষণা। ‘ক্রু-১১’ মিশনের মাধ্যমে চারজন নভোচারী পৌঁছেছেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস)। সঙ্গে নিয়ে গেছেন এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া, যেগুলো সাধারণত মানুষের শরীরে নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি করে।
এই গবেষণার মূল লক্ষ্য হলো, মহাকাশের পরিবেশে এই ব্যাকটেরিয়াগুলোর আচরণ ও জিনগত পরিবর্তন কীভাবে ঘটে, তা খুঁজে বের করা।
গবেষণার পেছনে কারা?
এই গবেষণা পরিচালনা করছে ইসরায়েলের শেবা মেডিকেল সেন্টার এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসট্যাঙ্গো (SpaceTango)। তারা মহাকাশে ব্যাকটেরিয়ার আচরণ কীভাবে বদলায়, সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন, বিশেষ করে কীভাবে এই ব্যাকটেরিয়াগুলো অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠে বা রোগ ছড়ায়, সেটি বুঝতে।
কোন ব্যাকটেরিয়াগুলো নিয়ে যাওয়া হয়েছে?
গবেষণায় ব্যবহার করা হচ্ছে তিন ধরনের ব্যাকটেরিয়া। এগুলো হলো ই. কোলাই (E. coli), সালমোনেলা বংগোরি (Salmonella bongori) ও সালমোনেলা টাইফিমিউরিয়াম (Salmonella typhimurium)। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো সাধারণত খাদ্যে বিষক্রিয়া, পেটের সমস্যা বা সংক্রমণ ঘটায়।
কেন মহাকাশে এই গবেষণা?
পৃথিবীর তুলনায় মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ প্রায় নেই বললেই চলে যাকে বলে মাইক্রোগ্র্যাভিটি। এই ভিন্ন পরিবেশে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি, জিনের পরিবর্তন এবং রোগ সৃষ্টির ক্ষমতা সবই পরিবর্তিত হয়। পূর্বের গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে, মহাকাশে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বাড়ে, অপ্রত্যাশিত আচরণ করে, অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এসব কারণে মহাকাশযাত্রায় থাকা নভোচারীরা দীর্ঘ সময় মহাকাশে থাকলে সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়েন।
গবেষকদের মতামত
শেবা মেডিকেল সেন্টারের সংক্রামক রোগ গবেষণাগারের প্রধান অধ্যাপক ওহাদ গাল-মোর বলেন, “আমরা জানি, মহাকাশের পরিবেশ ব্যাকটেরিয়ার আচরণকে বদলে দেয় তারা কীভাবে বাড়ে, জিন পরিবর্তন করে এবং রোগ সৃষ্টির ক্ষমতা পায় এসব বোঝার জন্য এই গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও বলেন, “এটি প্রথমবারের মতো মহাকাশে কিছু রোগজীবাণুর জিনগত পরিবর্তন পদ্ধতিগতভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ দেবে।”
গবেষণা কীভাবে পরিচালিত হবে?
নভোচারীরা মহাকাশে ব্যাকটেরিয়াগুলোর বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করবেন। পরে সেই ব্যাকটেরিয়াগুলোকে মাইনাস ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে হিমায়িত করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে। একই সময়ে পৃথিবীর একটি গবেষণাগারেও ওই ব্যাকটেরিয়াগুলোর উপর একই ধরনের পরীক্ষা চালানো হবে। শেষে, মহাকাশ ও পৃথিবীর পরিবেশে ব্যাকটেরিয়াগুলোর আচরণ ও জিনগত পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হবে।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
এই গবেষণার মাধ্যমে মহাকাশ অভিযানে সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আরও ভালো ধারণা পাওয়া যাবে। ব্যাকটেরিয়ার জিনগত আচরণ ও শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া সম্পর্কে নতুন তথ্য মিলবে। দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ অভিযানে নভোচারীদের সুরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করা যাবে।
ভবিষ্যতের জন্য বার্তা
এই ধরনের গবেষণা শুধু মহাকাশ অভিযানের জন্য নয়, বরং পৃথিবীর রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়নের দিকেও বড় ভূমিকা রাখতে পারে। যে যুগে মানুষ মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেখানে মহাকাশে জীবাণুর আচরণ জানা জীবন রক্ষাকারী প্রযুক্তি হয়ে উঠতে পারে। সূত্র: নাসা ডটগভ, স্পেসট্যাঙ্গো ডটকম, স্পেসডট কম ও এনডিটিভি