যেসব কারণে কানাডায় নিষিদ্ধ চীনা সিসি ক্যামেরা হিকভিশন 

প্রকাশ: সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

চীনের নজরদারি প্রযুক্তির জগতে হিকভিশন একটি বহুল পরিচিত নাম। কিন্তু এই খ্যাতি এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতির কড়াল ছায়ায় বিতর্কে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি কানাডা সরকার জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকি দেখিয়ে হিকভিশনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত প্রযুক্তিনির্ভর এই সময়ের বাস্তবতায় বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

হিকভিশনকে কেন নিষিদ্ধ করা হলো?
কানাডার শিল্পমন্ত্রী মেলানি জলি জানিয়েছেন, হিকভিশন কানাডা ইনকরপোরেটেডের কার্যক্রম দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে-এমন বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আসলে একটি বহুমাত্রিক পর্যালোচনার ফল, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতামত বিবেচনায় আনা হয়েছে।

তবে মন্ত্রীর বক্তব্যে সরাসরি চীন বা জিনজিয়াং প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা হয়নি। তবুও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হিকভিশনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অজানা নয়। বিশেষ করে চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলে উইঘুর ও অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নজরদারিতে হিকভিশনের ভূমিকা রয়েছে বলে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা অভিযোগ করে আসছে। এ কারণেই প্রতিষ্ঠানটি আগেই যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশের নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়েছে।

হিকভিশনের প্রতিক্রিয়া কী?
এই নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে হিকভিশনের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটির একজন মুখপাত্র বলেন, "আমরা এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে দ্বিমত পোষণ করি এবং এটিকে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছি।" 

তারা মনে করে, কানাডা সরকার প্রযুক্তির নিরাপত্তা যাচাই না করেই শুধুমাত্র চীনা উৎসের কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা পক্ষপাতমূলক ও রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

হিকভিশন আরও দাবি করেছে, তারা ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত পাঁচটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে জিনজিয়াং সম্পর্কিত কার্যক্রম প্রত্যাহার করেছে। তাদের দাবি-তাদের প্রযুক্তি নিরাপদ এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, বরং বাস্তব তথ্যের ভিত্তিতেই যেন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কানাডা সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো কী কী?
হিকভিশনের বিরুদ্ধে কানাডা সরকারের উদ্যোগ ছিল বহুমুখী:

>>সরকারি নিষেধাজ্ঞা: সব ধরনের সরকারি বিভাগ, সংস্থা ও ক্রাউন করপোরেশনে হিকভিশনের পণ্য ক্রয় ও ব্যবহারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

>>পুরোনো যন্ত্র সরানো: যেসব সরকারি ভবনে ইতোমধ্যে হিকভিশনের নজরদারি ক্যামেরা ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলো সরিয়ে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

>>শুধুমাত্র কানাডাভিত্তিক কার্যক্রমে প্রযোজ্য: এই সিদ্ধান্ত হিকভিশনের আন্তর্জাতিক শাখাগুলোর ওপর প্রভাব ফেলবে না, শুধুমাত্র কানাডায় তাদের কার্যক্রম ও অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

>>জনসাধারণকে সতর্কবার্তা: মন্ত্রী মেলানি জলি সাধারণ নাগরিকদেরও সচেতনভাবে প্রযুক্তি ব্যবহারে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছেন।

বড় প্রশ্ন: নিরাপত্তা নাকি ভূরাজনীতি?
এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে বড় এক প্রশ্ন সামনে এসেছে-কানাডার পদক্ষেপ কি সত্যিই জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ, নাকি এটি চীন-মার্কিন ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার অংশমাত্র?

অনেকেই বলছেন, বর্তমান বৈশ্বিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে পশ্চিমা দেশগুলো ক্রমেই চীনা প্রযুক্তিকে সন্দেহের চোখে দেখছে। বিশেষ করে নজরদারি ও সাইবার নিরাপত্তা ইস্যুতে। তবে প্রযুক্তির উৎসকে কেন্দ্র করে যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, সেটি প্রযুক্তির বিশ্বায়ন ও বৈশ্বিক ব্যবসার জন্য এক ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে।

চীনা নজরদারি প্রযুক্তির প্রতি বাড়তে থাকা সন্দেহের এই ধারা আগামী দিনে আরও কোন কোন দেশ অনুসরণ করবে, তা এখনো সময়ের ব্যাপার। তবে হিকভিশনের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি এক বড় ধাক্কা-শুধু ব্যবসার দিক থেকেই নয়, বরং তাদের গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থার প্রশ্নেও। সূত্র: রয়টার্স

image

আপনার মতামত দিন