অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সিটিসেল কর্মীদের

প্রকাশ: শুক্রবার, ১৭ অগাস্ট, ২০১৮
Image উজ্জ্বল এ গমেজ
news-banner
  ছবি: সংগৃহীত
দেশের প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেল বন্ধ এবং প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। তাদের জন্য 'স্বেচ্ছা অবসর স্কিম' চালু হবে নাকি ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে, সে বিষয়ে মুখ খুলছে না কেউই। আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে সিটিসেল আনুষ্ঠানিক বন্ধ করার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে।
 
এমন পরিস্থিতিতে সিটিসেল কর্মীদের করণীয় নির্ধারণ করতে উদ্যোগ নিয়েছে প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (পিবিটিএলইইউ)। এরই অংশ হিসেবে বুধবার বিকেলে মহাখালীতে সিটিসেলের প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করার কথা রয়েছে।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের সবচেয়ে পুরনো মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেল থেকে গত এক মাসে ২৭ জন কর্মী চাকরি ছেড়েছেন। সিটিসেলে কর্মরত শ্রমিকদের সংখ্যা ছিল ৪৪৩ জন। এর মধ্যে নারী কর্মী ৭২ জন। সম্প্রতি ২৭ জন কর্মী বিদায় নেয়ার পর প্রতিষ্ঠানটিতে এখন মোট কর্মীর সংখ্যা ৪১৬ জন।
 
সূত্র আরো জানায়, বিদায় নেয়া কোন কর্মীকে শেষ চার মাসের বেতন দেয়া হয়নি। আগামীতে তারা কবে বেতন পাবে বা স্বেচ্ছায় অবসর স্কিমের সুযোগ তৈরি হবে কিনা সে বিষয়ে কোনো কিছুই তাদের বলা হয়নি। তবে সিটিসেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহবুব চৌধুরী 'সুসময়ের‘ জন্য সবাইকে অপেক্ষা করতে বলেছেন। তবে সিটিসেলে এই 'সুসময়' কবে আসবে সে সম্পর্কে খোদ কর্তৃপক্ষেরও কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই।
 
গত ৩১ জুলাই বিটিআরসি থেকে সিটিসেলের গ্রাহকদেরকে অন্য অপারেটরে চলে যাওয়ার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে টনক নড়ে সিটিসেলের। কিন্তু এরপর করণীয় কী সে বিষয়ে কখনই কর্মীদের ধারণা দেয়া হয়নি। ফলে তারা সবাই অনিশ্চয়তায় জীবন যাপন করছে।
 
এদিকে সিটিসেল বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে বুধবার (আজ) হতে। তবে গ্রাহকরা বিকল্প অপারেটরে যেতে আরও সাত দিন সময় পাচ্ছেন। মঙ্গলবার বিকালে সচিবালয়ে টেলিযোগাযোগ বিভাগে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
 
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর ওই সংবাদ সম্মেলনে তারানা  হালিম জানান, বুধবার হতে সিটিসেল বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে গ্রাহকরা ২৩ আগস্ট পর্যন্ত বিকল্প সেবায় যেতে সময় পাচ্ছেন। আগামী ২৩ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠানটিকে বন্ধ করে দেবে সরকার। সিটিসেল কর্তৃপক্ষের কাছে লাইসেন্স ফি এবং তরঙ্গ ফি বাবদ ৪৭৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। এই পাওনা আদায়ে মামলাও করা হচ্ছে।

প্রতিমন্ত্রী  বলেন, সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অনুমোদনের জন্য সিদ্ধান্তের কপি পাঠানোর হবে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। বকেয়া রাজস্ব আদায় করবই, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক সব অপারেটরের জন্যই, যে আমরা বকেয়ার ব্যাপারে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। সিটিসেলের বকেয়া আদায়ের জন্য যত মামলা-মোকদ্দমা করা দরকার, তা আমরা করব। দ্রুততার সাথে বকেয়া আদায়ের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
 
তারানা  হালিম  আরো বলেন, পাওনা আদায়ে আমরা তাদের নোটিশ দিয়েছি, জবাব চেয়ে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তারা কোনো জবাব দেয়নি, পাওনাও পরিশোধ করেনি। ফলে দীর্ঘ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।
 
অন্যান্য অপারেটরদের পাওনার বিষয়ে তারানা হালিম বলেন, টেলিটক ও বিটিসিএল ছাড়া কোনো মোবাইল ফোন অপারেটরের (গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেল) কাছে সরকারের পাওনা নেই। তবে টেলিটক ও বিটিসিএল-এর তাদের কাছ থেকে কীভাবে পওনা আদায় করা যায় তার উদ্যোগ সমন্বয় করা হবে। এছাড়া টেলিটকের বকেয়া বিষয়ে পেইড আপ ক্যাপিটাল হিসেবে গ্রহণ করা যায় কি না, সে বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
 
বিকেলে বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এক ফেসবুক স্ট্যাটাসেও সিটিসেল বন্ধের বিষয়ে জানান। তিনি লিখেছেন, সিটিসেলের কাছে লাইসেন্স ফি ও তরঙ্গ বাবদ ৪৭৭.৫১ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। বার বার বলার পরেও তারা টাকা পরিশোধ করেনি। তাই সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গ্রাহকরা আগামী সাতদিন সিটিসেলের রিম ব্যবহার করতে পারবেন। সাতদিন পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যাবে। আগামীকাল থেকে সাতদিনের গণনা শুরু হবে।
 
এদিকে বুধবার বিটিআরসি, টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও সিটিসেল কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করার কথা রয়েছে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের। এই বৈঠকের আগেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণে সিটিসেলের কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
 
অন্যদিকে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত যাতে কার্যকর না হয় এবং দেনা পরিশোধে যাতে আরো কিছুটা সময় পাওয়া যায়, সে জন্যে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়ে বিটিআরসির কাছে আবেদন করে রেখেছে সিটিসেল। এর মধ্যে কিছু টাকা জোগাড় করে হলেও সরকারের কাছে সময় বাড়ানোর অনুরোধ করতে চায় সিটিসেল।
 
বিটিআরসির হিসাবে চলতি বছরের জুন মাস নাগাদ অপারেটরটির গ্রাহক সংখ্যা ৭ লাখ ৬০ হাজার। এরমধ্যে ২ লাখ সিমের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন হয়েছে।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিটিসেল কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক বছর থেকে স্থানীয় শেয়ার হোল্ডাররা আর সিটিসেলে নতুন কোনো বিনিয়োগ করছেন না। তারা বরং নানাভাবে চেষ্টা করছিলেন অপারেটরটির জন্য নতুন বিনিয়োগকারী জোগাড়ের। কয়েকবার ভিয়েতনাম, চীন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি কোম্পানির নাম শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত আর কাউকেই  আনতে পারেনি তারা। তবে এখনও চেষ্টা চলছে।
 
সূত্র আরো জানায়, ১৯৮৯ সালে দেশের প্রথম মোবাইল অপারেটরের লাইসেন্স পেয়ে সিটিসেল ১৯৯৩ সাল থেকে সেবা দিতে শুরু করে। যার ৪৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক সিঙ্গাপুরের টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা কোম্পানি সিংটেল-এর হাতে। আর সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোর্শেদ খানের প্যাসিফিক মোটর্সের রয়েছে ৩৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ শেয়ার। এছাড়া ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ফার ইস্ট টেলিকমের হাতে। সেটিও আসলে মোর্শেদ খানেরই আরেকটি কোম্পানি।
 
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সিটিসেল ইউনিয়নের সভাপতি আশরাফুল করিম বলেন, আমরা চরম অনিশ্চয়তায় জীবন-যাপন করছি। আমরা এখন আতঙ্কিত, শঙ্কিত ও দিশাহারা। ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমাদের অমানবিক আর অনিশ্চিত জীবন সম্পর্কে জানাতে বুধবার (আজ) মানববন্ধনের আয়োজন করেছি।

নিউজটি বিবার্তায় প্রকাশ হয়েছে। মূল নিউজটি দেখতে ক্লিক করুন এ লিংকে

Leave Your Comments