‘সফটওয়্যারে বৈশ্বিক পরিচয় পাবে বাংলাদেশ’

প্রকাশ: বুধবার, ২৭ জুন, ২০১৮
Image উজ্জ্বল এ গমেজ
news-banner
  ছবি: সংগৃহীত
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা (ইআরপি) সফটওয়্যারের প্রসারের মাধ্যমে বাংলাদেশ এক হাজার কোটি টাকার নতুন বাজার তৈরি করা সম্ভব বলে মনে করেন বেসিস যুগ্ম মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল। 
 
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) ১৯৯৭ সাল থেকে সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক সংগঠন হিসেবে দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতে অবদান রেখে আসছে। বাংলাদশে ইআরপি সফটওয়্যারের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে সোহেল বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানের সব বিভাগের কার্যক্রম এক ব্যবস্থাপনায় নির্বাহ করার সফটওয়্যারকে এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি) ইআরপি সফটওয়্যার বলা হয়। আমাদের দেশে গার্মেন্ট শিল্প, টেক্সটাইল, শিক্ষা ক্ষেত্রসহ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইআরপি সফটওয়্যারকে পরিচিত করানোর সুযোগ রয়েছে। এ সব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৯০ ভাগের ব্যবস্থাপনায় একক ইআরপি নেই।
 
দেশের অন্যতম ইআরপি সফটওয়্যার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এডভান্সড ইআরপির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল বাংলাদেশের তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ১৯৯৬ সাল থেকে যুক্ত আছেন। তথ্য প্রযুক্তিকে পরিচয় করানোর দিনগুলিকে মনে করে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা যখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কর্মকর্তাদের সফটওয়ার উন্নয়নে কথা বলতাম, তারা বলতো এটা কি জিনিস। এটা তো ধরা যায় না দেখা ও যায় না। তারা বলতো কম্পিউটার, প্রিন্টার তো আমরা ব্যবহার করছি।
 
বর্তমানে রহমান তিনটি প্রতিষ্ঠান ‘এডভান্সড ইআরপি, সিগমা সিস্টেম এবং প্রযুক্তিবান্ধব বিবাহ ব্যবস্থাপনা সমাধান শাদীবাজার ডটকম’ এর প্রধান হিসেবে পরিচালনা করছেন।
 
এডভান্স ইআরপি বড়মাপের প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার উন্নয়ন করে, সিগমা সিস্টেম ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগতাদের (এসএমই) জন্য ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার এবং ব্যবসায়িক ফলাফল পর্যালোচনা ব্যবস্থাপনার জন্য বিজনেস ইন্টিলিজেন্স স্যুইট(বিআইএস) উন্নয়ন করে। বিবাহ ব্যবস্থাপনায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছু প্রযুক্তি কেন্দ্রিক করার সমাধান হিসেবে শাদী বাজার ডটকম অল্প সময়ে পরিচিত হয়েছে।
 
নেতৃত্বকে ভালোবেসে মি রহমান কৈশোর থেকেই স্কাউট আন্দোলনের সাথে জড়িত। ব্যবসায়িক পর্যায়ে এসেও যুক্ত আছেন বিভিন্ন সংগঠনের সাথে। জুনিয়র চেম্বার আন্তর্জাতিক (জেসিআই) এর সভাপতি ছিলেন ২০১৩ সালে। রোটারি ক্লাবের একটি চ্যাপ্টারের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের ব্যবসয়িক সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এর স্থায়ী পরিষদের সদস্য এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি(ডিসিসিআই) এর গভর্নিং বডি মেম্বার হিসেবে আছেন মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল।
 
রহমান মনে করেন এই সব সংগঠনে যুক্ত থাকার ফলেই তিনি বেসিসের নির্বাহী পরিষদে আসার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। তিনি বেসিসের যুগ্ম মহাসচিব নির্বাচিত হওয়ার পর স্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অর্থ যোগান দেয়ায় পেছনে অবদান তিনি বলেন – ‘প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগে অনাগ্রহী অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগ্রহী করে তুলতে চেষ্টা করেছি। গত মেয়াদে ১৯টি বেসিস সদস্য প্রতিষ্ঠান ৪০ কোটি টাকার সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা পেয়েছে’।
 
শীঘ্রই আরও দুটি বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষায়িত ঋণ সুবিধা নিয়ে আসবে বলে জানান মি রহমান। এবারের বেসিস নির্বাহী পরিষদের নির্বাচনে বাংলা কম্পিউটিংয়ের পথিকৃৎ মোস্তাফা জব্বারের নেতৃত্বে ‘ডিজিটাল বিগেড’ প্যানেলের সদস্য হিসেবে নির্বাচন করছেন মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল।
 
নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনটি স্বপ্নের কথা বলেন সোহেল। তিনি বলেন, আমার প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে সরকারি ক্রয় নীতিমালাকে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান বান্ধব করার জন্য এডভোকেসি করা। যেকোন কাজের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে প্রথম বিবেচনায় নেয়ার জন্য কাজ করবে বেসিস। বিশেষ ক্ষেত্রে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সাহায্যের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য উল্লেখযোগ্য ভাগ বরাদ্দ রেখে কাজ নিতে হবে।
 
বাংলাদেশের আইসিটি ক্ষেত্রে একটি গবেষণা উন্নয়ন (আরএনডি) কেন্দ্র স্থাপনের স্বপ্ন দেখেন তিনি। মোস্তাফিজুর রহমানের মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্য বাজার প্রসারে অর্থনৈতিক পর্যায়ে অবদান রাখা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংগঠনের সদস্যদের ব্যবসায়িক প্রসারের জন্য থোক বরাদ্দ দিয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রি-ফাইনানন্সিং প্রকল্পের আওতায় বেসিসের পক্ষ থেকে ২০০-৩০০ কোটি টাকার একটি বরাদ্দ পেতে আমরা কাজ করছি। এটি সম্পন্ন হলে আমরা সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক সংখ্যার সুদ হারে ঋণ সুবিধা দিতে পারবো।
 
বাংলাদেশে স্থানীয় প্রযুক্তিতে ইআরপি সফটওয়্যার প্রস্তুত করে মোস্তাফিজুর রহমানের প্রতিষ্ঠান এডভান্সড ইআরপি ইতোমধ্যে মালয়শিয়া ও কুয়েতে কার্যক্রম শুরু করেছে। মালয়শিয়ার সরকারের একটি জয়েন্ট স্টক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় ব্যবহার হচ্ছে এডভান্সড ইআরপি সফটওয়্যার। এবছরের মধ্য ভারতে কার্যক্রম শুরু করবেন এবং আগামী লক্ষ্য হিসেবে মায়ানমার বলে জানান তিনি।
 
বাংলাদেশি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে বেশ আশাবাদী মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল। আরএমসি সেক্টরের পর সফটওয়ারের মাধ্যমেই আমরা বৈশ্বিক পরিচয় পেতে পারি। আফ্রিকা, কেন্দ্রীয় এশিয়া এবং মধ্য প্রাচ্যে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ভালো সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।

নিউজটি বিবার্তায় প্রকাশ হয়েছে। দেখতে যেতে হবে এই ঠিকানায়। 

Leave Your Comments