বাংলাদেশেই তৈরি হবে পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য টেলিকম লিথিয়াম ব্যাটারি

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Image টেকভয়েস২৪ রিপোর্ট
news-banner
  ছবি: সংগৃহীত
দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে এক সপ্তাহের মতো টেলিসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন ওই অঞ্চলের মুঠোফোন ব্যবহারকারীরা। এমন দুর্যোগপূর্ণ অবস্থাতে উদ্ধার কাজে ব্যবহার করতে হয়েছে স্যাটেলাইট। 

এমন দুর্যোগেও বাংলাদেশের টেলিকম খাতের বিটিএসগুলোতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যাকআপ নিশ্চিত করতে এবার দেশেই উৎপাদন শুরু হতে যাচ্ছে টেলিকম লিথিয়াম ব্যাটারি। যে ব্যাটারিটি চার্জ হবে সূর্যের আলোতে। পানিতেও থাকবে নিরাপদ।

এজন্য গাজীপুরের ওয়ালটন হাইটেক পার্কে ব্যাটারি তৈরি শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশের হাইটেক প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন ডিজিটেক। সেই লক্ষ্যে সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার গুলশানের হুয়াওয়ে বাংলাদেশ একাডেমিতে হুয়াওয়ের সবুজ জ্বালানী প্রযুক্তি সল্যুশন নিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ওয়ালটন।

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের উপস্থিতিতে লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদনে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে হুয়াওয়ে ও ওয়ালটন। হুয়াওয়ে বাংলাদেশের সিইও প্যান জুনফেং ও ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম রেজাউল আলম।

চুক্তির আওতায় ওয়ালটন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি নাগাদ কারখানা স্থাপন শেষ করে এপ্রিল মাস নাগাদ টেলিকম লিথিয়াম ব্যাটারি বাজারজাত শুরু করবে ওয়ালটন। প্রতিষ্ঠানটি বছরে ৮০ হাজার ব্যাটারি উৎপাদনে সক্ষম একটি অত্যাধুনিক ও সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় প্রোডাকশন লাইন তৈরি করার পাশাপাশি সারা দেশে এই ব্যাটারির বিক্রয় ও বিক্রয়-পরবর্তী সেবা পরিচালনা করবে। লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদনের জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা, ডিজাইনের নির্দেশনা, কাঁচামাল ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিবে হুয়াওয়ে।

এসময় ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মঞ্জুরুল আলম অভি, গ্রামীণফোনের টেকনোলজি ডিভিশনের টাওয়ার ইনফ্রার পরিচালক ও প্রধান মো. আব্দুর রায়হান, যুগ্ম ব্যবস্থাপনা পরিচালক, লিয়াকত আলী এবং চিফ বিজনেস অফিসার তৌহিদুর রহমান রাদ উপস্থিত ছিলেন।

রাদ জানান, বৈশ্বিক মানের ব্যাটারি উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করতে চান তারা। ব্যাটারিটিতে নবায়নযোগ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করায় বিদ্যুৎ খরচ কম পড়ার পাশাপাশি দেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ঘাটতি মেটাতেও সহায়তা করবে।

চুক্তি অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত ভিডিওতে দেখানো হয়, হুয়াওয়ের ক্লাউডলি প্রযুক্তি ব্যবহার করায় এই লিথিয়াম ব্যাটারিটি একটি নির্দিষ্ট লেভেল পর্যন্ত ওয়াটারপ্রুফ থাকে। একইসঙ্গে জিপিএস দিয়ে ব্যাটারি চুরির ঝুঁকিও রোধ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সবার আগে চীন থেকে বিনিয়োগ দেয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। একইসঙ্গে এ দেশ থেকে তরতাজা আম আমদানি পরিকল্পনার পাশাপাশি টেলিকম প্রযুক্তিতে বাংলাদেশকে বৈশ্বিক অবস্থানে নিয়ে যেতে এদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুগপৎ পথ চলার পরিকল্পনার কথাও ‍তুলে ধরেন তিনি।

ওয়েন বলেন, বর্তমানে সারাবিশ্বে নবায়নযোগ্য শক্তির একটি বিপ্লব চলছে। ক্রমশ জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে সোলার ফটোভোলটাইক ও বায়ুচালিত শক্তি মতো নবায়নযোগ্য শক্তির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। আগামীতে উন্নয়নের জন্য লিথিয়াম এনার্জি স্টোরেজ প্রযুক্তি প্রয়োজন অনস্বীকার্য। হুয়াওয়ে ও ওয়ালটনের মধ্যে আজকের চুক্তিটি এই প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমরা বিশ্বাস করি, উভয়পক্ষের এই সহযোগিতা বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান তৈরি ও রপ্তানি পরিসর বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের জনগণকে উপকৃত করবে।

ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মঞ্জুরুল আলম অভি বলেন, আমরা সবসময় বিশ্বাস করি যে, উদ্ভাবনই অগ্রগতির চাবিকাঠি। এটি আমাদের প্রতিটি পণ্য, সল্যুশন ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপের পিছনে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। আমাদের সাম্প্রতিক উদ্যোগ হলো একটি অত্যাধুনিক লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদন কারখানা স্থাপন। এটি বাংলাদেশের টেলিকম শিল্পে বর্তমানে ব্যবহৃত লেড অ্যাসিড ব্যাটারির উপর নির্ভরতা কমিয়ে দেবে, যার ফলে সামগ্রিকভাবে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস পাবে। এই প্রকল্পটি শুধুই একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগ নয়। সবুজ পৃথিবী রক্ষার যে অনুপ্রেরণা নিয়ে ওয়ালটন কাজ করে, এই চুক্তিটি সেই লক্ষ্যের দিকে আরেকটি পদক্ষেপ। হুয়াওয়ের বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তির সাহায্যে লিথিয়াম ব্যাটারি শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে আমরা একটি সবুজ দেশ গড়ায় ভূমিকা রাখতে পারবো। 

হুয়াওয়ে বাংলাদেশের সিইও প্যান জুনফেং বলেন, হুয়াওয়ের লিথিয়াম ব্যাটারি ১৭০টির বেশি দেশে ৩৪০টিরও বেশি অপারেটর ব্যবহার করছে। অর্থাৎ, বিশ্বের টেলিকম খাতে ব্যবহৃত শক্তির এক-তৃতীয়াংশের জন্য এই ব্যাটারি ব্যবহৃত হচ্ছে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে হুয়াওয়ের লিথিয়াম ব্যাটারির বাজারের শেয়ার ৩৫ শতাংশ। অপরদিকে, ওয়ালটন বাংলাদেশের সর্বাধুনিক বহুজাতিক ব্র্যান্ড, যা ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি উৎপাদনে বিশেষভাবে দক্ষ। বাংলাদেশে লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদনের জন্য ওয়ালটনের সাথে আমাদের একটি কৌশলগত চুক্তি হয়েছে। আমি আত্মবিশ্বাসী যে, আমাদের এই যৌথ উদ্যোগ টেলিকম খাতে আরও সমৃদ্ধি নিয়ে আসবে।

Leave Your Comments