একটা ভাল মানের বৃদ্ধাশ্রম করতে চান আবু নাছের

প্রকাশ: শুক্রবার, ১৬ মার্চ, ২০১৮
Image উজ্জ্বল এ গমেজ
news-banner
  ছবি: টেকভয়েস২৪
ছোটবেলা থেকেই নানাবাড়িতে থাকতেন মো. আবু নাছের। নানা-নানি, মামা-মামির আদর-যত্ন, স্নেহ-ভালোবাসায় বেড়ে ওঠেন তিনি। ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল স্থপতি হওয়ার। কিন্তু জীবনের নানা অলিগলি ঘুরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিজিক্সে গ্র্যাজুয়েশন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাংকিংয়ে এমবিএ করা মানুষটি কিন্তু হয়ে গেলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা। কিভাবে হলেন?

সম্প্রতি আইসিটি ডিভিশনে এই প্রতিবেদকের সাথে দীর্ঘ আড্ডায় বেরিয়ে আসে তাঁর জীবনের নানা ঘটনা।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার দক্ষিণ ডেমশার গোয়াজর পাড়ায় জন্ম মো. আবু নাছেরের। বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। বাবা ব্যবসায়ী। মা সরকারি চাকরিজীবী। চার ভাই-বোনের মধ্যে নাছের সবার বড়। মায়ের সরকারি চাকরির সুবাদে শৈশবে তাকে বিভিন্ন সময় স্কুল বদল করতে হতো। শেষে এ সমস্যার সমাধান হয় সাতকানিয়ায় নানার বাড়ি থেকে পড়ালেখার মাধ্যমে।

শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের বেশ কিছু অংশ কাটে তার সাতকানিয়ায়। প্রাইমারি থেকে কলেজ পর্যন্ত পড়ালেখা তার ওখানেই। মাঝে মাঝে মা এসে তাকে দেখে যেতেন। প্রাইমারি ও হাইস্কুলজীবনের মাঝামাঝি সময় অবদি মামী ছিলেন না। নানা-নানিই তাকে দেখভাল করতেন। এসব দেখে নিজের প্রয়োজনীয় কাজগুলো নিজেই করার তাগিদ অনুভব করেন।

নাছেরের ভাষায়, ‘নানার বাড়িতে নানিই আমার সব কাজ করতেন। যেমন, নিয়মিত আমার কাপড়-চোপড় ধোয়া, স্কুলের বইপত্র ঠিকঠাক রাখা, গোসল করানো, খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো, পড়তে সাহায্য করা, স্কুলে নিয়ে যাওয়া আবার ঠিকমতো এসেছি কিনা তা দেখা, অসুস্থ হলে সেবা-যত্ন সবই করতেন আমার নানি। এসব দেখে নিত্যদিনের কাজগুলো নিজে করার জন্য মনে এটা তাগিদ অনুভব করি। এরপর ক্লাস সিক্স থেকেই আমি আমার নিজের কাজগুলো প্রায়ই আয়ত্ব করে ফেলি। তখন থেকেই নিজের ভেতর একটা আলাদা আত্মবিশ্বাস জন্মাতে শুরু করে। যদিও আমার ছোট মামা ছোট থেকেই আমাকে গাইড করতো। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় মেঝ মামি আসেন। এরপর যেন তিনিই আমার মা হয়ে উঠলেন। ছেলের মতো আদর-যত্ন করতেন। তারপরও নিজেকে সবকিছুর সাথে ক্রমান্বয়ে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা ছিল। নিজেই নিজেকে গাইড করতাম। কখনোই স্বাধীনতার অপব্যবহার করার চেষ্টা করিনি’।

আলাপ প্রসঙ্গে জানা গেল, স্কুলজীবন থেকেই নাছের পড়াশুনায় প্রথম সারির ছাত্র ছিলেন। প্রাইমারি থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত ভালো ছাত্র হিসেবেই উপরের দিকে তার নাম থাকতো।

চট্টগ্রাম বোর্ড থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি ও এইচএসসিতে তিনি প্রথম বিভাগে পাস করেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিজিক্সে গ্র্যাজুয়েশন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন ব্যাংকিংয়ে।

সাইন্স ব্র্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসে ঢাবিতে এমবিএতে ভর্তি হলেন কেন? এমন প্রশ্নে জবাবে নাছের বলেন, ‘ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি এসব সাবজেক্ট মাস্টার্স লেভেলে অনেক কঠিন। হয়তো তাই এক ধরণের ভীতি ছিল! ভীতির চাইতেও বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল চাকুরির বাজারের বাস্তবতা। তাই পড়াশুনা-ভবিষ্যত-চাকুরি ইত্যাদি নানা বিষয় এবং সময়ের চাহিদার দিকে খেয়াল করে আমি ট্র্যাক চেঞ্জ করি। আর আজ থেকে ৫/৭ বছর আগে সময়ের চাহিদা ছিল ব্যাংকার হওয়া, বলা যায় ফ্যাশনেবল জব’।

ঢাবির ভর্তিযুদ্ধের বিষয়ে জানাতে চাইলে জানালেন, ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্ররাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ সংশ্লেষ ছিল। ওই দিনগুলোতে সব সময়ই তিনি ছাত্ররাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক শক্তি- বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন-পুলিশ- এই ত্রিমুখী শক্তির বিরুদ্ধে সবসময় ব্যস্ত থাকতে হতো। তাই, পড়ালেখা করার জন্য তেমন একটা সময় পেতেন না।

এ বিষয়ে নাছেরের ভাষ্য, ‘আমার ব্যাচের সবাই, যারা ভর্তি পরীক্ষা দেবে, তারা সবাই পড়ালেখায় ভীষণ ব্যস্ত থাকতো। আর আমি পরীক্ষা দেব, সময় খুব একটা বের করতে পারি না। তাই, নিজের জন্য যুতসই এক উপায় বের করলাম। শুরু করলাম রাজনীতির ফাঁকে ফাঁকে পড়ালেখা। আমার বন্ধু-বান্ধবরা দিন-রাত পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। বিভিন্ন নামিদামি কোচিংয়ে কোচিং করতো। আর আমি কোনো সাবজেক্টের নোট থেকে মোবাইলে ছবি তুলে রাখতাম আর বন্ধুদের সাথে আড্ডার ফাঁকে একটু একটু করে ছবির পড়াগুলো নজর বুলিয়ে নিতাম। এভাবে একটা দুটা করে শব্দ, বিষয় মাথায় নিতাম। আমার ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি ছিল এমন। এ টুকুই’।

ভর্তি পরীক্ষার অভিজ্ঞতার বিষয়ে নাছের বলেন, ‘ওইদিন একটা মজার ঘটনা ঘটে। পরীক্ষার পর তিন বন্ধুর সাথে রাস্তায় দেখা। ওদেরকে জিজ্ঞস করলাম, কিরে পরীক্ষা কেমন হয়েছে? ওদের উত্তর, ভাল হয়েছে। জানতে চাইলাম ওরা কত পাবে? কেউই ৬০ এর কম বলে না। আমার কেমন হলো জানতে চাইলে আমার উত্তর ছিল, পরীক্ষার হলে মনে হয়েছিল ভালই হইছে, কিন্তু তোদের কথা শুনে মনে হলো, ভাল হয়নি। ওরা বলল, কেন? আমি জীবনেও ৬০ পাবো না। আমার টেনেটুনে ৫০ বা ৫২, ৫৩ পাইতে পারি। একটু আশাহতও হলাম। কারণ, ওদের কথা শুনে মনে হয়েছিল, আমার চান্স হবে না। পরে যখন রেজাল্ট দিলো, আমি তো যথারীতি কোনো খোঁজ নিলাম না। কিন্তু সন্ধ্যায় জিয়া হলের এক ছোট ভাই আমাকে ফোন করে কনগ্র্যাচুলেট করল। জানতে চাইলাম, কেন? আপনার তো হয়ে গেছে। তাই নাকি। হ্যাঁ। তারপরে আমি ওকে বললাম এই তিনটা নম্বর দেখতো। তখন সেই ছোট ভাই জানালো আমার ওই তিন বন্ধুর কারোই রোল নাম্বার নেই। একটু ধাক্কা খেলাম। ওদের জন্য মনটা খারাপ হয়ে গেল’।

ভর্তি পরীক্ষায় ৫৮-এর অ্যানসার দিয়ে নাছের পেল ৫৪.৪ নম্বর। এবিষয়ে তার ভাষ্য, ‘আমি যত নম্বরের উত্তর দিয়েছি, তার প্রত্যাশিত রেজাল্ট ছিল।তার মানে আমার হিসেবটা খুব রিয়েলিস্টিক ছিল। জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপেই আমি ঠিক এভাবেই হিসেব করে চলতে চেষ্টা করি। বলতে পারেন, এটা আমার জীবনের বড় একটা মূল্যবোধ’।

রাজনীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাছের বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু না জন্মালে এ দেশে আমি স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠতে পারতাম না, বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জায়গায় উচ্চ-শিক্ষার সুযোগ পেতাম কিনা জানি না। তাই, বরাবরই আমার রাজনীতি ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনায় সমৃদ্ধ। এ জন্য অনেক হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। কিন্তু কখনোই আদর্শচ্যুত হইনি। চারদলীয় জোট সরকারের দমন-পীড়নের কারণে অবশ্য পার্টিতে মাঠে থাকার লোকজনও খুব বেশি ছিল, তা বলা যাবে না। আর, কেন জানি কেন্দ্র থেকে সিলেট-চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ আমাকে খুবই স্নেহ করতেন’।

তিনি বলেন, ‘এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়ররা যখন চলে গেছেন (অনেকে তখনও ছিলেন, কিন্তু পড়ালেখা শেষ, তাই চলে যাবার তগিদ ছিল) বলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় বর্ষ থেকেই একটি অংশের গুরুদায়িত্ব আমার ঘাড়ে এসে পড়ে। নির্ধারিত সময়ে কমিটি পাইনি। এক সময় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমিও ঢাকায় পাড়ি জমাই। শাবি’র রাজনীতি ছেড়ে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হই। পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে আমাকে স্থান দেয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠনের একজন কর্মী হিসেবে মূল্যায়িত হই’।

ঢাবিতে এমবিএ নিয়ে পড়ালেখা করেছেন। হতে চেয়েছিলেন স্থপতি, ট্র্যাক পরিবর্তন করে পড়লেন ব্যাংকিং। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগেও পড়াশুনা করেননি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জন-সংযোগ কর্মকর্তার মতো একটি পদে এলেন, যা সম্পূর্ণভাবেই আপনার ট্র্যাকের বাইরে। ম্যানেজ করেন কিভাবে? নাছেরের সরল প্রতিউত্তর, ‘এর পেছনে ছোট্ট একটা গল্প আছে’।

তিনি বলেন, ‘স্থপতি হতে না পারার কারণে মনে স্বপ্ন জাগে ক্যাডার সার্ভিসে যোগ দেবার। এমবিএ পাস করার পর কয়েকটি ব্যাংকে চাকুরিও হয়। প্রথমে জনতা ব্যাংক চাকুরি পেয়ে যাই। পরিবারের সবাই অনেক চাপ দিয়েছিল জনতা ব্যাংকে জয়েন করার জন্য। পরেরবার তাই বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকুরি পাওয়ার কথাটাই গোপন রাখি। তখন ব্যাংকে কাজ করার মতো নিজেকে উপযুক্ত বলে মনে হয়নি। তাই সব কিছু বাদ দিয়ে বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে শুরু করি’।

নিজের স্বপ্ন এবং স্বপ্ন পূরণের জন্য পরিশ্রমের মধ্যে একটা আশ্চর্য শান্তি থাকে যা ব্যাখ্যা করা যায় না, কিন্তু হৃদয় দিয়ে শুধু অনুভব করা যায় – এমনটাই জানালেন মো: আবু নাছের। ৩০তম বিসিএসে তিনি ক্যাডার পাননি। তবুও হাল ছাড়েননি। ৩১তম বিসিএসে সফল হলেন। ইনফরমেশন ক্যাডারে যোগ দিলেন বাংলাদেশ বেতারে। বেতার সেক্টরটি স্বতন্ত্র। এবিষয়ে পর্যাপ্ত আগ্রহ ও জ্ঞান না থাকলে কাজ করাটা আসলেই অনেক কঠিন। রেডিওর কাজটা কিছুটা স্পেশালাইজড। এ জন্যই সুইচ করতে চাচ্ছিলেন তিনি। মনে মনে এমন একটা জায়গা খুঁজছিলেন যেখানে নিজের মতো করে কাজ করতে পারবেন, নিজেকে প্রমাণ করার পর্যাপ্ত সুযোগ পাবেন। এরই মধ্যে ২০১৪ সালের এপ্রিলে জানতে পারেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক একজন জনসংযোগ কর্মকর্তা খুঁজছেন। তখন নাছের কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

তার মনে হয়েছিল কাজটা চ্যালেঞ্জিং এবং তার মতো তরুণদের সাথে এবং তরুণদের জন্য চ্যালেঞ্জিং কাজ করতে পারাটাও সৌভাগ্যের বিষয়। তখন তাকে অচিন্ত্যনীয় সহযোগিতা করেন প্রধানমন্ত্রীর উপ- প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন।

নির্ধারিত দিনে তিনি প্রতিমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গতানুগতিক সরকারি চাকুরিজীবী নয়, আমি এই পদের জন্য এমন এজনকে খুঁজছি, যিনি প্রথার বাইরে গিয়েও কাজ করার সাহস রাখবেন। কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরির বলিষ্ঠ কর্মী হবেন’।

তাঁর কথা শুনে নাছেরের কেবলই মনে হয়েছিল, এতো দিন ধরে এমনই জায়গাই খুঁজছিলেন তিনি। এরপর প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব আবদুল বারি তাকে কিছু দিকনির্দেশনা দেন।

প্রথম দিকে একটু কষ্ট হলেও আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর আন্তরিক গাইডলাইন এবং প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব আব্দুল বারির নির্দেশনা এবং সর্বোপরি সাংবাদিক ভাই-বোনদের অকৃত্রিম সহযোগিতায় তিনি এ রকম একটি গুরুদায়িত্ব পালনে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছেন বলে জানান নাছের।

সে দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নাছেরের ভাষ্য, ‘বারি স্যার দীর্ঘ এক ঘন্টা আমার ইন্টারভিউ নেন। কিন্তু কোনো ফলাফল পাইনি। কিছুদিন পরে স্যার আমাকে ফোন করে বলেন, ‘আগামীকাল মুজিবনগর দিবস’। আপনাকে তিন ঘন্টা সময় দেয়া হলো। এই বিষয়ে একটা বক্তব্য লিখে প্রতিমন্ত্রী মহোদয়কে ই- মেইলে করেন।’

তিনি বলেন, ‘এই বক্তব্যটাই ছিল আমার নিয়োগ পরীক্ষার মতো। ওই দিন রাত ১২ টায় প্রতিমন্ত্রী মহোদয় ই-মেইলের প্রতিউত্তরে ‘এক্সিলেন্ট’ লিখে পাঠান। এরপর ২০১৪ সালের ২৫ মে যোগ দিই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে’।

জীবনের প্রথমে আইসিটি ডিভিশনে এতো বড় একটা দায়িত্ব পালন করতে কেমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন? নাছের বলেন, ‘জুনের প্রথম সপ্তাহেই শুরু হয় ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৪’। শুরুতেই এতো বড় একটা ইভেন্ট আমার জন্য খুব চ্যালেঞ্জের ছিল। সেই সাথে নিজেকে প্রমাণ করার একটা বড় সুযোগও। যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। ক্রমান্বয়ে শিখেছি, শিখছি। প্রতিনিয়তই শেখার চেষ্টাও করছি’।

কাজ প্রসঙ্গে নাছের বলেন, ‘আমার কাজটা চ্যালেঞ্জিং। প্রতিদিন নতুন কিছু করার অভিজ্ঞতা হয়। অফিসের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। তবুও আমি ঠিক এই কাজটাই করতে চেয়েছি। দেশ ডিজিটাল হচ্ছে, দেশের মানুষ তথ্যপ্রযুক্তির সেবা পাচ্ছে। আমি এই এগিয়ে চলা ডিজিটাল বাংলাদেশেরই একটা অংশ। একদিন আমরাও বিশ্বের বুকে উন্নত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবো, যার ভিত্তিমূলে আমি একজন নগণ্য কর্মী। এর চাইতে আনন্দের আর কিইবা হতে পারে? ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হওয়া তো গর্বের বিষয়’।

প্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে নাছের বলেন, ‘শৈশব থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি ও আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে তা লালন করি মননে। ভালোবাসি আওয়ামী লীগকে। তাই ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে পথ চলা শুরু করি। সেই সুবাদে প্রিয় ব্যক্তিত্বের তালিকায় অনেকজনই রয়েছেন। প্রথমে বলব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। তার কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়সহ অনেকে আছেন, যাদের প্রতি আমার চিত্ত শ্রদ্ধাবনত। এই ব্যক্তিদের জীবনাদর্শ, নীতি, মূল্যবোধ, দর্শন সব সময় আমার রাজনীতি জীবনে অনুপ্রেরণার অনুকরণীয় আদর্শ ছিল এবং এখনও আছে। তাদের জীবনাদর্শ আমি সব সময়ই অনুসরণ করি। তাদের আদর্শকে মনে লালন ও ধারণ করি এবং সে অনুসারে নিজেকে সাজানোর চেষ্টা করি’।

স্বপ্ন বিষয়ে তিনি জানালেন, চাকুরির থেকে অবসর নেয়ার পরে একটা ভাল মানের বৃদ্ধাশ্রম করতে চান তিনি। কারণ হিসেবে নাছের বলেন, ভোগবাদী জগতে বেশিরভাগ মানুষই স্বার্থপর হয়ে গেছে। যে বাবা-মা জন্ম দিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কঠোর পরিশ্রম করে সন্তানদেরকে পড়ালেখা শিখিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখায়, ভাল চাকুরি পেয়ে পরিবার সন্তান নিয়ে সুখে জীবনযাপন করে সে-ই ভুলে যায় বাবা-মাকে। বাবা-মাকে টাকা দেয় না, পরনের কাপড়চোপড় দেয় না, অসুখে জর্জরিত হয়ে না খেয়ে জীবন কাটায় সে দিকে ভ্রুক্ষেপ করে না। এসব দুঃখী বাবা-মা’দের শেষ জীবনের ঠিকানার জন্যই এই মহতী ভাবনা তার। রক্তের বন্ধন বাদে একজন মানুষ হিসেবে নিজের অন্তরের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই এই কাজ করবেন বলে জানালেন এই দরদী মানুষটি। তার এই স্বপ্ন পূরণর জন্য বিবার্তার সকল পাঠকদের দোয়া চেয়েছেন তিনি।

নাছের তার বর্তমান অবস্থানের জন্য সবচেয়ে প্রিয় অনুষঙ্গ মা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন, আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব আব্দুল বারি, প্রিয়তমা স্ত্রী আলপনা পারভীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রুমমেট বদিউজ্জামান সোহাগ এবং অগণিত সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

নিউজটি বিবার্তায় প্রকাশ হয়েছে। মূল নিউজটি দেখতে ক্লিক করুন এ লিংকে

Leave Your Comments