চারকোলপ্রেমী নাজমুল ইসলামের ওঠে আসার গল্প

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৭ মে, ২০১৮
Image উজ্জ্বল এ গমেজ
news-banner
  ছবি: সংগৃহীত
শৈশব থেকেই একটু ব্যতিক্রম কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। নিজে থেকে কিছু করার মাঝে পেতেন সীমাহীন আনন্দ। আর তাই স্কুলে পড়ার সময় ছোটখাটো ব্যবসা করে নিজের প্রথম আয় দিয়ে মায়ের কানে পরিয়ে দিয়েছিলেন সোনার দুল। ব্যবসার পোকাটা তার মাথায় ঢুকে যায় তখন থেকেই।

সময়ের পালা বদলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি নিজের আয়ের টাকা দিয়ে শূন্য থেকে শুরু করেন ব্যবসা। সেই ব্যবসা আজ একটা গ্রুপ অব কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে ৬শ’র বেশি মানুষের।

এতক্ষণ যার কথা বলছিলাম তিনি হলেন এসকেআরপি গ্রুপ এবং তাজী অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম। তিনি দেশে প্রথম চারকোল ব্যবসার উদ্যোক্তা। দেশে পাটকাঠি থেকে চারকোল তৈরির ব্যবসায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।

সম্প্রতি কথা হয় স্বপ্নবাজ উদ্যোক্তা মোহাম্মদ নাজমুল ইসলামের সাথে। কথায় কথায় জানালেন উদ্যোক্তা জীবনের সফলতার নেপথ্যের কাহিনী।

নারকেল ও সুপারির জায়গা লক্ষ্মীপুর জেলা। নিজেদের গাছে প্রচুর নারকেল ও সুপারি হতো। সেগুলো তিনি কেনা-বেচা হতে দেখতেন। একটা সময় নিজেই উদ্যোগী হয়ে আলাদাভাবে নারিকেল সুপারি কেনা-বেচার কাজ শুরু করেন।

শুরুর দিকে ঈদের সেলামির বা স্কুলে টিফিনের জন্য দেয়া টাকা ছিলো তার ব্যবসার পুঁজি। গরমকালে ৫-৬ টাকা জোড়া নারকেল কিনে রাখতেন সেটা শীতকালে ১২-১৮ টাকা বিক্রি করতেন। এভাবে ৩০০ থেকে ৫০০ জোড়া নারকেল কিনে রাখতেন আর মৌসুম মতো ব্যাপারিদের কাছে বিক্রি করতেন। এভাবে টাকা জমাতেন। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় সব জমানো টাকা দিয়ে মায়ের জন্য সোনার কানের দুল বানিয়ে দিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকায় চলে আসেন তিনি।

ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। মানুষ হিসেবে নাজমুল বন্ধুত্বপরায়ন। সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষটি বন্ধুত্ব করতে এবং বন্ধুদের সাথে জমিয়ে আড্ডা দিতে খুব পছন্দ করেন।

তার ভাষায়- একদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ এক বড় ভাই এসে বলেন, তোমরা কি রিসার্চ ফার্মে কাজ করবা? কোনো চিন্তা না করেই বললাম, হ্যাঁ, করবো। কারণ আমি রিসার্চ ধরনের কাজ খুব পছন্দ করি। থাকতাম মেঝো ভাইয়ের বাসায়। চলে আসি ঢাবির সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে।

ওই রিসার্চ ফার্মে তখন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সাক্ষাৎকার নেয়ার সুযোগ ছিল। একজন উদ্যোক্তা কীভাবে উদ্যোগটা শুরু করেছেন, কী সমস্যা ছিল এসব বিষয়ে তাদের প্রশ্ন করে এবং ওই উত্তরগুলোকে নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে রিসার্চ ফার্মে জমা দিতে হতো। এভাবে বিভিন্ন ছোট ছোট গার্মেন্টস কোম্পানি, কেবল তৈরির কোম্পানি, জুতার কারখানা, চামড়া বা চামড়া থেকে পণ্য তৈরির কারখানার মালিকদের সাক্ষাতকার নিতে হতো। নাজমুলের সাথে কয়েজন বন্ধুও এ কাজ করতেন। প্রতিটি সাক্ষাতকারের জন্য সবাইকে সম্মানী দেয়া হতো।

বিভিন্ন কোম্পানির এমডি, চেয়ারম্যান এবং ডিরেক্টরদে সাথে কথা বলতে বলতে নাজমুল এতটুকু বুঝে যান যে, কোনো কিছু শুরু করাটাই হলো মূল বিষয়। যদি কোনো কিছুর উদ্যোগ নেয়া যায় এবং সে বিষয়ে লেগে থাকা যায়, একদিন না একদিন সফলতা আসবেই। আর ব্যবসা করতে গেলে সমস্যা আসবেই। কিন্তু সেই সমস্যাটাকে যদি সম্ভাবনার দ্বার হিসেবে বিবেচনা করা যায়, তাহলে সেটা আর সমস্যা থাকে না। সময়ের সাথে সাথে সব সমস্যারও সমাধান হয়। ব্যাবসাও ভালো হয়। শুধু দরকার সীমাহীন ধৈর্য আর সুকৌশল ও পরিকল্পিতভাবে ব্যবসাকে পরিচালনা করা।

উদ্যোক্তাদের কথাগুলো নাজমুলকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। তখন তিনি পড়েন প্রথম বর্ষে। চিন্তা করেন আমিও কিছু একটা করবো। কিন্তু কী করা যায়? মাথায় আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটা খাতা বের করে সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, পাবলিক লাইব্রেরি এবং ক্যাম্পাসের রিডিং রুমে সেল করলে কেমন হয়? নিশ্চয় মন্দ হবে না। যেই ভাবা সেই কাজ। পরিকল্পনা অনুসারে দুই বন্ধু মিলে একটা খাতা বের করেন। নাম দেন ক্রিয়েটিভ। এক বন্ধুকে অ্যাকাউন্টটেন্ট বানিয়ে নিয়মিত খাতা বানাতে থাকেন। আর বিক্রি করেন। পুরো ক্যাম্পাসে খাতাটা বেশ হিট হয়। দিন দিন বিক্রি বাড়ার সাথে সাথে ব্যবসাও বড় হতে থাকে। অল্পদিনের মধ্যে খাতার ব্যবসাটা বেশ জমে ওঠে। এরই মধ্যে একটা টিউশনি শুরু করেন নাজমুল। অন্যদিকে রিসার্চ কার্যক্রম তো চলছিলই। এভাবে টাকা জমতে থাকে। চোখের পলকে শেষ হয় যায় তার তৃতীয় বর্ষ।

ছোট পরিসরে ব্যবসা করার পর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় নাজমুলের। সময়টা ছিল ২০০৩ সাল। চতুর্থ বর্ষে এসে চিন্তা করেন বড় পরিসরে ব্যবসা করার। এবার ট্রেড বিজনেস করার পরিকল্পনা করেন আত্মবিশ্বাসী এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। তখন ‘এসকেআরপি ট্রেড সিন্ডেকেড’ নাম দিয়ে একটা ট্রেড বিজনেস শুরু করেন। শুরুতে স্থানীয়ভাবে অল্প কিছু সিএফএল বাল্ব কিনে বিক্রি করেন। কিছু দিন পরিবেশক হিসেবে ঢাকার আমদানিকারকদের কাছ থেকে বাল্ব নিয়ে তিনি বিভিন্ন জেলায় বিতরণ করতেন। পরে ইন্ডিয়া থেকে বাটন ব্ল্যাংকস আনেন। এতে মাস শেষে দেখা যেতো ১০ হাজার, ২০ হাজার কখনো ২৫ হাজার টাকা লাভ থাকতো।

২০০৫ সালে জাপানি হিটাসির সঙ্গে বাংলাদেশে হিটাসি লাইটিং পণ্য এককভাবে বাজারজাত করার জন্য চুক্তি বদ্ধ হন। ২০০৭ সালে ‘এনটি ব্লারে’ নামে নিজস্ব ব্রান্ডের পূর্ণ বাজারজাত শুরু করেন। ওই বছরে বিশ্ববিখ্যাত কেন্ট ওয়াটার পিউরিফায়ার অ্যান্ড হোম অ্যাপ্লায়েন্স বাজারজাত করার জন্য কেন্টের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। এভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল তার ব্যবসা।

২০১০ সালে ব্যবসার পরিধি বাড়ায় পণ্য কেনার জন্য তাকে ঘন ঘন বিদেশ যেতে হতো। সে সুবাদে বিভিন্ন দেশ-বিদেশে ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের সাথে তার বন্ধুত্ব তৈরি হয়। ২০০৯ সালের দিকে তার চায়নার ব্যবসায়িক বন্ধু মি. ওয়াংয়ের চায়না অফিস ভিজিট করলে সেখানে তিনি ফায়ার ওয়ার্কস বিজনেসের সম্পর্কে জানতে পারেন। ওই বন্ধু ফায়ার ওয়ার্কস বা আতশবাজি বানাতেন আর ইউরোপের মার্কেটে বিক্রি করতেন।

নাজমুল তার এই বিজনেস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে কৌতূহল মেটানোর জন্য বন্ধু তাকে নিয়ে যান তার লিউয়ান প্রদেশের গ্রামের বাড়িতে আতশবাজি বানানোর কারখানায়। গিয়ে দেখেন পাহাড়ের নিচে ছোট ছোট ঘরের মধ্যে বানানো হয় ওই আতশবাজি। কী উপাদান দিয়ে বানানো হয় এই আঁতশবাজি? জাবাবে বন্ধু জানান, চারকোল দিয়ে।

চারকোল কী জিনিস? বলেন, আমরা জুটস্টিক (পাটকাঠি) থেকে অ্যাকটিভেটেড কার্বন বা চারকোল বানাই। পাইরোলাইসিস পদ্ধতিতে পাটকাঠি পুড়িয়ে বেশি ঘনত্বের কয়লা তৈরি করা হয়, যেটির শোষণ ও রাসায়নিক সক্ষমতা অনেক বেশি। এ ধরনের কয়লাকে বাণিজ্যিকভাবে অ্যাকটিভেটেড কার্বন বা চারকোল বলা হয়। প্রতি তিন কেজি পাটকাঠি থেকে এক কেজি কার্বন তথা চারকোল পাওয়া যায়। আর এই চারকোল প্রিন্টার কার্টেজ, ওয়াটার পিউরি ফায়ারের কার্টেজসহ ৫৪টি আইটেমের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

নাজমুল বলেন, বন্ধুর কথা শুনে আমার তো মাথা ঘুরে যায়। বলে কি! আমরা তো এসব পাটকাঠি ফেলে দেই। তখন বন্ধুকে বলি আমি তোর গ্রামের বাড়ি যাবো। আমার মধ্যে তখন শুধু কৌতূহল কাজ করছিল। এসব কীভাবে বানায়। তখন গিয়ে দেখি পাটকাঠি থেকে এই চারকোল বানায়। আর প্রসেসটা হলো এই। সব দেখে প্রথমে আমার কাছে মনে হয়েছিল প্রসেসটা খুব সহজ। আসলে কিন্তু ব্যাপারটা এত সহজ ছিল না। তখন ও আমাকে বুঝিয়ে বলল যে, আমরা এটা এভাবে করি। তখন বললাম, আমিও এটা করতে চাই। ও বলল, এটা তুই কীভাবে করবি? তোর তো কোনো প্রযুক্তি নাই। আমি বললাম, আমার কাছে ‘র মেটেরিয়ালস’ (কাঁচামাল) আছে। তুই শুধু আমাকে একটু হেল্প করবি। বাকিটা আল্লাহ ভরসা। এটার ডিমান্ড কেমন? বন্ধু বলল, সারাবিশ্বে এটার প্রচুর ডিমান্ড। তুই যা বানাবি আমি তাই নিবো। তখন বললাম, প্রযুক্তি তোর, বিক্রি তোর, আমি শুধু বানাবো। তোর সাথে আমার এই চুক্তি।

কথা অনুসারে ব্যবসার পরিকল্পনা নিয়ে ওই বন্ধু বাংলাদেশে আসেন। প্রথমে কিশোরগঞ্জ পরিদর্শনে যান নাজমুল। উদ্দেশ্য কারখানা করা। সেখানে পাটকাঠি দেখে তো মি. ওয়াংয়ের মাথা ঘুরে যায়। পাটকাঠিগুলো দেখতে যেমন ছিল সুন্দর, তেমনি ছিল কোয়ালিটিফুল। ওখানে চারকোলের কারখানা করার কথা জানালে স্থানীয় সবাই বেশ আগ্রহ দেখান। এরপর যান ফরিদপুরে। সেখানেও পাট আর পাট। আর পাটকাঠির দামও কিশোরগঞ্জের থেকে অর্ধেক ছিল। কেননা ওই সময়ে সেখানকার মানুষরা পাটকাঠি তেমন কোনো কাজে ব্যবহার করতো না। শুধু জ্বালানি হিসেবে ও ঘরের বেড়া বানানো এবং কেউ কেউ পানের বরজে ব্যবহার করতো। যাতে পানগাছ বেয়ে বেয়ে ওপরে উঠতে পারে।

ওই বন্ধুর পরামর্শে নাজমুল চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশি পাটকাঠি থেকে চারকোল উৎপাদনে অর্থ বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কারখানা স্থাপন, পরিচালনা এবং চারকোল উৎপাদনের কোনো কিছুই জানতেন না। তখন ওই বন্ধু চারকোল উৎপাদনের জন্য চায়না থেকে চার জন দক্ষ কর্মী নিয়ে আসেন। পরে কারখানা করার জন্য জমি খোঁজা শুরু করেন। সারা ফরিদপুরে জমি না পেয়ে যান ঝিনাইদহে। সেখানে গিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজির পর একটা জায়গা পান। ২০১১ সালে ঝিনাইদহের সদর উপজেলার অচিন্তপুর গ্রামে নানান প্রতিকূল পরিবেশ পরিস্থিতির পর প্রশাসনের সহযোগিতায় সেখানে কারখানা স্থাপন করেন নাজমুল। মায়ের নামের সাথে নাম মিলিয়ে নাম দেন তাজী অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

শুরু হয় চারকোল উৎপাদনের কাজ। শুরুতে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তাকে। দেশীয় কর্মীদের অদক্ষতা, প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাবে উৎপাদনে নানান ভুলভ্রান্তি হতে থাকে। কর্মীরা উৎপাদন কাজ করতে থাকেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় গুণগতমানসম্পন্ন চারকোল আসছিল না। এভাবে কেটে যায় এক থেকে দুই বছর।

হাজারো বাধার মুখেও হতাশ হয়ে থেমে থাকেননি অধ্যবসায়ী ও আত্মপ্রত্যয়ী এই উদ্যোক্তা। দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে বার বার হোচট খেয়েও দ্বিগুন মনোবল নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি। অবশেষে তৃতীয় বছরে ব্যবসায় আলোর মুখ দেখেন তিনি। ওই বছরে ২৪০ টন মাল রফিতানি করেন। চায়নাদের ভাষায় এটাকে বলা হয় ব্লাক ডায়মন্ড। পরে ধারাবাহিকভাবে ৪৫০, ৫০০, ৭০০ এবং ১১০০ টন পর্যন্ত পণ্য বছরে রফতানি করেন। এখন প্রতি বছরে ১২৫০-১৩০০ টন রফতানি করা হয়ে থাকে। শুরুতে টন প্রতি পণ্যে ১৭১৮ ডলার দাম পেতেন। এখন টন প্রতি পণ্যে দাম পান মাত্র ৭৫০-৮০০ ডলার।

পাটকাঠির বাণিজ্যিক সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে বর্তমানে দেশে অন্তত ৩৩টি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। নাজমুল তাজী অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডসহ গাজীপুরে ১টা, মুঞ্জিগঞ্জে ১টা, জিনাইদহে ২টা, ঝালকাঠিতে ১টিসহ মোট ৫টি কারখানা গড়ে তোলেন। এখন চারকোল রপ্তানির মাধ্যমে বছরে কোটি টাকা আয় করছেন।

নাজমুল বলেন, আমরা ইলেক্ট্রিক অ্যান্ড ইলেক্টনিক্স আরও কয়েকটি ব্যবসার সঙ্গে পাটকাঠির কয়লা বা চারকোল তৈরির কাজটিও করে থাকি। এ জন্য ঝিনাইদহে ৪৫৬ শতাংশ জমির ওপর একটি কারখানা করেছি। সেখানে পাটকাঠি প্রসেস করে চারকোল তৈরি করা হয়। পাটকাঠির কয়লা থেকে তৈরি চারকোল মুঠোফোনের ব্যাটারি, বুলেটের বারুদ, প্রসাধনী, প্রিন্টারের কালি তৈরি, পানি শোধনের ফিল্টার, কৃষিজমির উর্বরতাশক্তি বাড়ানোসহ ৫২টির বেশি কাজে ব্যবহৃত হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে প্রতি টন চারকোলের দাম ৭৫০ ডলার, যা বাংলাদেশের প্রায় ৬৪ হাজার ৫০০ টাকার সমান (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ধরে)।

বাংলাদেশের পাটের মতো পাটকাঠির মানও বেশ ভালো। ফলে তা থেকে উৎপাদিত চারকোল আন্তর্জাতিক বাজারে ভালো দামে বিক্রি করা যায়। অবশ্য শুরুর দিকে প্রতি টন ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ ডলারে বিক্রি হলেও এখন প্রতিযোগিতা বাড়ায় দাম পড়ে গেছে। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান আসার কারণে নিজের একচেটিয়া বাজার খর্ব হলেও কাঁচামাল প্রাপ্তি ও পণ্য রপ্তানিতে সুবিধা হয়েছে বলে মনে করেন নাজমুল।

কানাডাভিত্তিক আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান অ্যালাইড মার্কেট রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী চলতি ২০২২ সালে বিশ্ববাজারে চারকোলের চাহিদা দাঁড়াতে পারে ২৭ লাখ ৭৬ হাজার টন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৫০০ কোটি ডলার।

আত্মপ্রত্যয়ী উদ্যোক্তা বলেন, দেশে একে একে বহু পাটকল বন্ধ হওয়ায় এবং প্লাস্টিক পণ্যের দাপটে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার কমে যাওয়ায় মাঝে পাট উৎপাদনে ভাটা পড়েছিল। এখন পাটপণ্যে কিছুটা হলেও বৈচিত্র্য আসায় এবং পাটকাঠির বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় দেশে আবারও পাটের উৎপাদন বাড়ছে। দেশের সোনালী আঁশ পাটের হারানো জৌলুশ ফিরে এসেছে।

দেশে পাটকাঠি থেকে চারকোল তৈরির ব্যবসায়ে নেতৃত্বের পর্যায়ে থাকায় নাজমুল সদ্য বিদায়ী বছরে (২০২১ সাল) প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার ২০২১’ লাভ করেন।

ব্যক্তি হিসেবে নাজমুল বন্ধুবাৎসল। বন্ধুত্ব করতে ও বন্ধুদের সাথে গল্প করতে, আড্ডা দিতে ভীষণ পছন্দ করেন। তবে সেগুলো শুধু সস্তা বিনোদনের জন্য নয়। সে আড্ডা অবশ্য ভালো কোন ইস্যুতে এবং গঠনমূলক কিছু নিয়ে হতে হবে। সব মিলে প্রায় ১৮টি সংগঠন, ফাউন্ডেশন, ক্লাবের বিভিন্ন সমাজসেবা ও উন্নয়নমূলক কাজের সাথে যুক্ত আছেন। এগুলোতে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে ভালোবাসেন। মানব কল্যাণমূলক কাজে পান হৃদয়ে প্রশান্তি।

নিজের প্রতিষ্ঠান নিয়ে অনেক দূর যেতে চান স্বপ্নাবাজ এই উদ্যোক্তা। এখন তার একটাই নেশা, সেটি হলে দেশের অর্থনীতিতে যত বেশি সম্ভব তত বেশি অবদান রাখার। ব্যতিক্রমী কিছু তৈরি করে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে। আর বেশি বেশি করে কর্মসংস্থান তৈরি করা। দেশের বেকারত্বকে কমিয়ে আনতে যারা বিভিন্ন পরিকল্পনা করছে, তাদের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে ৬শ’ কর্মী কাজ করছে। এ সংখ্যাটাকে তিনি নিয়ে যেতে চান ৬ হাজারে, এমন কি সম্ভব হলে ৬ লাখে।

Leave Your Comments