জ্বালানী খাতের অপরাধ ধরতে প্রকৌশলীদের সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে: মুনীর চৌধুরী

প্রকাশ: বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Image নিজস্ব প্রতিবেদক
news-banner
  ছবি: সংগৃহীত
জ্বালানী খাতের দুর্নীতি ধরতে প্রকৌশলীদের অফিস সজ্জা বা ফার্নিচারে মনোনিবেশ বা ব্যয় বেশি না করে সংস্থাটির প্রকৌশলীদের বিশেষায়িত সফটওয়্যার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী। 

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর প্রশিক্ষণ একাডেমীতে প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীদের এক অধিবেশনে অতিথি বক্তা হিসেবে কোম্পানিগুলোকে বাঁচাতে একইসেঙ্গ আমলাতান্ত্রিক অনৈতিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধেও জোরোলা বক্তব্য দেন তিনি। 

বক্তব্যে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিদ্যুৎ সেক্টরে দুর্নীতি, অপচয় ও বৈষম্য হ্রাসে কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপের প্রস্তাব দিয়েছেন মুনীর চৌধুরী।

প্রকৌশলীদের উদ্দেশে অধিবেশনে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ কোম্পানীগুলোর বোর্ড সভার সম্মানীর পরিমাণ অনেক বেশী, যা অর্থ অপচয়ের নামান্তর। এতে বড় কর্তারা লাভবান হচ্ছে, বোর্ড সভার সম্মানী ও আপ্যায়ন ব্যয় অবশ্যই কমাতে হবে। এছাড়া কর্মকর্তাদের অফিস কক্ষ সাজানোর নামে বিপুল পরিমান অর্থ অপব্যয় করা হচ্ছে, যা কোম্পানীর লাভের উপর প্রভাব ফেলছে। এসব অর্থ সাশ্রয় করে হাসপাতাল ও কল্যাণমূলক কাজে লাগানো উচিৎ।

এসময় অনুষ্ঠানে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের (ডিপিডিসি) সুপারেন্টেন্ড আব্দুর রাজ্জাক, নির্বাহী প্রকৌশলী বদরুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অংশ নেন সংস্থাটির ৩০ জন মাঠ পর্যায়ের প্রকৌশলী।

অনুষ্ঠানে কোম্পানীর যন্ত্রাংশ আমদানীর ক্ষেত্রে প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশনে কেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যাবেন প্রশ্ন রেখে মুনীর চৌধুরী বলেছেন, প্রি-শিপমেন্টের সফরে কোম্পানীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও প্রকৌশলী ছাড়া মন্ত্রণালয়ের নন টেকনিক্যাল কাউকে নেয়া যাবে না। একান্ত অপরিহার্য সরকারি দায়িত্ব ব্যতীত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অধীনস্থ কোম্পানীর যানবাহন ব্যবহার করা অত্যন্ত অনৈতিক। বেপরোয়া গাড়ী ব্যবহারের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারে না কোম্পানীর কর্মকর্তারা। 

এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধেও ডিপিডিসিতে কর্মকালীন অনেক শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন বলে জানান মুনীর চৌধুরী। এমনকি তদানীন্তন ডিপিডিসির চেয়ারম্যান ড. আহমেদ কাউকাউসের (পরবর্তী বিদ্যুৎ সচিব ও মুখ্য সচিব) যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনী প্রি-শিপমেন্ট সফরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন।

মুনীর চৌধুরী আরও বলেন, মন্ত্রণালয়ের অযাচিত ও অন্যায় হস্তক্ষেপ থেকে ডিপিডিসিসহ প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুক্ত করতে হবে। আমলাদের কলোনীয়াল আচরণ থেকে প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে হবে। এভাবেই  রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় সংস্কার আনতে হবে।  প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব আইন ও স্বকীয়তা দিয়ে চলতে দিতে হবে, অনিয়ম বিচ্যুতি হলে তখন মন্ত্রণালয় হস্তক্ষেপ করবে। বিদ্যুৎ চুরি ও অপচয় রোধে সৎ ও দক্ষ প্রকৌশলীদের নিয়ে নিয়মিত টাস্কফোর্স অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, মিটারে বিভিন্ন বাণিজ্যিক রিলে বসিয়ে ও সেন্সর ব্যবহার করে বিদ্যুৎ চুরি করা হচ্ছে। এমনকি, কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ে বড় অংকের ঘুষ দিয়ে দেশের পাইপলাইনের ডায়ামিটার বেআইনীভাবে বাড়িয়ে, বিদ্যুৎ চুরি করা হচ্ছে। এসব অপরাধ ধরতে প্রকৌশলীদের অবশ্যই আধুনিক প্রযুক্তিসহ অত্যাধুনিক সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে চুরি, দুর্নীতি ও অপচয় বন্ধে সবাইকে সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। দুর্নীতি ও সীমা লঙ্ঘনের পরিণতি কী হিতে পারে, তার নিদর্শন মহান আল্লাহ তা’আলা দেখিয়ে দিয়েছেন।

Leave Your Comments