অ্যাপলের এয়ারপডস এখন শ্রবণযন্ত্র!

প্রকাশ: শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Image টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
news-banner
  ছবি: সংগৃহীত

একবার ভাবুনতো আপনার কানে গুঁজে রাখা ছোট ইয়ারফোন দুটি হয়ে উঠলো শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র। ভাবছেন পরীক্ষা না করিয়ে কেন ব্যবহার করবেন শ্রবণযন্ত্র। ধরে নিন সেই সমাধানও আছে ইয়ারফোন দুটিতেই। ইয়ারফোনই বলে দিচ্ছে শ্রবণ যন্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজন আছে কিনা। থাকলে প্রয়োজন অনুযায়ী নিজেই কাজ করছে শ্রবণযন্ত্রের মতো।  

কল্পনার এই সংকোচন-প্রসারণ বাদ দিয়ে চলে আসুন বাস্তবে। হালকা থেকে মাঝারি শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা দূর করতে এবার সহায়তা করবে ইয়ারফোন বা হেডফোন। বলা হচ্ছে অ্যাপলের এয়ারপডস প্রো ২ ইয়ারবাডের কথা। আইওএস ১৮ ভিত্তিক ‘হিয়ারিং এইড ফিচার’ নামক সফটওয়্যারের কল্যাণে এখন এয়ারপডস প্রো ২ হয়ে উঠবে হিয়ারিং এইড ডিভাইস বা শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র।

গত সপ্তাহে (৯ সেপ্টেম্বর) অ্যাপল তাঁদের ‘গ্লোটাইম’ ইভেন্টে উন্মোচন করে ফ্ল্যাগশিপ প্রোডাক্ট আইফোন ১৬ সিরিজ। এর সাথে পর্দা উঠে অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ১০ এবং এয়ারপডস ৪ ইয়ারবাডেরও। এছাড়া অনেকগুলো আকর্ষণীয় এআই ফিচারের পাশাপাশি আইওএস ১৮ সম্পর্কেও জানানো হয় বিভিন্ন তথ্য- যার মধ্যে ছিলো ‘হিয়ারিং এইড ফিচার’ নামক এই সফটওয়্যারটির কথাও।

তবে অ্যাপল এটাও জানিয়েছিলো যে, শ্রবণ সহায়ক এই সফটওয়্যারটি আমেরিকার ফুড এন্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএডি) এর কাছে পরীক্ষাধীন আছে। এফএডি-এর ছাড়পত্র পেলেই কেবলমাত্র সফটওয়্যারটিকে আইওএস ১৮ এর মাধ্যমে অ্যাক্সেস করা যাবে।

গত ১২ সেপ্টেম্বর ফুড এন্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএডি) এর ছাড়পত্র মিলেছে। তাঁরা জানিয়েছে, এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে অ্যাপল এয়ারপডসকে সাধারণ যেকোনো ‘ওভার দ্য কাউন্টার’ হিয়ারিং এইড ডিভাইস বা শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন আমেরিকার জনগণ।

এদিকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর (সোমবার) অ্যাপল রিলিজ করেছে আইওএস ১৮ এর পূর্ণাঙ্গ সংস্করণটি। ফলে এয়ারপডস প্রো ২ ব্যবহারকারীরা এখন চাইলেই আইওএস ১৮ ইন্সটল করার মাধ্যমে অ্যাক্সেস করতে পারবেন এই হিয়ারিং এইড ফিচার সফটওয়্যারটি।

কিভাবে কাজ করবে এই হিয়ারিং এইড ফিচার?
এই ফিচারটি কিছু শব্দ বা সাউন্ডকে শক্তিশালী করে তুলবে বা অ্যামপ্লিফাই করবে, যেমন কারও ভয়েজ বা কণ্ঠস্বর। একইসাথে ডিভাইসে থাকা অ্যাক্টিভ নয়েজ ক্যান্সেলেশন ব্যবহার করে আশেপাশের অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ বা নয়েজগুলোকে দুর্বল করে তুলবে। ফলে মানুষের কণ্ঠস্বর আরও পরিষ্কার শোনা যাবে এই হিয়ারিং এইড সফটওয়্যারের মাধ্যমে।

ব্যবহারকারীর হিয়ারিং এইড প্রয়োজন কিনা কিভাবে নির্ধারণ করা হবে?
এয়ারপডস প্রো ২-তে সফটওয়্যারটি আছে বলেই আপনাকে ডিভাইসটি শ্রবণযন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে হবে বিষয়টি আসলে এমন নয়। অ্যাপল হেলথ অ্যাপের মাধ্যমে আপনি প্রথম পরীক্ষা করে দেখবেন আপনার শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা আছে কিনা। পরীক্ষার ফলাফলের উপরই নির্ভর করবে ডিভাইসে হিয়ারিং এইড মোড স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাক্টিভেট হবে কিনা।

পরীক্ষায় যদি দেখা যায় ব্যবহারকারীর শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা হালকা থেকে মাঝারি পর্যায়ের (মাইল্ড টু মডারেট লেভেলের) সেক্ষেত্রে এয়ারপডস স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী সাউন্ড লেভেল অ্যাডজাস্ট করে নিবে। তবে শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা তীব্র (হাই বা সিভিয়ার লেভেল) হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়ার বার্তা দেয়া হবে ব্যবহারকারীকে।

এয়ারপডসের কোন মডেলে ব্যবহার করা যাবে এই হিয়ারিং এইড সফটওয়্যার?
‘হিয়ারিং এইড ফিচার’ সফটওয়্যারটি এয়ারপডসের স্ট্যান্ডার্ড মডেলে অ্যাক্সেস করা যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন হবে অ্যাপল এয়ারপডসের প্রিমিয়াম মডেল এয়ারপডস প্রো ২। কারণ এই ফিচারটি কাজ করার জন্য প্রো ২ ডিভাইসে থাকা প্রফেশনাল মানের অ্যাক্টিভ নয়েজ ক্যানসেলেশন এবং এইচ২ চিপ ব্যবহার করে থাকে। এয়ারপডস প্রো ২ এর বর্তমান বাজারমূল্য ২৪৯ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় এর মূল্য ২৯ হাজার টাকারও বেশি।

এফডিএ’র অনুমোদন মিললো কিভাবে?
‘হিয়ারিং এইড ফিচার’ নামক সফটওয়্যারটির অনুমোদন প্রসঙ্গে আমেরিকার ফুড এন্ড ড্রাগস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) জানিয়েছে, হালকা থেকে মাঝারি পর্যায়ের শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা আছে এমন ১১৮ জন ব্যক্তির উপর তাঁরা একটি পরীক্ষা চালিয়েছে। ফলাফলে দেখা গেছে, অ্যাপলের এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে ১১৮ ব্যক্তি ঠিক একই রকম সুফল পেয়েছেন যেমনটা বাজারের অন্যান্য হিয়ারিং এইড ব্যবহার করে পাওয়া যায়। তথ্যসূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, ফোর্বস, টেকক্রাঞ্চ

Leave Your Comments