বাংলাদেশের তরুণ উদ্ভাবকদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে ‘টেলিকম ও ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা’। এই আয়োজনের মাধ্যমে উদীয়মান প্রতিভাদের প্রযুক্তি খাতে অংশগ্রহণের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করছে আয়োজক সংস্থা।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি প্রাঙ্গণে বুধবার (২৩ জুলাই) দিনব্যাপী এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় দেশের বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, উদ্ভাবক দল, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ ২০টি প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্ভাবনী ধারণা, প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান ও গবেষণালব্ধ ৩২টি আইডিয়া তুলে ধরে।
ইলেকট্রোমায়োগ্রাফি সংকেত ব্যবহার করে শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তির বিচলন নিয়ন্ত্রণ করতে কৃত্রিম হাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে মেলায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে রোবোলাইফ টেকনোলজিস। রাস্তার পাশের বিদ্যমান বৈদ্যুতিক খুঁটিকে টেলিকম টাওয়ার হিসেবে ব্যবহার ও বাঁশের তৈরি পরিবেশবান্ধব টাওয়ার নির্মাণ করে দ্বিতীয় এবং দুর্যোগকালীন প্রত্যন্ত এলাকায় যখন বিদ্যুৎ-বিভ্রাট হবে, তখন স্বল্পতম সময়ে নেটওয়ার্ক সচল রাখার প্ল্যাটফর্ম উদ্ভাবন করে পঞ্চম পুরস্কার লাভ করেছে ইডটকো বাংলাদেশ লিমিটেড।
উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের প্রয়োজনীয় রিসোর্স, প্রশিক্ষণ, তহবিল ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে তৃতীয় হয়েছে গ্রামীণ ফোনের জিপি অ্যাকসিলারেটর। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও কুটির উদ্যোক্তাদের জন্য কয়েক ক্লিকে ই-কমার্স ওয়েবসাইট প্রস্তুত করে চতুর্থ হয়েছে ইবিতানস।
>> আরও পড়ুন: ৩২ উদ্ভাবনের মেলা শুরু হয়েছে বিটিআরসিতে
বিজয়ীদের প্রথম পুরস্কার হিসেবে ৩ লাখ, দ্বিতীয় পুরস্কার ১ লাখ ৫০ হাজার, তৃতীয় পুরস্কার ১ লাখ, চতুর্থ পুরস্কার ৭০ হাজার এবং পঞ্চম পুরস্কার ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
মেলার সমাপনী অনুষ্ঠান শুরুতে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিটি নীরবতা পালন করা হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব জনাব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যেসব সমস্যা উদ্ভূত হয়, সেই আলোকে নতুন নতুন উদ্ভাবনী ধারণাকে বাণিজ্যিকীকরণ করা হলে দেশ ও জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। টেলিকম ও ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় অংশগ্রহণকারীরা উদ্ভাবনী আইডিয়া নিয়ে এগিয়ে এলে আইসিটি বিভাগ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী (অব.) বলেন, গত আড়াই দশকে টেলিযোগাযোগ খাতে যে উন্নয়ন হয়েছে, তা ছিল কানেকটিভিটিকেন্দ্রিক। বর্তমান ডেটাকেন্দ্রিক যুগে ডেটার ব্যবহার বাড়লেও তা ফলপ্রসূ কাজে ব্যয় হচ্ছে না। ইনোভেশন বলতে কেবল উচ্চ প্রযুক্তিতে উন্নীত হওয়া নয়, বরং সেই প্রযুক্তি কীভাবে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজে লাগানো যায়, সেটা মুখ্য হওয়া উচিত। টেলিকম ও আইসিটি বিভাগ একসঙ্গে কাজ করলে এই খাত আরও গতিশীল হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।