জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ‘পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন’ উদ্বোধন করা হলো। বুধবার (১ জানুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে নতুন বইয়ের মোড়ক ও এনসিটিবির ‘পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন’ উদ্বোধন করেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
ছাপা বই দিতে ফেব্রুয়ারি মাস পেরিয়ে যাওয়ায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইটে আগে ভাগেই প্রকাশ করা হলো।
এসময় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীমের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ড. এম আমিনুল ইসলাম, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম, এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বছরের পর বছর বই উৎসবের নামে অর্থ অপচয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেন, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৪৪১টি বই পরিমার্জন করা হয়েছে। এনসিটিবির ওয়েবসাইটে বইগুলোর অনলাইন ভার্সন পাওয়া যাবে আজ থেকেই। ৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রাথমিকের বাকি সব বই ও মাধ্যমিকের ৮টি বই পৌঁছে যাবে শিক্ষার্থীদের হাতে। এছাড়াও ১০ জানুয়ারির মধ্যে মাধ্যমিকের দশম শ্রেণির বই ও ২০ তারিখের মধ্যে সকল শ্রেণির বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে।
৪১ কোটির মধ্যে ৬ কোটি বই দেওয়া হয়ে গেছে এবং আরও ৪ কোটি বই দেয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলেও এসময় জানান তিনি।
প্রধান অতিথির জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) অধীন শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা মূল্যের বই এখন থেকে আর বিদেশে ছাপানো হবে না বলে জানান শিক্ষা উপদেষ্টা। এছাড়াও ঠিক সময়ে বই দিতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, শিশুদের কাছে বই যাবে, সেটা ভালো কাগজে ছাপা না হলে তো হয় না। সেজন্য উন্নতমানের ছাপা, উন্নত মানের কাগজ ও মলাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বই দিতে এবার বেশ খানিকটা দেরি হচ্ছে, সেজন্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। এটা সত্যি দুঃখজনক। তবে একটা বিষয় আমরা বলতে চাই, বই একটু দেরিতে পেলেও সেটা ভালো বই পাবেন। বছরের মাঝামাঝি সময়ে বইয়ের পাতা ছিঁড়ে যাবে না। তেমন বই আমরা দিচ্ছি না। এটা নিশ্চয় ভালো দিক।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, এনসিটিবিতে আগে যারা কাজ করেছেন, তাদের অনেককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মুদ্রণ শিল্প সমিতির নেতাদের সঙ্গে কীভাবে বোঝাপড়া করতে হয়, এটা তাদের অভিজ্ঞতায় নেই। সেটা করতে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমাকেও এর মধ্যে ঢুকতে হয়েছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, গল্পের একেবারে শেষে ছাড়া যেমন ষড়যন্ত্রকারী কে তা বোঝা যায় না, এখানেও তেমন। সেটা সরকারের কেউ হোক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হোক, এনসিটিবির হোক, মজুতদার হোক, সিন্ডিকেট হোক। মানে যে কেউ হতে পারে। তবে এখনই আমি কাউকে দোষারোপ করছি না। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামী দিনে আমরা একচেটিয়া ব্যবসা কমিয়ে আনবো। এটা আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে থাকবে।
পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের তথ্যমতে, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪৭ হাজার ৭৬২ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ কপি বই ছাপার কাজ চলমান। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ছাপা শেষ হয়েছে মাত্র ৬ কোটি ৬ লাখ। এসব বই বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়েছে। তবে ছাপা শেষ হওয়া ৬ কোটি ৬ লাখ বই যে বুধবারের (১ জানুয়ারি) মধ্যে স্কুলে পৌঁছানো যাবে, সেই নিশ্চয়তা দিতে পারছে না এনসিটিবির কর্মকর্তারা। সেজন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে অনলাইনে পাঠ্যবইয়ের পিডিএফ কপি দিয়েছে সরকার।