নিজের বাসা সাজুক পছন্দের আসবাবপত্রের নান্দনিকতায়

প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

সুন্দর ও স্বচ্ছন্দ একটি আবাসন প্রত্যেক মানুষেরই আকাঙ্ক্ষা। যদিও ঘরকে অনেকেই কেবল বসবাসের স্থান হিসেবে ভাবেন, বাস্তবতা হলো, একটি ঘরের সঙ্গে মানুষের আবেগ, রুচিবোধ এবং ব্যক্তিত্ব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে থাকে। কর্মব্যস্ত দিনের শেষে ঘরই হয়ে ওঠে মানসিক প্রশান্তি ও স্বস্তির স্থান। এই আরামদায়ক পরিবেশ গড়ে তোলায় আসবাবপত্রের নান্দনিকতা ও ব্যবহারযোগ্যতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আসবাব শুধু ব্যবহারের উপকরণ নয়, বরং এটি আমাদের জীবনযাপনের মানকে প্রকাশ করে। তাই আসবাব ছাড়া আবাস কল্পনাই করা যায় না। বিশ্বজুড়ে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আসবাব বা ফার্নিচারের ধরন ও নকশায় এসেছে পরিবর্তন। কখনো ভারী ও খোদাই করা কাঠের আসবাব জনপ্রিয় হয়েছে, আবার কখনো এসেছে মিনিমালিস্ট বা আধুনিক ট্রেন্ড।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। একসময় শুধু কার্যকারিতার জন্যই আসবাব কেনা হতো, কিন্তু এখন রুচি, স্টাইল এবং আরাম সমান গুরুত্ব পাচ্ছে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় আসবাব প্রস্তুত ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হাতিলের পরিচালক সফিকুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান সময়ে সবাই মডার্ন ফার্নিচারের দিকেই ঝুঁকছে। কারণ, এগুলো প্লেইন, যার ফলে বাসাবাড়িতে মানিয়ে যায় সহজেই। আর এই সময়ে তরুণদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ছোট জায়গায় মানিয়ে নেওয়া যায়, এমন মাল্টিফাংশনাল ফার্নিচার, যেমন, সোফা-কাম-বেড, ফোল্ডেবল ডাইনিং টেবিল বা মডুলার কিচেন ইউনিট। সবাই চাইছেন স্মার্ট, হালকা, সহজে স্থানান্তরযোগ্য এবং আধুনিক নকশার আসবাব।’

হোম ও অফিস ফার্নিচারের আধুনিকায়ন
আজকের ফার্নিচার ট্রেন্ডে ঘরের পাশাপাশি অফিসের আসবাবও ব্যাপক পরিবর্তিত হয়েছে। এখনকার কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের স্বাচ্ছন্দ্য, স্বাস্থ্য ও উৎপাদনশীলতার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। তাই অফিসে বাড়ছে আরগোনমিক চেয়ার, মডুলার ডেস্ক, ফ্লেক্সিবল ওয়ার্কস্টেশন ও স্টোরেজ সলিউশনের ব্যবহার। একইভাবে গৃহস্থালির আসবাবে আসছে স্মার্ট টেকনোলজির সংযোজন, যেমন, ইউএসবি চার্জিং পোর্ট, হিডেন স্টোরেজ বা মাল্টিফাংশনাল ক্যাবিনেট।

দেশের বাজার, দাম ও শীর্ষ ব্র্যান্ড
বাংলাদেশে এখন অসংখ্য ফার্নিচার কারখানা রয়েছে, যেগুলো আন্তর্জাতিক মানের পণ্য তৈরি করছে। শহুরে বাজারে হাতিল, নাভানা, পারটেক্স, অটবি ইত্যাদি ব্র্যান্ড বিশেষভাবে জনপ্রিয়। তাদের শোরুম ছাড়াও অনলাইনে কেনাকাটার সুযোগ থাকায় গ্রাহকেরা ঘরে বসেই পছন্দমতো ফার্নিচার কিনতে পারছেন।

এ ছাড়া ঢাকার বেশ কিছু স্থানে খুঁজে নিতে পারেন নিজের পছন্দসই ফার্নিচার। ঢাকা শহরের সবচেয়ে পুরোনো এবং বড় ফার্নিচার-মার্কেট পান্থপথ এলাকায়। এখানে নতুন ও পুরোনো, দুই ধরনের ফার্নিচার পাওয়া যায়।

এ ছাড়া পুরোনো ও সাশ্রয়ী মূল্যে ফার্নিচার পেতে ঘুরে আসতে পারেন সেগুনবাগিচার ফার্নিচার মার্কেটে। পাশাপাশি মিরপুর, কচুক্ষেত, গুলশান, নয়াবাজার, আজিমপুরসহ বেশ কিছু স্থানে সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো মানের ফার্নিচার পাওয়া যায়।

হাতিলের পরিচালক সফিকুর রহমান জানান, আসবাবের দাম নির্ভর করে উপকরণ ও ডিজাইনের ওপর। তিনি বলেন, ‘আসবাব কেনার সময় আমরা সব সময় কাঠ কেমন হবে, তা নিয়েই বেশি চিন্তিত থাকি। তবে ফার্নিচার টেকসই হয় এতে ব্যবহৃত অ্যাকসেসরিসের যেমন হাতল, ড্রয়ার লক, ড্রয়ার চ্যানেল ইত্যাদির ওপর। তাই আসবাব কেনার সময় এগুলোর দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। এ ছাড়া ফিনিশিং ঠিক আছে কি না, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।’

বৈশ্বিক বাজার ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা
দেশীয় বাজারের পাশাপাশি বাংলাদেশের ফার্নিচার এখন আন্তর্জাতিক বাজারেও জায়গা করে নিয়েছে। ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যসহ ৬১টি দেশে বাংলাদেশের ফার্নিচার রপ্তানি হচ্ছে। দেশে বর্তমানে আসবাবের বাজার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার। এ শিল্পে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের।

সফিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের ফার্নিচারশিল্পের ভবিষ্যৎ বেশ সম্ভাবনাময়। সঠিক পরিকল্পনা, প্রযুক্তিগত ও নীতিগত উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক বাজারে আরও বিস্তৃত উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে এই খাত দেশের অন্যতম রপ্তানিশিল্পে পরিণত হতে পারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফার্নিচার অ্যাসোসিয়েশন দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলছে। এসব সমস্যা সমাধান করা গেলে পোশাকশিল্পের মতো এই খাত থেকেও ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।’  লেখা: দিনার হোসেন

image

আপনার মতামত দিন