বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো লেদারটেকে বাংলাদেশও এগিয়ে যাক: টিপু সুলতান ভুইয়া

প্রকাশ: সোমবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৮
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png উজ্জ্বল এ গমেজ
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত
দেশের লেদারটেক ইন্ড্রাস্টির সেবার মান উন্নয়নে চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পের আধুনিকায়নে নিরলসভাবে কাজ করছে আয়োজক সংস্থা আস্ক ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশন্স। দেশের সম্ভাবনাময় লেদারটেকের এন্টারপ্রেরণারদের নিয়ে দেশীয় প্রযুক্তিতে কাজ করে লেদারটেক ইন্ড্রাস্টিকে একটা শক্ত প্লাটর্মের উপর প্রতিষ্ঠা করতে চায় সংস্থাটি। এই লক্ষ্যকে বস্তবায়ন করতে গত পাঁচ বছর ধরে আয়োজন করে আসছে চামড়া শিল্পের সবচেয়ে বড় ট্রেড শো ‘লেদারটেক বাংলাদেশ’।

রাজধানীতে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী এই ট্রেড শো। আয়োজন নিয়ে এই প্রতিবেদকের সাথে খোলামেলা আলাপ করেন আস্ক ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিপু সুলতান ভুইয়া। পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন উজ্জ্বল এ গমেজ।

টেকভয়েস২৪: দেশের লেদার ইন্ড্রাস্টির সবচেয়ে বড় আসর ‘লেদারটেক বাংলাদেশ’ এর আয়োজক সংস্থা আস্ক ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশন্সের শুরুটা কীভাবে?
টিপু সুলতান ভুইয়া : পাঁচ বছর আগে আমরা কয়েকজন মিলে চিন্তা করলাম লেদার সেক্টর নিয়ে নতুন একটা প্লাটফর্ম তৈরি করবো। এই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের এই সংস্থার যাত্রা শুরু। ৬০টি কোম্পানি নিয়ে এই আয়োজনের যাত্রা শুরু হয়। পাঁচ বছর সংখাটি এখন দাঁড়াল ২৫০ টিতে। এবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২৫০ টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে। 

টেকভয়েস২৪: এই সংস্থার কাজটা কী? 
টিপু সুলতান ভুইয়া : আমাদের কাজ হচ্ছে লোকাল যেসব এন্টারপ্রেরণার আছেন তাদের নিয়ে ট্রেড শো আয়োজন করা। উন্নত বিশ্বের লেদার ইন্ড্রাস্টিতে যেসব আপডেট ফরেন টেকনোলজি রয়েছে, দেশে এনে সেগুলোর সাথে এন্টারপ্রেরণারদের পরিচয় করিয়ে দেয়া। আমাদের মূল দায়িত্বটা হলো দেশের লেদার ইন্ড্রাস্টিতে ফরেন টেকনোলজি ট্রান্সফার করা। সুখের বিষয় হলো- ইতোমধ্যে দেশের এন্টারপ্রেরণাররা বেশ কিছু উন্নত টেকনোলজি ব্যবহার করছেন। এখন দেশেই গুনগত মানসম্পন্ন লেদারের পণ্য তৈরি হচ্ছে।

টেকভয়েস২৪: এবারের আয়োজনে কী কী থাকছে?
টিপু সুলতান ভুইয়া : আগামী বৃহস্পতিবার  থেকে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) পঞ্চমবারের মত আয়োজিত হবে তিনদিনব্যাপী এ ট্রেড শো। এতে বিশ্বের ১৫টি দেশের ২৫০টি প্রতিষ্ঠান ট্যানিং লেদার, চামড়াজাত পণ্য এবং ফুটওয়্যার শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মেশিনারি, কম্পোনেন্ট, ক্যামিকেল এবং এক্সেসরিজ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় প্রযুক্তি তুলে ধরা হবে।

টেকভয়েস২৪: বিশ্বের কোন কোন দেশ অংশ নিচ্ছে?
টিপু সুলতান ভুইয়া : অংশগ্রহণকারী প্যাভিলিয়নগুলোর একটি বড় অংশজুড়ে থাকবে ভারত ও চীনের বিভিন্ন কোম্পানি। আগের আসরগুলোর ধারাবাহিকতায় এবারের প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, কোরিয়া, তুরস্ক, মিশর, ভিয়েতনাম, যুক্তরাজ্য, শ্রীলঙ্কা, ইতালি, জার্মানি, সিঙ্গাপুর, জাপান, তাইওয়ান এবং হংকংসহ মোট ২৫০ টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করবে।

টেকভয়েস২৪: দেশের লেদারটেক ইন্ড্রাস্টির সম্ভাবনা কেমন দেখছেন?
টিপু সুলতান ভুইয়া : দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি আয়যোগ্য পণ্য ‘চামড়া শিল্পের’ প্রতি সরকারের গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী ‘চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে ২০১৭ সেরা পণ্য’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানীর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চায় চামড়া খাত। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চামড়া খাতের পরিসর যেমন বাড়ছে; তেমনি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়ছে। আমাদের দেশের লেদার ইন্ড্রাস্টিতে অনেক সম্ভাবনাময় এন্টারপ্রেরণার রয়েছেন। তাঁদের এই দক্ষতাকে যথাযতভাবে ব্যবহার করতে পারলে ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানীর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা আমাদের জন্য কঠিন হবে না।

টেকভয়েস২৪: ২০২১ সাল নাগাদ লেদারটেক ইন্ড্রাস্টি থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কী সম্ভব হবে?
টিপু সুলতান ভুইয়া : এটা মূলত একটা এক্সপোর্টের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে। এই টার্গেট পূরণে অমরা নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করে যাচ্ছি। বিশেষ করে আমাদের যারা স্থানীয় এন্ট্রারপ্রেণার আছেন তাঁদের কাজ করতে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। যেমন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রকমারি প্রযুক্তি, সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন উপায় এবং বহুমুখী পণ্যের সমাহারের মাধ্যমে চামড়া খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ও পরিসর বৃদ্ধিতে ‘লেদারটেক বাংলাদেশ ২০১৭’ সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস। তবে লড়াইটা সকলে এক সাথে করলে আমার মনে হয় কঠিন হবে না।

টেকভয়েস২৪: গত বছর আয়োজিত ট্রেড শো’তে সাড়া পেয়েছেন কেমন?
টিপু সুলতান ভুইয়া : তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির সুবাদে সবাই প্রযুক্তিবান্ধব হয়ে পড়ছে। লেদারটেক ইন্ড্রাস্টিটাও দিন বড় হচ্ছে। মানুষের পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। মানুষ চায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির তৈরির পণ্য ব্যবহার করতে। তাই ট্রেড শোতে সাড়াও মিলছে ভাল। প্রতি বছরই আস্তে অস্তে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়ছে। গত বছরও এর ব্যতিক্রম ছিল না। এবারও আরও বাড়বে বলে আশা করছি।

টেকভয়েস২৪: দেশে যেসব লেদার পণ্য তৈরি করা হচ্ছে এখানে টেকনোলজির প্রয়োগটা কী দেশীয় না বাইরের?
টিপু সুলতান ভুইয়া : আমাদের দেশ থেকে কাঁচা মাল হিসেবে চামড়া পাচ্ছি। প্রযুক্তির বিষয়ে বলতে গেলে আমাদের দেশীয় প্রযুক্তির এখনো কোনো মেশিন পাইনি। কম্পোনেন্ট এখনো কম্পোনেন্ট আকারেই আসতেছে। অনেক জায়গায় আমরা অ্যাসেম্বল করছি। আস্তে আস্তে আমাদের লেদার ফুটওয়্যার এবং লেদার ব্যাগ তৈরির ফ্যাক্টরি বাড়ছে। ইতোমধ্যেই দেশে সোলাস্ট, সোলের ফ্যাক্টরি হয়ে গেছে। এমনকি অ্যাডাইসিভের কাজও শুরু হয়ে গেছে। এটা নির্ভর করবে যত দ্রুত এই লেদারটেক সেক্টরটা বাড়বে তত স্থানীয় প্রযুক্তির প্রয়োগও বাড়বে।

টেকভয়েস২৪: ভবিষ্যতে লেদারটেক ইন্ড্রাস্টিকে আপনারা কীভাবে দেখতে চাইছেন?
টিপু সুলতান ভুইয়া : আমরা চাচ্ছি সারাবিশ্বের লেদার ইন্ড্রাস্টিতে যেসব টেকনোলজি রয়েছে সেগুলো এই ট্রেড ফেয়ারের মাধ্যমে সবার সামনে হাজির করতে এবং আমাদের দেশেও তা প্রয়োগ করে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করে তুলতে। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বিভিন্ন শিল্পখাত থেকে ৬০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানী আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে যেখান চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পের অবদান হবে ৫ বিলিয়ন ডলার। এই পরিসংখ্যান বিবেচনায় দেশের অর্থনীতিতে চামড়া ও চামড়াজাত খাতের অবদান অনস্বীকার্য। এই খাতকে এগিয়ে নিয়ে আস্ক ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশন্স প্রাইভেট লিমিটেড ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। আমরা চাই বিশ্বের উন্নতদেশগুলোর মতো লেদারটেকে বাংলাদেশও এগিয়ে যাক।

image

আপনার মতামত দিন