বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবট চ্যাটটিপিটি এবার আরও সাশ্রয়ী মূল্যে ব্যবহার করা যাবে বাংলাদেশে। ‘চ্যাটটিপিটি গো’ নামে নতুন একটি সাবস্ক্রিপশন প্ল্যান চালু করেছে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই। শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়ার আরও ১৭টি দেশেও চালু হয়েছে এই প্ল্যানটি, যার ফলে আরও বিস্তৃত পরিসরে সাধারণ ব্যবহারকারীরা উন্নত এআই প্রযুক্তির সুবিধা নিতে পারবেন।
কি বলছে ওপেনএআই
ওপেনএআইয়ে কর্মকর্তা নিক টার্লে জানিয়েছেন, এই সাবস্ক্রিপশন প্ল্যান চালুর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে চ্যাটটিপিটি-কে আরও বেশি মানুষের কাছে সহজলভ্য করে তোলা। এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ তিনি বলেছিলেন, “ব্যবহারকারীরা চায় একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর এআই অভিজ্ঞতা।” সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষার অংশ হিসেবেই প্রতিষ্ঠানটি এই নতুন প্ল্যান চালু করেছে।
কোথায় কোথায় চালু হয়েছে?
প্রথমদিকে চ্যাটটিপিটি গো চালু হয়েছিল শুধুমাত্র ভারত ও ইন্দোনেশিয়ায়। তবে এখন এটি পাওয়া যাচ্ছে মোট ১৮টি দেশে, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভুটান, ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, ফিলিপিন্স, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, পূর্ব তিমোর, আফগানিস্তান এবং ভিয়েতনাম। এই দেশগুলোতে প্রযুক্তিগত সমন্বয় এবং ডিজিটাল প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি পাওয়ায় ওপেনএআই তাদের নতুন প্ল্যান নিয়ে এগুলোকে প্রাধান্য দিয়েছে।
কী থাকছে চ্যাটটিপিটি গো-তে?
চ্যাটটিপিটি গো প্ল্যানে ফ্রি সংস্করণের চেয়ে অনেক বেশি সুবিধা রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জিপিটি-৪ (সর্বশেষ সংস্করণ জিপিটি-৪ও), ছবি তৈরির ফিচার (ইমেইজ জেনারেশন), ফাইল আপলোড করে তা বিশ্লেষণ করার সুবিধা, উন্নত তথ্য বিশ্লেষণ ক্ষমতা এবং বাড়তি ব্যবহার সীমা। অর্থাৎ, যারা ফ্রি ভার্সনে সীমিত সুবিধা পান, তারা কম দামে একটি শক্তিশালী ও পূর্ণাঙ্গ এআই অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন এই গো সাবস্ক্রিপশন প্ল্যানে।
কত দাম?
মূল্য কাঠামোর দিক থেকে দেখা যায়, ভারতে এই প্ল্যানের দাম রাখা হয়েছে মাসিক ৩৯৯ রুপি এবং ইন্দোনেশিয়ায় ৭৫,০০০ রুপিয়া। তবে এশিয়ার অন্যান্য দেশে এই দামে কিছুটা পার্থক্য থাকতে পারে। এটি ওপেনএআই-এর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সাশ্রয়ী সাবস্ক্রিপশন প্ল্যান। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বর্তমানে ওপেনএআই-এর আরও দুটি প্রধান পেইড প্ল্যান রয়েছে-জিপিটি-প্লাস (মাসে ২০ ডলার), এবং জিপিটি টিম বা গো প্লো (মাসে ২৫ ডলার থেকে)। বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য রয়েছে চ্যাটটিপিটি এন্টারপ্রাইজ, যার দাম নির্ভর করে কাস্টম ব্যবহারের ওপর।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
২০২২ সালের শেষদিক থেকে বিশ্বব্যাপী চ্যাটটিপিটি-এর ব্যবহার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর ব্যবহার বাড়ার হার উল্লেখযোগ্য। ওপেনএআই-এর এক অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মে মাসে নিম্নআয়ের দেশগুলোতে চ্যাটটিপিটি ব্যবহারের হার ধনী দেশগুলোর তুলনায় চার গুণ বেশি ছিল। এর পেছনে মূল কারণ হলো, এই দেশগুলোতে শিক্ষার্থী, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও সাধারণ প্রযুক্তিপ্রেমীরা কম খরচে উন্নত প্রযুক্তির সমাধান খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
সবশেষে বলা যায়, বাংলাদেশসহ এশিয়ার আরও ১৭টি দেশে চ্যাটটিপিটি গো চালু হওয়া নিঃসন্দেহে একটি বড় পদক্ষেপ। এটি প্রমাণ করে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি এখন শুধু বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান নয়, বরং ছোট ব্যবসা, শিক্ষার্থী, গবেষক এমনকি সাধারণ ব্যবহারকারীদের হাতের নাগালেও পৌঁছে যাচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে শক্তিশালী এআই টুল ব্যবহারের সুযোগ আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল অঞ্চলের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে। সূত্র: টেকক্রাঞ্চ, দ্য ভার্জ ও এনগ্যাজেট