বিস্ময়কর প্রযুক্তির নাম ‘ইন্টারনেট অব থিংস’

প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৪
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত
মানুষের জীবনকে যাদুর মতো বদলে দিতে পারে এমনই এক বিস্ময়কর প্রযুক্তির নাম ইন্টারনেট অব থিংস। এটি মানুষকে দ্রুত প্রভাবিত করতে সক্ষম।

সকালে অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভাঙার পর একজন ব্যক্তি ঘড়ির স্টপ বোতামে চাপ দিলেন। ঘড়িটি তখন ঘরের অন্যান্য যন্ত্রে (ডিভাইস) ব্যক্তির ঘুম থেকে ওঠার বার্তাটি পৌঁছে দেবে।

এ বার্তা পেয়ে ঘরের বাতি জ্বলে উঠবে, জানালার পর্দা খুলে যাবে, আবার খাবার ঘরে থাকা কফি মেশিনও নির্দিষ্ট সময় এক কাপ কফি বানিয়ে ফেলবে। আবার দেখা যাবে, ওই ব্যক্তি বাসা থেকে বের হওয়ার আগে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যাবে গ্যারেজে থাকা গাড়িও।

এ ঘটনায় যত যন্ত্র ব্যবহার হয়েছে, তার সব মূলত ইন্টারনেটের মাধ্যমে একটির সঙ্গে আরেকটি যুক্ত ছিল। আর এ পুরো প্রক্রিয়াই হলো ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি)।

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, আইওটি হলো মানুষ ও বিভিন্ন যন্ত্রের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বিশাল এক নেটওয়ার্ক। এ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যন্ত্রগুলো তথ্য আদান-প্রদানের পাশাপাশি পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী সেসব তথ্য বিশ্লেষণ করে কাজে লাগাতে পারে।

বর্তমানে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পণ্য গুদামে রাখা থেকে শুরু করে ভোক্তার হাতে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত আইওটি ব্যবহার করছে। অটোমেশনের জন্য কারখানা ও কৃষিতেও এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।

অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস (এডব্লিউএস) বলছে, আইওটি মানুষের জীবন ও কাজের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।

প্রযুক্তিবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিস্টারের তথ্যমতে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে সক্রিয় আইওটি ডিভাইসের সংখ্যা তিন হাজার কোটি ছাড়িয়ে যাবে।

প্রযুক্তিবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সফর্মা ইনসাইটসের এক প্রতিবেদনে আভাস দেওয়া হয়েছে, ২০১৯ সালে আইওটি খাতে বিশ্বে মোট আয়ের পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। ২০৩০ সালে এটি বেড়ে দাঁড়াতে পারে দেড় লাখ কোটি ডলারে (১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন)।

আইওটির গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিবিদ ব্রুস স্টারলিং বলেছেন, ‘ইন্টারনেট অব থিংস বলতে কেবল কিছু বস্তুকেই বোঝায় না। বরং এটি একটি প্রক্রিয়া, যার মধ্য দিয়ে বস্তু, মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটা নতুন সম্পর্ক গড়ে ওঠে।’

ট্রান্সফর্মা ইনসাইটসের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, সক্রিয় আইওটি যন্ত্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি থাকবে মিডিয়া ডিভাইস। এর পরিমাণ হবে মোট যন্ত্রের প্রায় ৩৪ শতাংশ। এরপর আধিপত্য থাকবে যথাক্রমে স্মার্ট গ্রিড (১৪ শতাংশ), কানেক্টটেড ভেহিকল (৭ শতাংশ), লাইটিং (৬ শতাংশ) ও অ্যাসেট ট্র্যাকিং (৪ শতাংশ)।

ব্রিটিশ প্রযুক্তিবিদ কেভিন অ্যাস্টনের ভাষায়, ইন্টারনেট অব থিংস এমন এক প্রযুক্তি, যা আমাদের জীবনযাপন ও কাজের ধরনকে পুরোপুরি বদলে দিতে পারে।

বিশ্বের প্রথম আইওটি ডিভাইসটি ছিল মূলত টোস্ট বানানোর একটি যন্ত্র। গত শতাব্দীর আশির দশকে যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা নেটওয়ার্ক সংযুক্ত এ যন্ত্র বানিয়েছিলেন। এ যন্ত্রের মাধ্যমে দূর থেকেই টোস্ট বানানোর প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ করা যেত।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক বছর আইওটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রাহকের মধ্যেও ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিষয়টি। বর্তমানে বিশ্বে ৭০০ কোটির বেশি আইওটি ডিভাইস রয়েছে।

ইন্টারনেট অব থিংস শব্দটি আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচিতি পায় ১৯৯৯ সালে। পিঅ্যান্ডজি কোম্পানির একটি প্রকল্পে কাজ করার সময় ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অটো আইটি সেন্টারের সহপ্রতিষ্ঠাতা কেভিন অ্যাশটন সর্বপ্রথম ইন্টারনেট অব থিংস পরিভাষাটি ব্যবহার করেন।

image

আপনার মতামত দিন