ডিপফেক: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিপজ্জনক বিভ্রান্তি যাচাইয়ের সহজ উপায়

প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png নিজস্ব প্রতিবেদক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ডিজিটাল যুগে ভুয়া অডিও, ভিডিও ও ছবি তৈরির সক্ষমতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি উন্নত হয়েছে। বিশেষ করে ডিপফেক, অর্থাৎ এআই জেনারেটেড, গভীরভাবে সম্পাদিত বা পরিবর্তিত কনটেন্ট-সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে।

দেখতে ও শুনতে বাস্তবের মতো হওয়ায় সাধারণ ব্যবহারকারী সহজেই প্রতারিত হন। ভুয়া তথ্য ছড়ানো, জনমত বিভ্রান্ত করা, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার এবং ব্যক্তিগত সুনাম নষ্ট করার মতো নানান উদ্দেশ্যে এগুলো ব্যবহার করা হয়। রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ-সকলেই ডিপফেকের শিকার হতে পারেন। তবে কয়েকটি কৌশল অনুসরণ করলে ডিপফেক শনাক্ত করা তুলনামূলক সহজ হয়।

১. উৎস যাচাই-প্রথম ধাপ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো ছবি বা ভিডিও ভাইরাল হলে সবার আগে তার উৎস পরীক্ষা করা জরুরি। কোন অ্যাকাউন্ট বা পেজ থেকে কনটেন্টটি এসেছে তা খেয়াল করুন। সন্দেহজনক বা নতুন খোলা আইডি, ভুয়া প্রোফাইল ছবি, নাম-অনিয়ম, অথবা পূর্বে কোনো পোস্ট না থাকা-এসবই সতর্কতার সংকেত। বিশ্বস্ত গণমাধ্যম, সরকারি সংস্থা বা যাচাইকৃত সূত্রে কনটেন্টটির উল্লেখ আছে কি না তা খোঁজ করুন।

২. মুখ ও শরীরের অস্বাভাবিকতা বিশ্লেষণ
ডিপফেক ভিডিওতে মুখের অভিব্যক্তি বা চলাচলে সূক্ষ্ম অসামঞ্জস্য থাকে। ভিডিও থামিয়ে চোখের পলক ফেলা, ঠোঁটের নড়াচড়া, দাঁতের প্রান্ত, নাকের আকৃতি কিংবা চুলের রেখা ভালো করে দেখুন। ছবিতে হাতের আঙুল, চোখের দৃষ্টি, দাঁত ও কান-এসব জায়গায় বিকৃতি বা অপ্রাকৃতিক লাইন দেখা গেলে সেটি ডিপফেক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এআই–তৈরি চরিত্রগুলো সাধারণত মানবিক স্বাভাবিকতা পুরোপুরি নকল করতে পারে না।

৩. আলো-ছায়ার অসামঞ্জস্য খুঁজে দেখুন
ছবি বা ভিডিওর আলোর প্রতিফলন বিশ্লেষণ করা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। বাস্তব দৃশ্যে আলো, ছায়া এবং প্রতিফলন একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে। এআই-জেনারেটেড কনটেন্টে আলো কখনো মুখে পড়লেও ছায়ায় সঠিক প্রতিফলন দেখা যায় না। কোনো বস্তুর ওপর আলো পড়ার দিক আশেপাশের পরিবেশের সঙ্গে মিলছে কি না তা খেয়াল করুন।

৪. কণ্ঠস্বরের স্বরলিপি যাচাই
ডিপফেক অডিওতে কণ্ঠস্বর সাধারণত যান্ত্রিক বা অস্বাভাবিক টোনযুক্ত হয়। বিরতি, শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ, উচ্চারণের টোন, প্রতিটিতেই ভুল থাকতে পারে। একই ব্যক্তির আগের বক্তৃতা বা সাক্ষাৎকারের সঙ্গে তুলনা করলে পার্থক্য সহজে ধরা পড়ে। ভয়েস ক্লোনিং এখন অত্যন্ত উন্নত হলেও সম্পূর্ণ নিখুঁত নয়।

৫. ভিডিও ফ্রেম-বাই-ফ্রেম বিশ্লেষণ
ভিডিও বারবার থামিয়ে ফ্রেমগুলো বিশ্লেষণ করুন। মুখের চারপাশে ঝাপসা দাগ, খাঁজকাটা অংশ, ফ্রেম বদলের সময় মুখের আকৃতি হঠাৎ পরিবর্তন হওয়া, এসবই ডিপফেকের লক্ষণ। কখনো পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ডের বস্তুগুলোর আকৃতি বদলে যেতে পারে, যা স্বাভাবিক নয়।

৬. মেটাডেটা পরীক্ষা
ছবি বা ভিডিওর মেটাডেটা ফাইলের ভেতরে থাকা “অদৃশ্য তথ্য”। এটি বলে দেয় কনটেন্টটি কবে, কীভাবে এবং কোন ডিভাইসে তৈরি হয়েছে। অনেক ডিপফেক ফাইলে অসম্পূর্ণ বা সন্দেহজনক মেটাডেটা পাওয়া যায়। ফাইলের “ইনফো” অপশন থেকে এসব তথ্য পরীক্ষা করা যায়।

৭. রিভার্স ইমেজ সার্চ ব্যবহার
যদি কোনো ছবি সন্দেহজনক মনে হয়, সেটির স্ক্রিনশট নিয়ে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ বা অনুরূপ প্ল্যাটফর্মে মিলিয়ে দেখুন। এতে আসল ছবি বা পুরোনো পোস্ট পাওয়া যায়, যা থেকে সত্যতা যাচাই করা সহজ হয়।

৮. বিশেষায়িত টুল দিয়ে যাচাই
ডিপফেক শনাক্তে বর্তমানে ফটোফরেনসিকস, ডিপওয়্যার এআই, মিডিয়াইনফো, ইনভিড টুলসসহ নানান ওয়েবসাইট ব্যবহার করা হয়। এগুলো ছবির পিক্সেল, মেটাডেটা, কমপ্রেশন লেয়ার এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত দিক পরীক্ষা করে সন্দেহজনক অংশ শনাক্ত করতে পারে। সূত্র: টেকরাডার ও দ্য গার্ডিয়ান

 

image

আপনার মতামত দিন