এআই-নির্ভর শিক্ষায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল ওপেনএআই

প্রকাশ: শনিবার, ০২ অগাস্ট, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

চ্যাটজিপিটি এখন আর শুধু একটি প্রশ্ন-উত্তর মেশিন নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির এই চ্যাটবট সম্প্রতি চালু করেছে একটি শিক্ষাবান্ধব ফিচার ‘স্টাডি মোড’। এটি শিক্ষার্থীদের চিন্তাশক্তি ও বিশ্লেষণক্ষমতা বাড়াতে ডিজাইন করা হয়েছে। এই মোডকে এমনভাবে তৈরি করেছে, যাতে এটি শুধু উত্তর দেওয়ায় সীমাবদ্ধ না থেকে শিক্ষার্থীদের বিষয় নিয়ে ভাবতে, বিশ্লেষণ ও চিন্তা করতে উৎসাহিত করবে। সেসাথে এটি একজন বাস্তব শিক্ষকের মতো শিক্ষকসুলভ সহায়ক হিসেবে ধাপে ধাপে শেখাতে সক্ষম।
 
স্টাডি মোড চালু থাকলে ব্যবহারকারীর প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে চ্যাটজিপিটি ধাপে ধাপে গাইড করবে, প্রশ্ন করে শেখাবে এবং ব্যবহারকারীকে চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করবে। কোনো বিষয় বোঝার আগ্রহ না দেখালে কখনো কখনো এটি উত্তর দিতেও অস্বীকৃতি জানাবে।

কাদের জন্য থাকছে এই সুবিধা?
স্টাডি মোড বর্তমানে চ্যাটজিপিটির ফ্রি, প্লাস, প্রো এবং টিম প্ল্যানের গ্রাহকদের জন্য চালু করা হয়েছে। ওপেনএআই জানিয়েছে, খুব শিগগিরই ‘এডু প্ল্যান’-এর আওতায় থাকা ব্যবহারকারীরাও এটি ব্যবহার করতে পারবেন। এডু গ্রাহক বলতে বোঝানো হচ্ছে সেইসব শিক্ষার্থী, যাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চ্যাটজিপিটির জন্য আলাদা সাবস্ক্রিপশন কিনেছে।

শিক্ষায় এআইয়ের প্রভাব 
মার্কিন এক গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করছেন ব্যক্তিগত টিউটরের মতো। এতে করে সহজে পড়াশোনা করা গেলেও এর নেতিবাচক দিকও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের জুনে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, যেসব শিক্ষার্থী নিয়মিত রচনা লেখায় চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেন, তাদের মস্তিষ্কের সক্রিয়তা গুগল সার্চ ব্যবহারকারী বা প্রযুক্তিমুক্ত শিক্ষার্থীদের তুলনায় কম।

চ্যাটজিপিটি ২০২২ সালে চালু হওয়ার পরই শিক্ষাক্ষেত্রে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। প্রথমদিকে কিছু স্কুল এআই ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিলেও ২০২৩ সালের পর তা ধীরে ধীরে শিথিল হয়। এখন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বীকার করছে, চ্যাটজিপিটি শিক্ষার্থীদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে।

প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লড ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
ওপেনএআইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী এআই চ্যাটবট ‘ক্লড’ এরই মধ্যে ‘লার্নিং মোড’ নামে অনুরূপ একটি ফিচার চালু করেছে। এদিক থেকে দেখলে স্টাডি মোড ওপেনএআইয়ের শিক্ষাক্ষেত্রে প্রথম সরাসরি পদক্ষেপ। তবে এর কার্যকারিতা নিয়ে কিছু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা চাইলে সহজেই স্টাডি মোড বন্ধ করে আগের সাধারণ মোডে ফিরে যেতে পারে। ফলে কারও মধ্যে যদি শেখার সত্যিকারের আগ্রহ না থাকে, তাহলে এই ফিচার খুব একটা কাজে নাও আসতে পারে।

স্টাডি মোড কি বাধ্যতামূলক হবে?
এই মুহূর্তে অভিভাবক বা স্কুল প্রশাসন স্টাডি মোড বাধ্যতামূলক করতে পারছে না। ওপেনএআই-এর শিক্ষাবিষয়ক সহসভাপতি লিয়া বেলস্কি জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়ে ভাবা হচ্ছে। তবে এটি পরিষ্কার, স্টাডি মোডের সর্বোচ্চ সুবিধা তখনই পাওয়া যাবে, যখন শিক্ষার্থীরা নিজের আগ্রহে শেখার উদ্যোগ নেবে, শুধু অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে নয়।
 
স্টাডি মোড চ্যাটজিপিটির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি শুধু এআইকে আরও মানবিকভাবে উপস্থাপন করছে না, বরং শিক্ষাকে আরও অন্তর্দৃষ্টিমূলক এবং কার্যকর করে তুলতে চায়। আগামী দিনে ওপেনএআই কিভাবে শিক্ষার্থীদের এআই ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করবে এবং কী ধরনের পরিসংখ্যান প্রকাশ করবে, তা শিক্ষাক্ষেত্রে এআইর ভবিষ্যৎ ব্যবহারের দিকনির্দেশনা দেবে।  সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, টেকক্রাঞ্চ

image

আপনার মতামত দিন