মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যখন কোনো এক শারীরিক সীমাবদ্ধতায় থেমে যায়, তখন প্রযুক্তিই হতে পারে নতুন করে বাঁচার পথ। এমনই এক অনুপ্রেরণার গল্প উঠে এসেছে তরুণী টিলি লকি-এর জীবনে, যিনি এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত একটি বায়োনিক হাতের সহ-পরীক্ষক এবং ব্যবহারকারী।

 'হিরো আর্ম প্রো'-প্রযুক্তির নতুন নায়ক
চার বছরের দীর্ঘ গবেষণা শেষে উদ্ভাবিত হয়েছে নতুন প্রজন্মের বায়োনিক হাত ‘Hero Arm Pro’, যা তৈরি করেছে Open Bionics।

ব্রিটিশ দৈনিক দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট জানায়, এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দ্রুত, কার্যকর এবং জলরোধী বায়োনিক হাত।

এই ডিভাইসটি শুধু দেখতে ফিউচারিস্টিক নয়, বরং প্রযুক্তিগত দিক থেকেও অবিশ্বাস্য। এতে রয়েছে:
    >> ৩৬০ ডিগ্রি কব্জি ঘোরানোর সুবিধা
     >> ওয়্যারলেস সেন্সর সিস্টেম
     >> 'Myopod' প্রযুক্তি, যা পেশির সংকেত শনাক্ত করে
     >> ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রণ অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখায়।

এটি ব্যবহারকারীদের দেয় আরও বেশি গতি, শক্তি ও নিয়ন্ত্রণ-যা প্রতিদিনের জীবনযাত্রাকে করে তোলে অনেক সহজ ও সাবলীল।

টিলি লকির গল্প: একটি হাত নয়, এক জীবনের উদ্ভাবন
টিলি লকি নামটা এখন অনেকের কাছেই পরিচিত। শিশু বয়সে হাত হারানো এই কিশোরী প্রায় এক দশক ধরে Open Bionics–এর সঙ্গে যুক্ত। তিনি শুধু একজন ব্যবহারকারী নন, এই হাত তৈরির প্রতিটি ধাপে তার রয়েছে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে আসা পরামর্শ ও মতামত।

টিলি বলেন, “সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এটি শরীর থেকে আলাদা করেও আমি চালাতে পারি! বোতাম চেপে হাত আলাদা করা যায়, আর তাও পুরোপুরি ওয়্যারলেস।”

ইনস্টাগ্রামে ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে টিলির জনপ্রিয়তা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে প্রযুক্তি নিয়ে নতুন প্রজন্মের আগ্রহও।

 থ্রিডি প্রযুক্তির সহায়তায় সবার জন্য কাস্টম হাত
২০১৪ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে Open Bionics ইতোমধ্যেই এক হাজারের বেশি ব্যবহারকারীর কাছে তাদের বায়োনিক বাহু পৌঁছে দিয়েছে। তারা থ্রিডি স্ক্যানিং ও থ্রিডি প্রিন্টিং ব্যবহার করে প্রতিটি ব্যবহারকারীর হাতের মাপ অনুযায়ী কাস্টম হ্যান্ড তৈরি করে।

 প্রযুক্তি যেখানেই প্রতিবন্ধকতা, সেখানেই সমাধান
প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, যাদের এতদিন নিজেদের সীমাবদ্ধতা লুকিয়ে রাখতে হতো, তারা এখন নিজেদের প্রকাশ করছেন গর্বের সঙ্গে। কারণ, এই হাত শুধু অঙ্গহানি পূরণ করছে না, এটি একজন মানুষের আত্মবিশ্বাসও ফিরিয়ে দিচ্ছে।

একটি বায়োনিক হাত হয়তো শুধু একটি যন্ত্র-কিন্তু কারও কাছে তা হতে পারে একটি নতুন জীবন, একটি নতুন পরিচয়। টিলি লকির মতো মানুষরা আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছেন, প্রযুক্তি কেবল যন্ত্র নয়, এটি সহানুভূতি ও সক্ষমতার সংমিশ্রণ। সূত্র: দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট