থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের বৈপ্লবিক উদ্ভাবন, ইলেকট্রনিকস হবে আরও সবুজ ও টেকসই

প্রকাশ: রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

ইলেকট্রনিকস তৈরির পদ্ধতিতে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছেন সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি অ্যান্ড ডিজাইনের (এসইউডি) গবেষকেরা। তাঁরা এমন একটি ৩ডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, যার মাধ্যমে পানির নিচে বিদ্যুৎ পরিবাহী উপাদান তৈরি সম্ভব হচ্ছে। তাও আবার পরিবেশবান্ধব, প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে। এই আবিষ্কার ইলেকট্রনিকস শিল্পকে আরও টেকসই ও পরিবেশবান্ধব করার সম্ভাবনা জাগিয়েছে।

সাধারণত ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় প্লাস্টিক ও ভারী ধাতু, যেগুলো পরিবেশে ক্ষতিকর এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়। তবে এসইউডি-র গবেষক দল এই প্রচলিত পথ ভেঙে উদ্ভাবন করেছেন এমন এক প্রিন্টিং প্রযুক্তি, যেখানে ব্যবহার করা হয়েছে উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে পাওয়া সেলুলোজ অ্যাসিটেট এবং পেনসিলে ব্যবহৃত পরিচিত গ্রাফাইট। এই উপাদানগুলো সহজে পচনশীল ও পরিবেশে সম্পূর্ণভাবে মিশে যেতে সক্ষম।

তাপ নয়, ঘরের পরিবেশেই চলে প্রিন্টিং
এই নতুন পদ্ধতির বড় চ্যালেঞ্জ ছিল-তাপ সহনশীল না হওয়ায় সাধারণ ৩ডি প্রিন্টার ব্যবহার করা যাচ্ছিল না। অপরদিকে তরল ঢালার প্রচলিত কৌশলে সূক্ষ্ম ও নির্ভুল যন্ত্রাংশ তৈরি করা প্রায় অসম্ভব। তাই গবেষকেরা বেছে নেন ডাইরেক্ট ইংক রাইটিং নামক একটি পদ্ধতি, যাতে ঘরের তাপমাত্রায়ই অত্যন্ত নিখুঁতভাবে প্রিন্টিং করা যায়।

প্রথমে তাঁরা তৈরি করেন এক বিশেষ তরল ‘ইংক’, যাতে সেলুলোজ অ্যাসিটেট অ্যাসিটোনে দ্রবীভূত করে তাতে গ্রাফাইট মেশানো হয়। গ্রাফাইটের উপস্থিতিতে ইংকটি বিদ্যুৎ পরিবাহী হয়ে ওঠে। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় ইংক প্রিন্ট করার সময়, যখন তা কাঙ্ক্ষিত আকৃতি ধরে না এবং ছড়িয়ে পড়ে।

প্রিন্টিং হবে পানির নিচে
এই জটিলতা কাটাতে গবেষকেরা বেছে নেন এক অসাধারণ সমাধান-ইংকটি পানির ভেতর প্রিন্ট করা। পানির উপস্থিতিতে অ্যাসিটোন দ্রুত বেরিয়ে যায়, এবং দ্রবণটি তাৎক্ষণিকভাবে জমে যায় নির্ধারিত আকৃতিতে। এই প্রক্রিয়াটি ‘ইমারশন প্রিসিপিটেশন’ নামে পরিচিত। ফলে তৈরি হয় পরিষ্কার, নিখুঁত এবং স্থিতিশীল গঠন।

এই পদ্ধতির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো, এতে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত গ্রাফাইট ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে-যা আগের যেকোনো ৩ডি প্রিন্টিং পদ্ধতির তুলনায় অনেক বেশি। এর ফলে তৈরি উপাদান হয়ে ওঠে বিদ্যুৎ পরিবাহী এবং এলইডি বাতি চালানোর মতো শক্তি ধারণে সক্ষম। একইসঙ্গে এটি নমনীয়, তাই এটি ব্যবহার করা যাবে বাঁকানো সার্কিট বা সেন্সরের মতো যন্ত্রাংশে।

জটিল আকৃতির প্রিন্টিংয়ে এখন আর বাধা নয়
গবেষকেরা আরও দেখিয়েছেন, একধরনের জেল ব্যবহার করে সর্পিল বা জটিল আকৃতির প্রিন্ট করাও সম্ভব-তাও কোনো বাড়তি কাঠামো ছাড়া। এই সব উপাদানই বায়োডিগ্রেডেবল এবং অ্যাসিটোন সহজে বাষ্প হয়ে যায়, ফলে পুরো প্রক্রিয়াটি পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ। গবেষকেরা এখন আরও প্রাকৃতিক উপাদান সংযোজন ও প্রযুক্তিটির ব্যবহারিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁদের লক্ষ্য হলো-কম খরচে, সহজে প্রিন্টযোগ্য, নমনীয় ও পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রনিকস তৈরি করে একটি টেকসই ভবিষ্যতের পথ তৈরি করা।

গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে সম্মানজনক জার্নাল ‘ACS Applied Engineering Materials’-এ। এটি প্রমাণ করে, প্রযুক্তির সৃজনশীল প্রয়োগের মাধ্যমেই পরিবেশ সুরক্ষার বাস্তব সমাধান খোঁজা সম্ভব। সূত্র: নো রিডজ সায়েন্স, সিএনএ

image

আপনার মতামত দিন