‘আড়ংয়ের মতো সবাই এক নামে চিনবে স্বপ্নের শপ NAAZ-কে’

প্রকাশ: শুক্রবার, ০১ জুন, ২০১৮
Image উজ্জ্বল এ গমেজ
news-banner
  ছবি: সংগৃহীত
নাজমুন নাহার নাজ চট্টগ্রামেরই মেয়ে। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। তখন থেকেই ই-কমার্স বিজনেস নিয়ে কিছু একটা করার তাড়না ছিল মনে। প্রথমে শখের বশে ফেসবুকে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করেন। শুরুতেই ভালো সাড়া পেয়ে উৎসাহিত হন তিনি। পরে এক পর্যায়ে সাহস করে শুরু করেন অনলাইনে স্বপ্নের শপ ‘NAAZ’।

ই-কমার্স ব্যবসায় ক্যারিয়ারের নানান দিক নিয়ে নাজমুন নাহার কথা বলেন এই প্রতিবেদকের সঙ্গে।

ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর কথা জানাতে গিয়ে নাজমুন নাহার বলেন, আসলে আমার অনলাইন শপের মাধ্যমে ফ্যাশন রিলেটেড কিছু একটা করার ইচ্ছে ছিল। আজ থেকে প্রায় ৫/৬ বছর আগ থেকেই আমি ই-কমার্স বিজনেসের সাথে জড়িত। শুরুতে অবশ্য আমার কোনো অনলাইন শপ ছিল না। শুধু ভার্সিটির ফ্রেন্ড আর রিলেটিভদের জন্যই প্রডাক্ট তৈরি করতাম। আর মনে মনে বিজনেস করার স্বপ্ন দেখতাম। পরে অস্ট্রেলিয়া থেকে এমবিএ সম্পন্ন করি। এরপর অনলাইন বিজনেসে কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে দেশের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ফ্যাশন সম্পর্কিত বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি।

তিনি বলেন, একটা সময় অবশ্য আমি চাকরিই খুঁজেছি। কিন্তু আবার সুযোগ থাকার পরও বিভিন্ন কারণে তখন আর করা হয়ে উঠেনি। যাহোক, সেইসময় আমি নিজেই অনলাইন কাস্টমার ছিলাম। ফেসবুকে যখন অন্যদের অনলাইন শপ দেখতাম তখন ভাবতাম, ইস! আমার যদি এরকম একটা অনলাইন শপ থাকত! ভাবতে ভাবতে একদিন সাহস করে শুরু করেই ফেললাম আমার স্বপ্নের শপটি। ২০১৪ সালের ৪ এপ্রিল থেকেই শুরু হলো অফিশিয়ালি আমার নতুনভাবে পথ চলা।

নাজমুন ই-কমার্স ব্যবসায়ী হিসেবে একজন উদোক্তা। এই অনলাইন শপে মূলত জুয়েলারি পণ্যই বেশি তৈরি ও বিক্রি হয়। এসব গহনা নিজস্ব ডিজাইনে কারিগরি টিম দিয়ে তৈরি করছেন নাজমুন। গহনা, পোশাক, বেড কভারসহ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় জিনিসের ডিজাইন করা হয়। এগুলো দেশে বিক্রি হচ্ছে এবং দেশের বাইরেও যাচ্ছে। দৈনিক গড়ে প্রায় ২০/২৫ হাজার টাকার অর্ডার আসে অনলাইন থেকে।

নাজমুন জানালেন, বেশিরভাগ অর্ডার আসে দেশের বাইরে থেকে। অনলাইনে এখন USA, UK, SYDNEY, CANADA, GERMANY-তে আমি রেগুলার প্রডাক্ট পাঠিয়ে থাকি। আবার অনেকে আমার কাছ থেকে হোলসেলে নিয়ে বাইরে নিজেরাই বিজনেস করছেন । মজার ব্যাপার হলো, এখন উনারা অনকেই আমার কাস্টমার থেকে ফ্রেন্ড হয়ে গেছেন।

ই-কমার্স বিজনেসের পুরো প্রক্রিয়াটি সংক্ষেপে জানতে চাইলে নাজমুন বলেন, খুবই সহজ। ক্রেতারা অনলাইনে প্রডাক্ট দেখে। প্রডাক্ট পছন্দ হলে ক্রেতারা সরাসরি ফোনে বা মেইলে বলেন তিনি কী চান এবং কোন প্রডাক্ট কত পরিমাণ, কত টাকায় এবং কতদিনে তৈরি করে দিতে হবে। এরপর উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনাসাপেক্ষে কাজটি সম্পাদন করা হয়।

কাজ করতে গিয়ে এই ই-কমার্স উদ্যোক্তাকে প্রতিনিয়তই নানান ধরনের সমস্যা/প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। নাজমুন বলেন, সংসার, ছেলেমেয়ের লেখাপড়া, এক্সাম, মেয়ের নাচের প্রোগ্রাম প্রাকটিস, নিজের ছোট্ট বিজনেসে সময় দেয়া, নতুন অর্ডার নেয়া, পুরানো অর্ডারগুলোর কাজ মনিটরিং করা, আবার অর্ডারগুলোর কাজ কারিগরকে গিয়ে বুঝিয়ে দেয়া ইত্যাদি। এছাড়া আমরা যারা অনলাইন ই-কমার্স বিজনেস করি তাদের আবার ফটোগ্রাফিও করতে হয়। নতুন প্রডাক্টসের ছবি তুলে এডিট করা, তারপর প্রডাক্ট যেন কপিরাইট না হয় সেজন্য ছবিতে নাম ট্যাগ করা। সাথে প্রডাক্ট ডিটেলসও দিতে হয়। এছাড়া নোটিফিকেশন চেক, মেসেজ রিপ্লাই, কাস্টমার কনভারসেশন তো আছেই। এসব কাজ পরিকল্পিতভাবে করাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আর এর মুখোমুখি হচ্ছি প্রতিদিন। কোনো দিকে একটু অবহেলা করলেই বিজনেসের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।

নাজমুন নাহার বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক হচ্ছে নারী। দেশের উন্নয়নে নারীরা এখন পুরুষের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের মতোই সফল হচ্ছেন। আমি মনে করি, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নারীদের জন্য ই-কমার্স আশীর্বাদস্বরূপ হতে পারে। কারণ ই-কমার্সের মাধ্যমে ঘরে বসে বিভিন্ন ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিজ হাতে তৈরি করে বিক্রি করার সুযোগ রয়েছে। শুধু একটু প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করা যায় এই প্লাটফর্ম। এ সেক্টরে নারীরা সংসার সামলানোর সাথে সাথে ঘরে বসেই আয় করার সুযোগ পাবেন। এতে করে নারীরা যেমন স্বাবলম্বী হতে পারবেন তেমনি আবদান রাখতে পারবেন দেশের অর্থনীতিতেও।

যারা এই ক্যারিয়ার শুরু করতে চান তাদের উদ্দেশে এই উদ্যোক্তা বলেন, যারা ই-কমার্স সেক্টরে কিছু করার কথা ভাবছেন তাদের বলছি, প্লিজ আর সময় নষ্ট না করে এখনি শুরু করুন নিজের স্বপ্নের সাথে পথ চলা। এই সেক্টরের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। কারণ আমি নামমাত্র পুঁজি নিয়ে আমার বিজনেস শুরু করেছিলাম। এখন ভালো একটা অবস্থানে আছি। ইনশাআল্লাহ অদূর ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু করব আশা করছি।

অনলাইনে জুয়েলারি ব্যবসার প্রসার এবং বিশ্বস্ত একটি ব্রান্ড তৈরি করতে তিনি কঠিন প্রতিজ্ঞা নিয়ে কাজ করছেন। নাজমুনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তো অনেক বড়। দেশের বেকার নারীদের ফ্যাশান ডিজাইনে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ করে দিতে চান তিনি। স্বপ্ন দেখেন এই ‘NAAZ’ একদিন দেশীয় ব্র্যান্ডের নামের সারিতে যোগ হবে। ‘NAAZ’ ব্র্যান্ডের প্রোডাক্টস পরে নামিদামি মডেলরা রাস্তার পাশে বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন দিবে। দেশে-বিদেশে এর সুনাম ছড়াবে। আড়ং-এর মতো সবাই আমার প্রতিষ্ঠানকে এক নামে চিনবে।

Leave Your Comments