সারা দিন দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে চলে সংঘর্ষ, আহত ২০

প্রকাশ: সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একটি গ্রামের দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

সোমবার  দিনজুড়ে উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের খাদুরাইল গ্রামে থেমে থেমে এ সংঘর্ষ চলে। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে যৌথ বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহত ব্যক্তিরা বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এ ঘটনায় উভয়পক্ষের চারজনকে আটক করেছে পুলিশ‌‌। তাঁরা হলেন রুবেল মিয়া (৩৮), শাকিল মিয়া (২২), মধু মিয়া (৩৫) ও হাবিবুর রহমান (৪২)।

স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইছাপুরা ইউনিয়নের খাদুরাইল গ্রামে ইউপি নির্বাচন ও সালিসে নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলাম, উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব পদ থেকে বহিষ্কৃত ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান ওরফে লিটন মুন্সী এবং ইছাপুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তার হোসেনের ভাই মোশারফ হোসেন। অপর পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক শফিক রায়হান ওরফে শ্রাবণ ও স্থানীয় বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন।

 পূর্ববিরোধের জেরে রবিবার রাতে এই দুই পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিরোধ মেটাতে সমঝোতার জন্য উভয় পক্ষ থেকে পাঁচজন করে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে আজ সকাল ১০টায় বিজয়নগর থানায় আসতে নির্দেশ দেয় পুলিশ। আজ সকাল ৯টার দিকে উভয় পক্ষের লোকজন দেশি অস্ত্র, রামদা, বল্লম, ছুরি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। থেমে থেমে বেলা তিনটা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে।

সংঘর্ষ চলাকালে বেশ কয়েকজনের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাধনা ত্রিপুরা খাদুরাইল গ্রামে পৌঁছান। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে যৌথ বাহিনী এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন।

আহত ব্যক্তিরা হলেন শফিক-গিয়াস পক্ষের আমসু মিয়া (২৪), আকবর মিয়া (৫০), বকুল মিয়া (২৮), মোনায়েম খাঁ (৩৭), রঙ্গু মিয়া (৩৮), মনির হোসেন (৩৫), তোফাজ্জল মিয়া (৩৫), সাইফুল ইসলাম (২৫) এবং আমিনুল-মোখলেছুর-মোশারফ পক্ষের মরম ইসলাম (৩৫), জাকির হোসেন (৩৩), লিটন মিয়া (৩৩), আতিক মিয়া (২৫), রহিছ মিয়া (৫৫), মহরম আলীর স্ত্রী (২৮, নাম জানা যায়নি)। আহত অন্যদের নাম এবং কে কোন পক্ষের, তা জানা যায়নি। আহত সবাই বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক শফিক রায়হান বলেন, ‘আমার দুই ভাই জহিরুল ইসলাম ও তাজুল ইসলাম এবং আমার বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এসি, টেলিভিশন, আসবাবসহ ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার মালামাল লুট হয়েছে।’

ইছাপুরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও ইউপি সদস্য আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘উভয় পক্ষ থেকে পাঁচজন করে ব্যক্তিকে আজ সকাল ১০টায় থানায় যেতে নির্দেশ দেয় পুলিশ। অথচ আজ সকাল ৯টার দিকে প্রতিপক্ষের লোকজন কারণ ছাড়াই হামলা করে সংঘর্ষে জড়ান। আমি যেকোনো মূল্যে আপস করতে রাজি আছি।’

বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ইউপি সদস্য আমিনুল ইসলাম ও শফিক রায়হান পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানা-পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

আপনার মতামত দিন