ইয়ামাহা বাংলাদেশের কাছ থেকে কোনো প্রকার অফিসিয়াল অনুমতি না নিয়েই দীর্ঘ দিন ধরে ইয়ামাহা বাইকে নানান ধরনের অফার দিয়ে ব্যবসা করার অভিযোগ উঠেছে ইভ্যালির বিরুদ্ধে।
ইভ্যালির নিজেদের প্রমোশনের জন্য ইয়ামাহার মতো কোনো আন্তর্জাতিক জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের অনুমতি না নিয়েই এভাবে অফার চালানোটা ব্র্যান্ডের নীতি বিরোধী কাজ বলে অভিযোগ করছে ইয়ামাহা বাংলাদেশ।
দেশীয় ই-কমার্স ইভ্যালি দীর্ঘ দিন ধরে বিনা অনুমতিতে নানান ধরনের আকর্ষণীয় অফারের নামে ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের বাইক বিক্রি করে আসছে। কোনো প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসায়িক চুক্তি ছাড়াই আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ইয়ামাহার লোগো ব্যবহার করে দিনের পর দিন ব্যবসা করছে ইভ্যালি।
বিশেষ দিবস উপলক্ষে ইভ্যালির দেয়া বিভিন্ন আকর্ষণীয় অফারের ফাঁদে পড়ে গ্রাহকরা প্রচুর পরিমাণে ইয়ামাহার বাইক বুকিং দিয়েছিল এবং তাদের বড় অঙ্কের টাকা প্রতিষ্ঠানটিতে আটকে থাকার কারণে আগে সব অফারের বাইকগুলো গ্রাহকদের ডেলিভারি দেয় ইয়ামাহা বাংলাদেশ।
ইভ্যালি এভাবে অফারের ফাঁদে ফেলে গ্রাহকদের টাকা দিনের পর দিন আটকে রাখার ফলে হতাশ গ্রাহকরা বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে মনের ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। বিষয়টি ইয়ামাহা বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে অপেক্ষায় থাকে ইভ্যালির পক্ষ থেকে নতুন অফার ঘোষণার।
ঈদ উপলক্ষে গত ৮ মে সকালে আবারো ইভ্যালির অফিসিয়াল পেজ ইভ্যালি.কম.বিডিতে ইয়ামাহা বাইকে ক্যাশব্যাক অফারের ঘোষণা দেয়া হয়। ওই অফারের ঘোষণায় জানানো হয়, টাইম ফর ইয়ামাহা। ঈদ মেলায় ইয়ামাহা পাওয়া যাবে ৬০% পর্যন্ত ক্যাশব্যাকে। আগামী ১১ মে রাত ৯টায় চোখ রাখুন ইভ্যালিতে।
অফারটি দেখে ইয়ামাহা বাংলাদেশ ইভ্যালির সাথে যোগাযোগ করে অফারটি স্থগিত করার চাপ দিলে ওই দিন সন্ধ্যায় ইভ্যালি অফিসিয়াল পেজে কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল অফারটি স্থগিতের ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণায় তিনি ইভ্যালির অফিসিয়াল পেজে জানান, ইয়ামাহার অফারটি স্থগিত করা হয়েছে।
অফিসিয়ালিভাবে ইয়ামাহা বাইকে ক্যাশব্যাক অফারের ঘোষণা দিয়ে হঠাৎ করে ইভ্যালি কেন আবার বন্ধ করে দিলো, বিষয়টি নিয়ে ইয়ামাহা বাংলাদেশের সাথে যোগাযোগ করা হলে বেরিয়ে আসে আসল খবর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইভ্যালির সাথে ইয়ামাহা বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসায়িক কোনো চুক্তিই নেই। সারা পৃথিবীতেই ইয়ামাহা একটি নামকরা ব্র্যান্ড এবং তাদের মতে ইভ্যালি নিজেদের প্রমোশনের জন্য ইয়ামাহা বাইকে এরকম আকর্ষণীয় ক্যাশব্যাক দিয়ে ডিলারের কাছ থেকে বাইকগুলো মার্কেট প্রাইসে কিনে নেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক ইয়ামাহা বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ইভ্যালি প্রথম থেকেই ইয়ামাহার বাইক নিয়ে বেশকিছু অফার চালিয়েছে। কিন্তু অফার ঘোষণা দেয়ার আগে কোম্পানির সাথে একবারও অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। তারপরও যেহেতু হঠাৎ করে ইভ্যালি প্রচুর সংখ্যক ইয়ামাহার বাইক বুকিং নিয়েছিলো এবং গ্রাহকের টাকা তাদের কাছে আটকে ছিল, তাই ভুক্তভোগী গ্রাহকদের কথা চিন্তা করে ইয়ামাহা বাংলাদেশ বাইকগুলো ডেলিভারি দেয়।
কারণ হিসেবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ইভ্যালির বাইক তারা কবে ডেলিভারি দেবে প্রতিদিন এ ধরনের ইয়ামাহা বাংলাদেশের কাছে আসতো হাজারো ফোন কল এবং মেসেজ। এছাড়াও বিভিন্ন বাইকিং কমিউনিটিতেও দেখা গেছে অনেকের টাকা জমা দেয়ার তিন-চার মাস পার হয়ে গেলেও ওই ভুক্তভোগী গ্রাহক বাইক হাতে পাচ্ছেন না। এতে করে মানুষের ধারণা সৃষ্টি হয় ইয়ামাহা বাংলাদেশ ইভ্যালিকে ঠিক মতো বাইক ডেলিভারি দিচ্ছে না।
ওই সূত্রমতে, ইয়ামাহা যখন দেখলো ইভ্যালি তাদের ব্র্যান্ডের অফিসিয়াল কোনো প্রকার অনুমতি না নিয়েই ঈদ উপলক্ষে গত ৮ মে ইয়ামাহা বাইকের ক্যাশব্যাক অফার চালাচ্ছে, তখন ইয়ামাহা বাংলাদেশ ইভ্যালির সাথে যোগাযোগ করে অফারটি স্থগিত করার চাপ দিলে ওই দিন সন্ধ্যায় ইভ্যালি অফিসিয়াল গ্রুপে কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অফারটি স্থগিতের ঘোষণা দেন।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, বাংলাদেশে এখন খুব খারাপ একটা অবস্থা চলছে। টাকা বুকিং নিয়ে ইভ্যালি ডেলিভারি দিতে দেরি করলে সেই চাপটা ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের উপরেই এসে পড়বে। এছাড়া ইভ্যালির নিজেদের প্রমোশনের জন্য কোনো নামিদামি ব্র্যান্ডের অনুমতি না নিয়েই এভাবে অফার চালানোটা ব্র্যান্ডের নীতি বিরোধী কাজ। এতে করে ব্র্যান্ডের প্রতি কাস্টমারের মনোবল হারায়। দেশের এই দুঃসময়ে এক একজন বাইকার টাকা জমা দিয়ে পরবর্তীতে দিনের পর দিন স্বপ্নের বাইকটি হাতে পাওয়া নিয়ে টেনশনে থাকুক সেটি চায় না ইয়ামাহা।
তিনি বলেন, ডেলিভারির বিষয়টি ইভ্যালি প্রকাশ্যে আগে থেকে কাস্টমারদের অফারের মত কনফার্ম করতে পারলে ইয়ামাহা বাংলাদেশ তা বিবেচনা করবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
নিয়ম না মেনে কোনো প্রতিষ্ঠানের লোগো ব্যবহার করা ইভ্যালির এটাই প্রথম না। এর আগে গত ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে মুজিববর্ষের যে লোগো ব্যবহারের নীতিমালা প্রকাশ করা হয় সেটি অমান্য করে ইভ্যালির অফিসিয়াল পেজে এক অফার ঘোষণা করা হয়।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে দেয়া ওই অফারে উল্লেখ করা হয় ইভ্যালিতে রেজিস্ট্রেশনকারী দেয়া হবে ১০০ টাকায় একটি পোলো টি-শার্ট এবং একটি ইয়ারফোন। ওই অফারের শর্ত হিসেবে বলা হয় আগ্রহী গ্রাহককে ইভ্যালির অ্যাপ ডাউনলোড করে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। শুধু নতুন রেজিস্ট্রেশনকারীদের মধ্য থেকে ইভ্যালি অ্যাপ থেকে অর্ডার করা প্রথম ৩০ হাজার গ্রাহককে দেয়া হবে ১০০ টাকায় একটি পোলো শার্ট এবং একটি ইয়ারফোন। অফারটি চলবে ১৭ মার্চ পর্যন্ত।
বিষয়টি নিয়ে জাতীয় অনলাইন নিউজপোর্টাল বিবার্তা২৪ডটনেটে ‘মুজিববর্ষ নিয়েও ব্যবসা করছে ইভ্যালি’ শিরোনামে একটা নিউজ করা হলে পরে অফারটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
এই বিষয়ে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে এ বিষয়ে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেলের পক্ষে বিবার্তাকে প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ বিভাগ থেকে লিখিত বক্তব্য দেয়া হয়।
সেখানে মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ইভ্যালি এসএমই এবং শো-রুমভিত্তিক ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম। বিভিন্ন ব্র্যান্ড সরাসরি এবং বিভিন্ন শো-রুম আমাদের এখানে ভার্চুয়ালি পণ্য বিক্রি করে থাকে। আমরা তাদের সেলসকে ত্বরান্বিত করতে মার্কেটপ্লেস হিসেবে কাজ করি। তবে ব্র্যান্ড ভ্যালুতে আঘাত হয় এমন কিছুই আমরা করি না।
আমাদের অফারের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রি যদি বৃদ্ধি পায় এতে সেই ব্র্যান্ডই উপকৃত হয়। আমরা ব্র্যান্ডদেরকেও অনুপ্রাণিত করি এবং তাদের কাছেও সুযোগ আছে সরাসরি আমাদের সাথে ট্যাগ হওয়ার। একই সাথে এটাও বুঝতে হবে যে, অনুমোদিত পরিবেশক এবং শো-রুমের সাথে ব্র্যান্ডের সরাসরি চুক্তি থাকে। আমরা তেমনই শো-রুম থেকে পণ্য নেই। কাজেই সেদিক থেকেও বিষয়টিকে ভিন্নখাতে দেখার সুযোগ নেই।
প্রতিবেদনটি বিবার্তায় প্রকাশ হয়েছে। দেখতে যেতে হবে
এই ঠিকানায়।