ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে আবারও ঊর্ধ্বমুখী ধারা গড়েছে বিটকয়েন। রবিবার মার্কিন বাজারে এর মূল্য লাফিয়ে উঠে ১,২৫,২৪৫.৫৭ ডলার, যা বিটকয়েনের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড। আগের দিনের তুলনায় এই বৃদ্ধি প্রায় ২ দশমিক ৭ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি-এর প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
আগস্টে আগের রেকর্ড, এবার সেটিও ছাড়িয়ে গেল
চলতি বছরের আগস্টের মাঝামাঝি বিটকয়েনের দাম সর্বোচ্চ ১,২৪,৪৮০ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অনুকূল নীতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাড়তি চাহিদা দাম বাড়ানোর পেছনে ভূমিকা রেখেছিল। তবে এবারের বৃদ্ধিতে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ইটিএফে বিনিয়োগ প্রবাহ ও শেয়ারবাজারের উত্থান যা পুরো ক্রিপ্টো ইকোসিস্টেমে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
টানা আট দিনের উত্থান
গত শুক্রবার পর্যন্ত টানা অষ্টম দিন ধরে বেড়েছে বিটকয়েনের দাম। মার্কিন শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রবণতা, বিটকয়েন এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডে (ETF) বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং ডলারের দুর্বলতা, সবকিছু মিলে এই ধারাবাহিক উত্থানের পেছনে ভূমিকা রাখছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে সম্ভাব্য সরকারি অচলাবস্থার আশঙ্কায় অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশে বিলম্ব ঘটেছে, যা বাজারে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।
অনিশ্চয়তার মধ্যেও বিনিয়োগকারীদের আস্থা
বাজারে অনিশ্চয়তা থাকলেও বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদের দিকে ঝুঁকছেন। এ কারণেই বিটকয়েনের চাহিদা বাড়ছে। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় অনেকেই ক্রিপ্টো সম্পদে আশ্রয় নিচ্ছেন। শেয়ারবাজার ও ক্রিপ্টো উভয়ের উত্থান একে অপরকে সহায়তা করছে, যার ফলে বিটকয়েনের বাজারমূল্য স্থিতিশীলভাবে বাড়ছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর পরিবার দীর্ঘদিন ধরেই ক্রিপ্টোকারেন্সির বড় সমর্থক। তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে একাধিক ক্রিপ্টো উদ্যোগে জড়িত, যা ট্রাম্প পরিবারের সম্পদ বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখছে। ট্রাম্প প্রশাসন ডিজিটাল সম্পদ গ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ক্রিপ্টো শিল্পের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে। তাঁর আমলে প্রতিনিধি পরিষদে পাস হয়েছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রিপ্টো বিল, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বাজারে স্থিতিশীলতা এনেছে।
ডলারের দুর্বলতা এবং বিনিয়োগ প্রবণতা
ডলারের অবমূল্যায়নের আশঙ্কা ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। বড় মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দর বহু সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে নিচে নেমে গেছে। ক্রিপ্টো প্রাইম ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান ফ্যালকনএক্স-এর মার্কেট বিভাগের সহপ্রধান জোশুয়া লিম বলেছেন, “যখন শেয়ারবাজার, সোনা এমনকি সংগ্রহযোগ্য কার্ড পর্যন্ত সর্বোচ্চ দামে পৌঁছাচ্ছে, তখন বিটকয়েনের বৃদ্ধি অবাক করার মতো নয়। ডলারের অবমূল্যায়নের আশঙ্কাই এই প্রবণতার মূল কারণ।”
ভবিষ্যৎ কী বলছে
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিটকয়েনের এই ধারাবাহিক উত্থান রাজনৈতিক পরিবেশ, আর্থিক নীতি, ও প্রাতিষ্ঠানিক গ্রহণযোগ্যতার ওপর নির্ভর করছে। যদিও বর্তমান প্রবণতা ইতিবাচক, তবুও বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকি রয়ে গেছে বিশেষত বাজার অস্থিরতা, নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর পরিবর্তন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের নীতি এই বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিটকয়েনের নতুন এই রেকর্ড কেবল একটি সংখ্যার মাইলফলক নয়, এটি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্রমবর্ধমান প্রভাবেরও প্রতিফলন। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেমনই হোক, বিনিয়োগকারীরা এখন ক্রিপ্টো বাজারকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন এবং বিটকয়েন সেই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে। সূত্র: ব্লুমবার্গ