গুগল ডিপমাইন্ডের নতুন এআই ল্যাব: এশিয়ায় গবেষণা ও সহযোগিতার নতুন অধ্যায়

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png নিজস্ব প্রতিবেদক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

গুগল ডিপমাইন্ড (Google DeepMind) সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে তারা সিঙ্গাপুরে একটি নতুন এআই (Artificial Intelligence) গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করছে, যা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে তাদের উপস্থিতি আরও শক্তিশালী করবে। 

সম্প্রসারণের পটভূমি ও কারণ
>>ডিপমাইন্ড কর্তৃক জানানো হয়েছে যে, গত এক বছরের মধ্যে তাদের এশিয়া-প্রশান্ত (APAC) ভিত্তিক দল দ্বিগুণ হয়েছে, যা তাদের এ অঞ্চলের দৃষ্টিতে দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকারকে নির্দেশ করে। 

>>সিঙ্গাপুর নির্বাচন করা হয়েছে কারণ এটি নীতিগতভাবে অগ্রগামী; “National AI Strategy 2.0” ও “Smart Nation 2.0” এর মতো ন্যাশনাল এআই এবং ডিজিটাল পরিকল্পনা রয়েছে। 

>>এছাড়া, বঙ্গবন্ধু অবস্থানে সিঙ্গাপুর রয়েছে বৈচিত্র্যময় ভাষা ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের জন্য,  যা এআই রিসার্চের ক্ষেত্রে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক অন্তর্ভুক্তি (inclusivity) নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ। 

গবেষণা ফোকাস ও অগ্রাধিকার
ডিপমাইন্ডের সিঙ্গাপুর ল্যাবের পরিকল্পিত গবেষণা বিষয়গুলো বেশ স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা তাদের “পরিবর্তনশীল প্রভাব (impact)” মডেলকে প্রতিফলিত করে:

>>শিক্ষা (Education): কৌশলগতভাবে এআই সরঞ্জাম তৈরির দিকে মনোনিবেশ করা হবে যা শিক্ষার্থীদের শেখার ও সৃজনশীলতার সক্ষমতা বাড়ায়।

>>স্বাস্থ্যসেবা (Healthcare): এআই যেমন AlphaFold ও অন্যান্য মডেলগুলো ব্যবহার করে রোগ নির্ণয়, গবেষণা ও চিকিৎসার প্রক্রিয়াকে আরো দক্ষ ও সমন্বিত করার সম্ভাবনা অনুসন্ধান করা হবে। 
 
>>বিজ্ঞান (Science): বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারী সংস্থার সঙ্গে কাজ করে নানান বৈজ্ঞানিক চ্যালেঞ্জ (যেমন নিউরোসায়েন্স, বস্তুবিজ্ঞান) সমাধানে এআই-এর প্রয়োগ খুঁজে দেখা হবে। 

স্থানীয় ও আঞ্চলিক অংশীদারিত্ব
গবেষণা ল্যাবটি কেবল একটি রিসার্চ সেন্টার হিসেবে নয়, বরং একটি সহযোগী কল্পনা কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে, যেখানে গুগল ডিপমাইন্ড সরকার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, নাগরিক সমাজ এবং বিশ্বমানের একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অংশীদারিতে কাজ করবে। 
 
যেমন, গিন্টেক নিম্নলিখিত অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার পরিকল্পনা করছে: সিঙ্গাপুরের GovTech, CSA (Cyber Security Agency), IMDA (Infocomm Media Development Authority)। 
 
ভাষাগত গবেষণার ক্ষেত্রে তারা AI Singapore-এর সঙ্গে “Project Aquarium” নামে একটি ওপেন-ডেটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভাষাগত বৈচিত্র্যকে একত্রিত করতে সক্ষম। 
 
“SEA-LION” নামক একটি মডেল পরিবার তৈরি করার চেষ্টা চলছে, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক প্রসঙ্গে উপযুক্ত বড় ভাষার মডেল (LLM) হিসেবে কাজ করবে। 
 
প্রভাব ও সম্ভাবনা
নতুন ল্যাবের মাধ্যমে গুগল ডিপমাইন্ড এশিয়ায় শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ঘটাবে না, বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহন করবে।

>>শিক্ষা ক্ষেত্রে, AI-চালিত টুলগুলোর মাধ্যমে ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়ানো যাবে এবং শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নত করা সম্ভব হবে। 

>>স্বাস্থ্যসেবায়, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হতে পারে। বিশেষ করে এমন দেশে যেখানে চিকিৎসা সংস্থান সীমিত।

বৈজ্ঞানিক গবেষণা উন্নত হবে: স্থানীয় গবেষকরা গ্লোবাল মডেল ও ইনফ্রাসট্রাকচার-সহযোগিতার মাধ্যমে বড় স্কেলের গবেষণা চালাতে পারবে। সাংস্কৃতিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি পাবে, কারণ ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক ভ্যারিয়েশনকে এআই মডেলে আরও ভালোভাবে রিফ্লেক্ট করার চেষ্টা করা হবে।

চ্যালেঞ্জ এবং উদ্বেগ
তবে এই উদ্যোগে কিছু সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জও রয়েছে। সেগুলো হলো-

>>নিয়োগ এবং প্রতিযোগিতা: উচ্চকুয়ালিটি গবেষণা বিজ্ঞানীদের জন্য দক্ষ প্রতিযোগিতা থাকতে পারে, কারণ এআই-ট্যালেন্টের জন্য সার্বক্ষণিক চাহিদা বাড়ছে। 

>>নৈতিক দৃষ্টিকোণ: ভাষাগত, জনসংখ্যাগত ও সাংস্কৃতিক পক্ষপাত (bias) কমাতে হলে মডেল ডিজাইন ও ডেটা ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

>>গবেষণা বনাম বাস্তব প্রয়োগ: মৌলিক গবেষণা ও প্র্যাকটিক্যাল রূপান্তরের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রাখা বড় চ্যালেঞ্জ; গবেষণা যতই গভীর হোক, যদি সেটা বাস্তব জীবনে কাজে না লেগে থাকে, তাহলে প্রভাব সীমিত হতে পারে।

>>গ্লোবাল ও স্থানীয় নীতিমালা: AI-ডেটা শেয়ারিং, প্রাইভেসি ও নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণে ভিন্ন দেশে ভিন্ন আইন থাকতে পারে; গুগলকে এসব নিয়ম মেনে চলতে হবে।

ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি 
গুগল ডিপমাইন্ডের এই ল্যাব শুধু গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকবে না; এটি এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলের এআই ইকোসিস্টেম গড়ার একটি শক্তিশালী প্রতীক হয়ে উঠতে পারে। স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়, স্টার্টআপ ও সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে গ্লোবাল মানের এআই মডেল এবং প্রজেক্ট তৈরি হবে।

শিক্ষার্থীদের জন্য AI প্রো প্ল্যান বা এক্সেস সুবিধা বাড়ানো যেতে পারে, যা ভবিষ্যৎ গবেষক ও উদ্ভাবকদের উৎসাহ দেবে। সূত্র: টিএন গ্লোবাল, নিউজ এশিয়া ও রয়টার্স

image

আপনার মতামত দিন