কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা জগতে আলো ছড়াচ্ছেন যেসেব নারী

প্রকাশ: রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪
Image টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
news-banner
  ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিককালে আলোড়ন তোলা এআই প্রযুক্তি বিকাশে শুধু পুরুষদের একারই অবদান আছে, বিষয়টি মোটেও এমন নয়। বেশ কিছুদিন ধরেই, যুগান্তকারী এ খাতে নারীদের অবদান তুলে ধরে ‘উইমেন ইন এআই’ নামের সিরিজ প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট টেকক্রাঞ্চ।

এতে ৩০ জনের বেশি এমন নারীর কথা উঠে এসেছে, যারা এ খাতে পুরুষদের মতোই সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন। সেখান থেকে পাঁচ জনের কথা আছে এ প্রতিবেদনে।

এমিলিয়া গোমেজ
ইউরোপীয় কমিশনের জয়েন্ট রিসার্চ সেন্টার-এর প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা এমিলিয়া গোমেজ। এর পাশাপাশি, ইউরোপে এআই বিকাশ ও এর সম্ভাব্য প্রভাব মনিটরিং করা ইসি’র উদ্যোগ ‘এআই ওয়াচ’-এর বৈজ্ঞানিক সমন্বয়ক হিসেবেও কাজ করছেন তিনি। তার গবেষণা দল ইউরোপীয় কমিশনের এআই নীতিমালা নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক ও প্রযুক্তিগত ধারণা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে, যার মধ্যে রয়েছে সম্প্রতি প্রস্তাব করা ‘এআই অ্যাক্ট’ও।

গোমেজের গবেষণা আসলে কম্পিউটেশনাল মিউজিক ঘিরে, যেখানে মানুষের ডিজিটাল উপায়ে মডেল করা মিউজিক ব্যাখ্যা করার বিভিন্ন উপায় ও পদ্ধতি খতিয়ে দেখার কাজ করেন তিনি। মিউজিক ডোমেইন থেকে শুরু করে মানব আচরণে এআইয়ের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়েও তদন্ত করেন গোমেজ, বিশেষ করে চাকরি, সিদ্ধান্ত নেওয়া, শিশুর জ্ঞানীয় ও আর্থ-সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে।

সিআইএ’র এআই প্রধান লাক্সমি রামান
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর এআই পরিচালক হয়ে ওঠার পথচলা ও সংস্থাটির এআই ব্যবহার নিয়ে লাক্সমি রামানকে প্রশ্ন করেছে টেকক্রাঞ্চ, যেখানে নতুন প্রযুক্তিকে দায়িত্বশীল উপায়ে আপন করে নেওয়ার ক্ষেত্রে যে ভারসাম্য প্রয়োজন, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরেই গোয়েন্দা সংস্থাটিতে কাজ করছেন রামান। ২০০২ সালে তিনি একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে সিআইএ’তে নিয়োগ পেয়েছিলেন, যার আগে ‘ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় আরবানা-শ্যাম্পেইন’ থেকে স্নাতক ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো’র কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি। এর বেশ কয়েক বছর পর, সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা বিভাগে পাড়ি জমান তিনি। আর পরবর্তীতে গিয়ে, ডেটা সায়েন্স নিয়ে সিআইএ’র সামগ্রিক কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেন তিনি।

রামান বলছেন, সিআইএ’তে পূর্বসূরী হিসেবে নারীদেরকে রোলমডেল হিসেবে পাওয়ায় তিনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন, যেখানে সংস্থাটি ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষ নিয়ন্ত্রিত।

ড. রেবেকা পোর্টনফ
অলাভজনক সংস্থা ‘থর্ন’-এর ডেটা সায়েন্স বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. রেবেকা পোর্টনফ। সংস্থাটি এমন প্রযুক্তি বিকাশের কাজ করে, যা শিশুদের যৌন নিপীড়নের বিপরীতে সুরক্ষা দেয়।

প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি’তে পিএইচডি করার আগে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে’র কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেন তিনি। আর তিনি থর্ন-এ কাজ করছেন ২০১৬ সাল থেকে।

প্রাথমিকভাবে স্বেচ্ছাসেবক গবেষণা বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ শুরু করলেও এখন আট বছর পর তিনি এমন এক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যা হয়ত বিশ্বের একমাত্র দল, যারা শিশুর যৌন নিপীড়ন ঠেকানোর মতো মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিকাশে কাজ করছে।

তিনি বলেন, প্রিন্সটনে সময় কাটানোর সময় আমি ভেবেছি, স্নাতক পাশের পর কী করা যায়। এর পর আমার বোন আমাকে নিকোলাস ক্রিস্টফ এবং শেরিল উডুনের লেখা ‘হাফ দ্য স্কাই’ বইটি পড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন, যা আমাকে শিশু যৌন নিপীড়ন, এই বিষয়টি সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।

তিনি আরও যোগ করেন, এমন মনোভাব কীভাবে বদলানো যায়, তাকে সে বিষয়ে গবেষণা করার অনুপ্রেরনাও যুগিয়েছে বইটি।

কেট ডেভলিন
কেট ডেভলিন কিংস কলেজ লন্ডন-এর এআই ও সমাজ বিভাগের প্রভাষক। এ ছাড়া, ‘টার্নড অন: সায়েন্স, সেক্স অ্যান্ড রোবটস’ নামের একটি বইও লিখেছেন তিনি, যেখানে প্রযুক্তি ও অন্তরঙ্গতার নৈতিক ও সামাজিক প্রভাব পরীক্ষা করে দেখা হয়। এতে ডেভলিন খতিয়ে দেখেছেন, মানুষ কীভাবে অতীত ও ভবিষ্যৎ উভয় সময়ের প্রযুক্তির বিপরীতে আচরণ করে থাকে।

২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের প্রথম ‘সেক্স টেক হ্যাকাথন’-এ অংশ নিয়েছেন তিনি, যা ‘সামাজিকভাবে লাভজনক’ রোবটিক ও এআই ব্যবস্থা বিকাশ সমর্থন করা অলাভজনক প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রাস্টেড অটোনমাস সিস্টেমস হাব’-এর একটি উদ্যোগ। এ ছাড়া, অধিকার সংগঠন ‘ওপেন রাইটস গ্রুপ’-এর পর্ষদ সদস্যও তিনি, যারা ডিজিটাল অধিকার ও স্বাধীনতা সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্যে কাজ করে থাকে।

মুটালে এনকন্ডে
অলাভজনক সংস্থা ‘এআই ফর দ্য পিপল’-এর প্রতিষ্ঠাতা সিইও হলেন মুটালে এনকন্ডে, যাদের লক্ষ্য প্রযুক্তি খাতে কৃষ্ণাঙ্গ অংশগ্রহন বাড়ানো। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টিভস-এর কাছে ‘অ্যালগরিদমিক অ্যান্ড ডিপ ফেইকস অ্যালরিদমিক অ্যাক্টস’ ও ‘নো বায়োমেট্রিক ব্যারিয়ারস টু হাউজিং অ্যাক্ট’ নামের দুটি আইন প্রণয়নে সহায়তা করেছেন তিনি। বর্তমানে অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউট-এর ভিজিটিং পলিসি ফেলো হিসেবে কাজ করছেন তিনি।  সূত্র: টেকক্রাঞ্চ
 

image

আপনার মতামত দিন