পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি যেমন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে অবদান রাখছে, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তাজনিত দুর্বলতা উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি এক ঘটনায় এমন প্রযুক্তির মাধ্যমেই জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা প্রযুক্তির অন্ধ নির্ভরতার ঝুঁকি সামনে নিয়ে এসেছে।
সোলার প্যানেল: শুধু বিদ্যুৎ নয়, নিরাপত্তা ঝুঁকিও
বাড়ির ছাদে সৌর প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয় এবং পরিবেশবান্ধব জীবন যাপন – বিষয়টা শুনতে যেমন ইতিবাচক, বাস্তবে সেটি এখন আর শুধু আলো বাঁচানোর গল্প নয়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে এমন একটি ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে একটি সোলার ইনভার্টার জাতীয় নিরাপত্তার জন্যই হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।
সমস্যার উৎস: ইজি ৪ ইলেকট্রনিকসের ইনভার্টার
যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা সিসা সম্প্রতি জানিয়েছে, টেক্সাসভিত্তিক কোম্পানি ইজি৪ ইলেকট্রনিকস-এর তৈরি একটি সোলার ইনভার্টার মডেলে গুরুতর নিরাপত্তা ত্রুটি রয়েছে। এই ইনভার্টারের মাধ্যমে হ্যাকাররা ব্যবহারকারীর সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারে। সফটওয়্যার ইনস্টল করতে পারে। এমনকি পুরো বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উপর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে।
সোমবার জানানো হয়, এই ত্রুটির কারণে প্রায় ৫৫ হাজার গ্রাহক ঝুঁকিতে রয়েছেন। ভয়াবহ ব্যাপার হলো, কোম্পানিটি তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহকদের এ বিষয়ে জানায়নি।
কোন কোন নিরাপত্তা ত্রুটি রয়েছে?
বিশেষজ্ঞরা যেসব দুর্বলতা চিহ্নিত করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে, ডেটা আদান-প্রদানে এনক্রিপশন ব্যবহৃত হয়নি। ফার্মওয়্যার আপডেটেও নিরাপত্তা যাচাই নেই। দূরবর্তী অ্যাক্সেসের মাধ্যমে ইনভার্টারে হস্তক্ষেপ সম্ভব। ইনভার্টারগুলো সরাসরি গ্রিডের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করে, যা সাইবার আক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ায়
বিষয়টা শুধু এক কোম্পানির সমস্যা নয়
ড্রাগোস নামের সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক জাস্টিন প্যাসকেল বলেন, ‘পাঁচ বছর আগেও কেউ জানত না ইনভার্টার কী। এখন এটা জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যু।’
যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাড়িভিত্তিক সৌর ইনস্টলেশনের সংখ্যা পাঁচ গুণ বেড়েছে। এর ফলে তৈরি হয়েছে একটি বিকেন্দ্রীকৃত বিদ্যুৎ গ্রিড, যা একযোগে আক্রান্ত হলে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটাতে পারে।
কে দায়ী?
ইজি ৪-এর প্রধান নির্বাহী জেমস শোল্টার বলেন, ‘এটি কেবল আমাদের না, বরং পুরো সেক্টরের সমস্যা।’ তবে কেন গ্রাহকদের শুরুতেই সতর্ক করা হয়নি, সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি এটিকে ‘বাঁচো আর শিখো’ অভিজ্ঞতা বলে এড়িয়ে যান।
নির্মাতা কোম্পানিই বড় ঝুঁকি?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে হ্যাকারদের লক্ষ্য শুধু সাধারণ ব্যবহারকারীরা নয়, বরং এই ইনভার্টার নির্মাতা কোম্পানিগুলোকেই বড় টার্গেট হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে। কারণ অনেক সময় নির্মাতারা তাদের ডিভাইসে দূরবর্তী প্রবেশাধিকার রাখেন, যা সহজ করে দেয় সাইবার আক্রমণ।
চীনা প্রযুক্তি নিয়ে বাড়ছে সন্দেহ
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে এমন কিছু সোলার ডিভাইসে অঘোষিত কমিউনিকেশন চিপ পাওয়া গেছে, যা আরও দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। বিশ্বের সোলার ইনভার্টার বাজারে শীর্ষে থাকা চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে, সানগ্রো ও সোলিস এসব বিষয়ে সরাসরি আলোচনায় এসেছে।
ইজি ৪ জানিয়েছে, তারা এখন থেকে চীনা যন্ত্রাংশ বাদ দিয়ে জার্মান সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভর করতে চায়।
সমাধান কী?
ইজি ৪ জানিয়েছে, তারা ১০টি চিহ্নিত দুর্বলতার মধ্যে ৭টি ইতিমধ্যে সমাধান করেছে এবং অক্টোবরের মধ্যে বাকি ৩টি সমাধান হবে বলে আশা করছে। তবে অনেক গ্রাহক এই ধীর প্রতিক্রিয়ায় অসন্তুষ্ট।
একজন ব্যবহারকারী হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ভেবে ইনভার্টার কিনেছিলাম। এখন দেখি, একটি জটিল সাইবার ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছি।’ সূত্র: দ্য ভার্জ, ব্লুমবার্গ