প্রযুক্তির জগতে আরেকটি বড় মাইলফলক ছুঁয়েছে যুক্তরাজ্য। উদ্বোধন করা হয়েছে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী এআই সুপার কম্পিউটার “ইসামবার্ড-এআই”। প্রায় ২২৫ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে নির্মিত এই সুপার কম্পিউটার চিকিৎসা থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা পর্যন্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীরা এই অসাধারণ যন্ত্রটি তৈরি করেছেন। এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী পিটার কাইল। এই প্রকল্প দেশটির এআই গবেষণা কর্মসূচির অংশ, যার মূল লক্ষ্য সরকারি সংস্থা ও গবেষকদের হাতে এমন কম্পিউটিং সুবিধা পৌঁছে দেওয়া, যা আগে কেবল বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কাছে ছিল।
কী কাজে লাগবে এই সুপার কম্পিউটার?
ইসামবার্ড-এআই মূলত বৃহৎ এআই মডেল প্রশিক্ষণ, জটিল বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও ডেটা বিশ্লেষণের জন্য তৈরি। এটি মানুষের পাশাপাশি প্রাণীর স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি এবং জননিরাপত্তার মতো খাতেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে। যেমন,
চিকিৎসা ক্ষেত্রে: ত্বকের ক্যানসার শনাক্ত, ডায়াগনস্টিক অ্যাপের ত্রুটি চিহ্নিতকরণ, আলঝেইমার ও হৃদ্রোগের গবেষণা।
প্রাণীস্বাস্থ্য: গাভির আচরণ বিশ্লেষণ করে দ্রুত রোগ শনাক্ত ও দুধ উৎপাদনে ক্ষতি কমানো।
জলবায়ু গবেষণা: আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও পরিবেশগত সিমুলেশন চালানো।
এআই গবেষণা: বৃহৎ ভাষা মডেল প্রশিক্ষণ এবং এআই নিরাপত্তা উন্নয়ন।
শক্তিশালী হার্ডওয়্যার: গতি এক লাখ গুণ বেশি। সাধারণ কম্পিউটারের তুলনায় ইসামবার্ড-এআই অসাধারণ গতিতে কাজ করতে সক্ষম। এতে রয়েছে প্রায় ৫,৪০০টি এনভিডিয়া সুপার চিপ। ৭২-কোর এনভিডিয়া গ্রেস সিপিইউ-এর সঙ্গে ১২০ গিগাবাইট মেমোরি।

এইচ১০০ জিপিইউ-তে রয়েছে ৯৬ গিগাবাইট এইচবিএম মেমোরি।
একটি সাধারণ ল্যাপটপের তুলনায় এটি ১,০০,০০০ গুণ বেশি দ্রুত হিসাব করতে পারে। তবে এই শক্তি ধরে রাখতে এর জন্য প্রতি মাসে প্রায় ১ মিলিয়ন পাউন্ড সমপরিমাণ পারমাণবিক বিদ্যুৎ ব্যয় হবে।
বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জন্য নতুন দিগন্ত
ইসামবার্ড-এআই চালু হওয়ার ফলে যুক্তরাজ্যের গবেষণা খাত নতুন গতি পাবে। বিজ্ঞানীরা এখন জটিল রোগ, আবহাওয়া ও পরিবেশগত পরিবর্তন কিংবা বড় ডেটা বিশ্লেষণ অনেক দ্রুত সময়ে করতে পারবেন। এটি শুধুমাত্র গবেষণার ক্ষেত্রেই নয়, বরং স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি ও জননিরাপত্তা, সব ক্ষেত্রেই প্রযুক্তিগত বিপ্লব ঘটাবে।
এই সুপার কম্পিউটারের নামকরণ করা হয়েছে ইসামবার্ড কিংডম ব্রুনেল-এর নামে, যিনি ব্রিটেনের অন্যতম বিখ্যাত প্রকৌশলী। প্রকল্পে অংশ নিয়েছে কনট্যুর অ্যাডভান্সড সিস্টেমস, এনভিডিয়া, আর্মসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
ভবিষ্যতের জন্য বড় বিনিয়োগ
এই সুপার কম্পিউটারটি এ বছরের শেষ দিকে গবেষক ও সরকারি সংস্থার জন্য উন্মুক্ত করা হবে। যুক্তরাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ দেশটির এআই গবেষণাকে আরও শক্তিশালী করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র: গার্ডিয়ান ও ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টল