ধর্মপল্লীতে বাণীসেবক ও বেদীসেবকদের সেমিনার

প্রকাশ: শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Image টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
news-banner
  ছবি: সংগৃহীত
 নবাই বটতলা ধর্মপল্লীর উদ্যোগে ‘মানবপুত্র সেবা পেতে নয়, সেবা করতে এসেছেন’- মূলসুরের উপর ভিত্তি করে ১১ সেপ্টেম্বর ধর্মপল্লীতে বাণীসেবক ও বেদীসেবকদের সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করে মনোনীত ২২ জন খ্রিস্টভক্ত।

অনুষ্ঠানসূচীতে ছিল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, বাণীর গান, বাণীপাঠ, ক্ষুদ্র প্রার্থনা, অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও পালক পুরোহিতের স্বাগত বক্তব্য।

উপাসনার বিভিন্ন গুরুত্ব দিক তুলে ধরতে গিয়ে ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত বলেন, উপাসনা হলো মণ্ডলীর পবিত্র রহস্য, একক ও দলীয় অর্থাৎ ঐশ জনগণের প্রার্থনা সভায় সক্রিয় অংশগ্রহণ হলো সত্য খ্রিস্টীয় আত্মার সর্বোত্তম ও অপরিহার্য করুণা ধারা। গীর্জাঘর হলো পবিত্র স্থান। এখানে ঈশ্বর থাকেন। আর আমাদের প্রভু যিশু যিনি রুটির আকারে সিন্দুকে উপস্থিত আছেন। আমরা যখন প্রতি রবিবারে মা-বাবার হাত ধরে গীর্জায় আসি তখন গীর্জায় প্রবেশের সময় আমরা সকলে মাথা নত  করে শ্রদ্ধা ও ভক্তিভরে যিশুর চরণে সম্মান প্রদর্শন করি। আর এর মধ্য দিয়ে ঈশ্বর, যিশু, মা-মারিয়া আমাদের প্রত্যেককে আশির্বাদ প্রদান করেন।

তিনি বলেন, আমরা খ্রিস্টযাগে যোগদানের মধ্য দিয়ে প্রভু যিশুকে গ্রহণ করে  থাকি। আর প্রভু যিশু আমাদের অন্তরে শান্তি দান করেন। পবিত্র ক্রুশমূর্তি হলো খ্রিস্টের যাতনাভোগ স্মরণের শ্রেষ্ঠ প্রতীক। এটি আমাদের পরিত্রাণের চিহ্ন। নিয়ম-সিন্দুক হলো এমন একটি স্থান যেখানে যিশুর দেহ রাখা হয়। অর্থাৎ রুটির আকারে  আমাদের প্রভু যিশু উপস্থিত আছেন। বাইবেল হলো ঈশ্বরের বাণী। ঈশ্বর নিজেকে এই বাইবেলের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছেন।

মণ্ডলীর মতে, বাইবেল ঈশ্বরের প্রেরণায় লিখিত হয়েছে। বাইবেল তিনটি ভাষায় সর্বপ্রথমে লেখা হয়, হিব্রু, গ্রীক ও যিশুর মাতৃভাষায় অর্থাৎ আরামায়িকে। বেদীর উপরেই যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বেদী পাথরের, মর্ম্মরের অথবা কাষ্ঠের দ্বারাই নির্মিত হয়ে থাকে। তবে কাষ্ঠের হলে বেদীর উপর পানপাত্র ও প্যাটেন রাখবার মতো একখানি পাথর গেঁথে দিতে হবে। খ্রিস্টের মৃত্যুর প্রতীক হিসেবে ক্রুশমূর্তি রাখা বেদীর উপর জরুরি। বেদীতে মোমবাতি রাখা হয়। এছাড়াও বেদীতে ফুল, কাপড় দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়। পানপাত্র এমন একটি জিনিস বা পাত্র যেখানে দ্রাক্ষারস রাখা হয়। যে ছোট রেকাবীতে পুরোহিত রুটি নিয়ে আসেন এবং প্রতিষ্ঠার পর যাহাতে খ্রিস্টান্ন/খ্রিস্টের দেহ স্থাপিত হয় তাকে প্যাটেন বলে। পিক্স এটি বিশেষত, রোগীদের উদ্দেশ্যে পবিত্র সংস্কার বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়।

মনষ্ট্রান্স হল এমন একটি বিষয় যেখানে খ্রিস্টের দেহরূপ উৎসর্গীকৃত রুটি যে পবিত্র পাত্রে রেখে আরাধনার জন্য প্রদর্শন করা হয়। আমরা যেমন প্রতি বৃহঃস্পতিবার আরাধনা করি। বাদ্যযন্ত্র উপাসনাকালীণ সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বা অংশ। এগুলো ব্যবহার করে উপাসনাকে আরও প্রানবন্ত করা যায়। তাই বাদ্যযন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা উপাসনাকে পুলকিত করার জন্য। ধূপদানি হলো ঈশ্বরকে পূজা নিবদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উপাসনায় বিভিন্ন মহাপর্বে, পর্বে এবং সাধারণ দিনে মানুষ ধূপ ব্যবহার করে থাকে।

রোজারিমালা প্রার্থনা হল একটি ভক্তিমূলক প্রার্থনা। এর মধ্যে পরিত্রাণের নিগূঢ়তত্ত্ব নিয়ে ধ্যান করা হয় এবং প্রার্থনা করা হয়। নিগূঢ়তত্ত্বগুলি চারভাগে ভাগ করা হয়। যথা-আনন্দময় পঞ্চ নিগূঢ়তত্ত্ব, শোকময় পঞ্চ নিগূঢ়তত্ত্ব, গৌরবময় পঞ্চ নিগূঢ়তত্ত্ব এবং জ্যোতির্ময় পঞ্চ নিগূঢ়তত্ত্ব। প্রত্যেকটি নিগূঢ়তত্ত্ব ধ্যান করার সাথে সাথে একবার প্রভুর প্রার্থনা, ১০ বার দূতের বন্দনা ও একবার ত্রিত্বের জয় প্রার্থনাটি করা হয়।

মূলসুরের উপর সহভাগিতায় ফাদার সুরেশ পিউরীফিকেশন বাণীসেবক ও বেদীসেবকদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে  সহভাগিতা করেন। তিনি কয়েকটি দিক তুলে ধরেন, ভাতিকান মহাসভার পূণ্য উপাসনা বিষয়ক দলিলে বলা হয় আমরা যেন খ্রিস্টভক্তদের সামনে নিয়ে/সঙ্গে নিয়ে/যুক্ত করে উপাসনা করি। উপাসনা হলো মণ্ডলীর প্রাণকেন্দ্র। উপাসনা হলো ঝর্ণার মতো যা থেকে মণ্ডলীর শক্তি নিগর্ত হয়। উপাসনায় আমাদের সম্পূর্ণ, সক্রিয়, এবং সচেতনভাবে অংশগ্রহণ করতে হয়। আমি কার সেবা করছি এবং কার বাণী পাঠ করছি তা সচেতনভাবে করতে হবে। উপাসনায় সুসংবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। যেমন- বাণীপাঠ, উদ্দেশ্য প্রার্থনা, গান করা, প্রার্থনা করা, উত্তর দেওয়া, দান দেওয়া-উঠানো, বেদীতে যাজকদের সহায়তা করা, ইত্যাদি। বাণীপাঠের পূর্বেই কয়েকবার সচেতনভাবে পাঠ করতে হবে, ধ্যান করতে হবে, এর অর্থ বুঝতে হতে তারপরেই বাণীপাঠ করা উচিত। বাণীপাঠের মাধ্যমে স্বয়ং ঈশ্বরই জনগণের সাথে কথা বলেন। ঈশ্বরের বাণীপাঠ করাই অর্থই হলো ঈশ্বরের বাণীর সেবক হওয়া। বেদীসেবক হওয়া অর্থই হলো মাণ্ডলীক সেবাদায়িত্বে নিজেকে আরও সক্রিয়ভাবে নিবেদন করা।

পবিত্র খ্রিস্টযাগ বাণীপাঠক ও বেদীসেবকদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রাণবন্ত, জীবন্ত ও অর্থপূর্ণ হয়ে উঠে। ফাদার সুরেশ পিউরীফিকেশনের পৌরহিত্যের মাধ্যমে পবিত্র খ্রিস্টযাগ ও পাল-পুরোহিতের ধন্যবাদ জ্ঞাপন, আশির্বাদ দানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।

 রিপোর্টার : ফাদার স্বপন পিউরীফিকেশন
image

আপনার মতামত দিন