এআই চালিত স্টেথোস্কোপ: কয়েক সেকেন্ডেই  হৃদরোগ শনাক্ত করতে সক্ষম

প্রকাশ: রবিবার, ৩১ অগাস্ট, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png নিজস্ব প্রতিবেদক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

আধুনিক প্রযুক্তি বদলে দিচ্ছে চিকিৎসা জগৎকে। দুই শতকের পুরোনো স্টেথোস্কোপ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ছোঁয়ায় এবার পেল নতুন রূপ। আর সেই রূপান্তর এনে দিচ্ছে হৃদরোগ নির্ণয়ের এক নতুন যুগ।

 নতুন যুগের স্টেথোস্কোপ
১৮১৬ সালে প্রথম স্টেথোস্কোপ আবিষ্কার হয়। দীর্ঘদিন ধরে এটি ছিল চিকিৎসকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার, যা দিয়ে শরীরের অভ্যন্তরের শব্দ শোনা যেত। তবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেই যন্ত্রই এবার পেয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) শক্তি।

যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ হেলথ কেয়ার এনএইচএস ট্রাস্ট পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন এই এআই স্টেথোস্কোপ মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই শনাক্ত করতে পারে হৃদ্‌যন্ত্রের তিনটি জটিল সমস্যা। এগুলো হলো, হার্ট ফেইলিউর (হৃদ্‌যন্ত্রের কার্যক্ষমতা হ্রাস), হার্ট ভালভের সমস্যা ও অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন।

 কীভাবে কাজ করে এআই স্টেথোস্কোপ?
এই আধুনিক স্টেথোস্কোপে রয়েছে একটি চারকোনা ডিভাইস এবং মাইক্রোফোন, যা খুবই সূক্ষ্ম শব্দ ধারণ করতে সক্ষম। এটি সাধারণ স্টেথোস্কোপ বা মানুষের কানে ধরা পড়ে না। এটি রোগীর হৃৎপিণ্ডের ইসিজি (ECG) রেকর্ড করে। সেই ডেটা সরাসরি ক্লাউডে পাঠানো হয়। এরপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) মডেল সেই ডেটা বিশ্লেষণ করে হৃদ্‌রোগ শনাক্ত করে।

এই এআই সিস্টেম প্রশিক্ষিত হয়েছে হাজার হাজার রোগীর হৃদ্‌ডেটা দিয়ে, ফলে এটি অনেক বেশি নির্ভুল ও দ্রুত কাজ করতে সক্ষম।

 গবেষণার ফলাফল
এই গবেষণায় যুক্তরাজ্যের ৯৬টি জিপি সার্জারিতে ১২ হাজারের বেশি রোগীর ওপর এআই স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি, ১০৯টি জিপি সার্জারিতে ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে রোগী পরীক্ষা করা হয়। তুলনামূলক ফলাফল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। হার্ট ফেইলিউর শনাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে ২.৩৩ গুণ।  অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন শনাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে ৩.৫ গুণ। হার্ট ভালভের রোগ শনাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে ১.৯ গুণ।

বিশেষ করে অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন অনেক সময় উপসর্গবিহীন থাকে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। ফলে আগেভাগেই এই সমস্যাগুলো শনাক্ত করা জীবন রক্ষাকারী হতে পারে।

চিকিৎসকদের প্রতিক্রিয়া
ডা. সোনিয়া বাবু-নারায়ণ, ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর ও কার্ডিওলজিস্ট বলেন, “দুই শতকের পুরোনো সাধারণ স্টেথোস্কোপ কীভাবে আধুনিক যুগের উপযোগী প্রযুক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে, এটি তার চমৎকার উদাহরণ। এ ধরনের উদ্ভাবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনেক সময় এসব রোগ তখনই ধরা পড়ে, যখন রোগী হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায় আসে।”

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়েছে মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিওলজির বার্ষিক সম্মেলনে, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় হার্ট কনফারেন্স। আগামীতে এই এআই স্টেথোস্কোপ দক্ষিণ লন্ডন, সাসেক্স এবং ওয়েলসের বিভিন্ন জিপি সার্জারিতে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। সূত্র: বিবিসি

image

আপনার মতামত দিন