৬৩ বছর বয়সী ক্যাথেরিন সুলিভান ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় ব্যাংক, কমনওয়েলথ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়া (সিবিএ)-এর এক অভিজ্ঞ কর্মী। প্রায় ২৫ বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করে আসা এই নারী কর্মীকে হঠাৎ করেই ছাঁটাই করে দেয় তাঁর প্রিয় প্রতিষ্ঠানটি। আর সবচেয়ে চমকপ্রদ ও কিছুটা করুণ সত্য হলো, তাঁর জায়গা দখল করে নেয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)।
চ্যাটবটকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, তারপর…
ছাঁটাইয়ের ঘটনাটি শুধু ক্যাথেরিনের একার নয়। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সিবিএ-তে চাকরি হারান আরও ৪৪ জন কর্মী। এদের বেশিরভাগই কাজ করতেন গ্রাহকসেবা ও প্রশাসনিক বিভাগে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই কর্মীদের অনেকেই নিজের হাতে চ্যাটবট প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, যারা এখন তাদেরই জায়গা দখল করে নিয়েছে।
নিউজ কর্প অস্ট্রেলিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সিবিএ-ই প্রথম অস্ট্রেলীয় প্রতিষ্ঠান যারা প্রত্যক্ষভাবে এআই দিয়ে মানুষের জায়গায় কাজ করাচ্ছে। ক্যাথেরিন জানান, তিনি নিজেই "বাম্বলিবি" নামের একটি চ্যাটবটকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। চ্যাটবটের জন্য স্ক্রিপ্ট তৈরি, তার জবাবের ধরন নির্ধারণ, উন্নত করা-সব কিছুতেই তিনি যুক্ত ছিলেন।
তিনি বলেন, “আমি ভেবেছিলাম এই চ্যাটবট দেশের বাইরে কোথাও ব্যবহৃত হবে। কল্পনাও করিনি, একদিন সেটাই আমার জায়গা দখল করবে।”
হঠাৎ ছাঁটাই, হঠাৎ ধাক্কা
চ্যাটবটের প্রশিক্ষণ শেষ হলে তিনি আশা করেছিলেন, তাঁকে অন্য কোনো বিভাগে বদলি করা হবে। কিন্তু সিবিএ তাঁকে জানায়, “আপনার আর প্রয়োজন নেই।” এ কথা শুনে তিনি স্তম্ভিত হয়ে যান।
নিজের অজান্তেই আমি যেন আমার চাকরি খোয়ানোর আয়োজন করছিলাম-দুঃখের সাথে বলেন ক্যাথেরিন।
এআইয়ের উত্থান: সুযোগ, নাকি হুমকি?
ক্যাথেরিন এআই প্রযুক্তির বিরোধী নন। তিনি বিশ্বাস করেন, কর্মক্ষেত্রে এবং দৈনন্দিন জীবনে এআইয়ের অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে তিনি এটাও মনে করেন, কিছু নৈতিক সীমা টানা দরকার। যেমন-
>> এআই যেন মানবকর্মীর জায়গা পুরোপুরি দখল না করে
>> কপিরাইট আইন যেন লঙ্ঘন না হয়
>> মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কর্মী সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।
আমরা কী শিক্ষা নিচ্ছি?
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে উঠে আসে একটি গভীর প্রশ্ন, প্রযুক্তির উন্নয়ন কি মানবিক মূল্যবোধকে ছাপিয়ে যাচ্ছে? এআই আমাদের কাজকে সহজ করতে পারে, কিন্তু মানুষের অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ও প্রজ্ঞা কি কখনও পুরোপুরি প্রযুক্তি দিয়ে প্রতিস্থাপনযোগ্য? সূত্র: এবিসি নিউজ, নিউজ কর্প