স্কুলে শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন আসক্তি ঠেকাতে দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন আইন

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ কোরিয়ায় স্কুলের শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ফোন ও স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে একটি নতুন আইন পাস হয়েছে। ২০২৬ সালের মার্চ থেকে এ আইন কার্যকর হবে। সরকারের মতে, স্মার্টফোন আসক্তি শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শিক্ষাগত উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তাই শিক্ষাব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আইন পাসের পেছনে রাজনৈতিক ঐকমত্য
জাতীয় পরিষদে এই বিলটি ১৬৩ জন সদস্যের মধ্যে ১১৫ জনের ভোটে পাস হয়। বিরোধী দল পিপল পাওয়ার পার্টির এমপি চো জুং-হুন বিলটি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, “স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্কের বিকাশ ও মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে-এ নিয়ে বৈজ্ঞানিক প্রমাণও রয়েছে।”

পরিসংখ্যান যা উদ্বেগ বাড়ায়
দক্ষিণ কোরিয়ার ২০২৪ সালের এক সরকারি জরিপ অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার (৫.১ কোটি) প্রায় ২৫ শতাংশই স্মার্টফোনে অতিরিক্ত নির্ভরশীল। তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরদের মধ্যে এই হার ৪৩ শতাংশ, যা দিন দিন বাড়ছে।

অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা
১৩ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী জানান, সে ফোনে আসক্ত নয়, বরং প্রতিদিনই প্রাইভেট টিউশন ও হোমওয়ার্কে ব্যস্ত থাকতে হয়। অন্যদিকে এক অভিভাবক চোই ইউন-ইয়ং বলেন, “শুধু পড়ালেখা নয়, বন্ধুত্ব গড়তেও শিক্ষার্থীরা স্কুলে যায়। কিন্তু ফোনের কারণে এখন তারা কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারছে না।”

একজন মা কিম সান আরও বলেন, “সামাজিক মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে বুলিং এবং অশ্লীল ভাষার ব্যবহার বেড়েছে, যা আমাদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ।”

কী থাকবে এই আইনে?
মোবাইল ফোন শুধুমাত্র শ্রেণিকক্ষের সময় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শিক্ষকরা চাইলে পুরো স্কুল প্রাঙ্গণেও ফোন ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবেন। প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক ডিভাইস ব্যবহারে ছাড় দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রম বা জরুরি পরিস্থিতিতেও ফোন ব্যবহারের অনুমতি থাকবে। স্কুলগুলোকে শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল ডিভাইসের সঠিক ব্যবহার শেখাতে হবে।

শিক্ষক ও সংগঠনগুলোর মতামত
দেশটির সবচেয়ে বড় দুটি শিক্ষক সংগঠনের মধ্যে কোরিয়ান ফেডারেশন অব টিচারস অ্যাসোসিয়েশন আইনটির পক্ষে মত দিয়েছে। এক মুখপাত্র জানান, শিক্ষক সমীক্ষায় ৭০ শতাংশ শিক্ষক বলেছেন, স্মার্টফোন শ্রেণিকক্ষে মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। এমনকি অনেকে বলেন, ফোন বাজেয়াপ্ত করায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গালিগালাজ বা আক্রমণেরও শিকার হয়েছেন।

তবে কোরিয়ান টিচারস অ্যান্ড এডুকেশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অবস্থান নেয়নি। কিছু সদস্য মনে করেন, এটি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা লঙ্ঘন করতে পারে।

মূল সমস্যাটা কি শুধুই ফোন?
একজন শিক্ষক চো ইয়ং-সান বলছেন, “ছাত্রদের সমস্যা কেবল ফোন নয়, বরং আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার চরম প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ, বিশেষ করে সুনুং (কলেজ ভর্তি পরীক্ষা)।”

১৮ বছর বয়সী সিও মিন-জুন বলেন, “শুধু নিষেধাজ্ঞা দিলেই হবে না, আমাদের শেখাতে হবে ফোন ছাড়া সময় কীভাবে কাটানো যায়।”

অন্য দেশগুলো কী করছে?
ফিনল্যান্ড ও ফ্রান্সে ছোটদের স্কুলে ফোন নিষিদ্ধ হলেও, ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও চীন-এর মতো দেশগুলোতে সব ধরনের স্কুলেই ফোন ব্যবহারে কড়াকড়ি রয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রবণতাকে মাথায় রেখেই দক্ষিণ কোরিয়াও এই পথে হাঁটছে।

স্মার্টফোন আসক্তি একটি বৈশ্বিক সমস্যা, যার প্রভাব শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবক, তিন পক্ষই অনুভব করছে। দক্ষিণ কোরিয়ার এই উদ্যোগ কেবল নিষেধাজ্ঞায় সীমাবদ্ধ নয়; বরং শিক্ষার্থীদের সচেতনতা ও বিকল্প চর্চার শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাধানের দিকেই এগোচ্ছে। সূত্র: বিবিসি

image

আপনার মতামত দিন