স্পেসএক্স আবারও মহাকাশ অভিযানে ইতিহাস গড়তে প্রস্তুত। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট ‘স্টারশিপ’-এর মাধ্যমে তারা শুরু করতে যাচ্ছে ১১তম পরীক্ষামূলক ফ্লাইট বা ইন্টিগ্রেটেড ফ্লাইট টেস্ট-১১ (IFT-11)।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের স্টারবেস লঞ্চ সাইট থেকে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোর ৫টা ১৫ মিনিটে এই অভিযান শুরু হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
উড্ডয়ন কার্যক্রম শুরুর অন্তত ৩০ মিনিট আগে থেকেই স্পেসএক্সের ওয়েবসাইট এবং এক্স (পূর্বে টুইটার)-এর অফিসিয়াল চ্যানেল থেকে ফ্লাইটটির প্রতিটি ধাপ সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। ফলে বিশ্বজুড়ে মহাকাশপ্রেমী ও গবেষকরা রিয়েল টাইমে এই ঐতিহাসিক ফ্লাইট উপভোগ করতে পারবেন।
স্টারশিপ: বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট
স্পেসএক্সের স্টারশিপ প্রকল্পের লক্ষ্য ভবিষ্যতে মানুষ ও মালপত্র বহন করে মঙ্গলগ্রহে পৌঁছানো। এটি দুই ধাপে বিভক্ত। যেমন,
সুপার হেভি বুস্টার: প্রথম ধাপ, যা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ অতিক্রম করে মহাকাশে পৌঁছাতে সাহায্য করে।
স্টারশিপ স্পেসক্রাফট: দ্বিতীয় ধাপ, যা মহাকাশে কক্ষপথে অবস্থান করে এবং শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছায়।
আগের আগস্টের সফল পরীক্ষামূলক উড্ডয়নে স্টারশিপ প্রথমবারের মতো মহাকাশে আটটি ডামি স্টারলিংক স্যাটেলাইট বহন করেছিল। এবারও একই ধরনের পেলোড প্রদর্শনের পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশেষ দিক হলো, এই ফ্লাইটে পুনর্ব্যবহৃত সুপার হেভি বুস্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। বুস্টারটিতে মোট ৩৩টি র্যাপটর ইঞ্জিন রয়েছে, যার মধ্যে ২৪টি পূর্বে ব্যবহৃত হয়েছিল। এটি স্পেসএক্সের পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট প্রযুক্তির আরও একটি বড় মাইলফলক।
মিশনের উদ্দেশ্য
এই ১১তম পরীক্ষামূলক মিশন মূলত ভবিষ্যতের আরও জটিল মহাকাশ মিশনের জন্য তথ্য সংগ্রহের অংশ। এবার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি পরীক্ষা করা হবে, পরবর্তী প্রজন্মের সুপার হেভি বুস্টার নিয়ে বাস্তব তথ্য সংগ্রহ। হিটশিল্ড বা তাপরোধক স্তর কতটা উচ্চতাপ ও ঘর্ষণ সহ্য করতে পারে-তার পরীক্ষা। কক্ষপথে থেকে ল্যান্ডিং ট্র্যাজেক্টরি ও রিএন্ট্রি কৌশল অনুশীলন। পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট প্রযুক্তির কার্যকারিতা যাচাই।
এই পরীক্ষাগুলো সফলভাবে সম্পন্ন হলে স্টারশিপ প্রকল্পের অপারেশনাল ফ্লাইট বা নিয়মিত বাণিজ্যিক উৎক্ষেপণের দিকে স্পেসএক্স আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
গন্তব্য: মেক্সিকো উপসাগর ও ভারত মহাসাগর
এই পরীক্ষায় স্পেসএক্স বুস্টারটিকে বিখ্যাত “চপস্টিক আর্ম” দিয়ে ধরার চেষ্টা করবে না। সুপার হেভি বুস্টারটি উৎক্ষেপণের পর মেক্সিকো উপসাগরে পতিত হবে। অপরদিকে স্টারশিপ স্পেসক্রাফট পৃথিবীর কক্ষপথ পেরিয়ে ভারত মহাসাগরে অবতরণ করবে।
এই পদ্ধতিটি স্পেসএক্সকে বাস্তব পরিস্থিতিতে রকেটের আচরণ পর্যবেক্ষণ করতে সহায়তা করবে, যা ভবিষ্যতে নির্ভুল অবতরণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কেন এই ফ্লাইট গুরুত্বপূর্ণ?
স্টারশিপের প্রতিটি পরীক্ষাই মূলত ভবিষ্যতের চাঁদ ও মঙ্গল মিশনকে বাস্তবের কাছাকাছি নিয়ে আসছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নাসা ২০২৬ সালে আর্টেমিস প্রোগ্রামের চাঁদে অবতরণ মিশনে স্টারশিপ ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এটি বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ও মহাকাশ ভ্রমণে ব্যবহৃত হবে।
IFT-11 সফল হলে এটি প্রমাণ করবে যে স্টারশিপ শুধু শক্তিশালী নয়, বরং বিশ্বস্ত ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য একটি উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে উঠছে।
এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে সরাসরি দেখতে চাইলে বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ১৫ মিনিটে (উড্ডয়ন শুরুর সম্ভাব্য সময়) ওয়েবসাইটে www.spacex.com গিয়ে দেখা যাবে। লাইভ শুরু হবে এক্স (X): @SpaceX-এ উড্ডয়নের ৩০ মিনিট আগে।
স্টারশিপের এই ১১তম ফ্লাইট শুধু একটি রকেট উৎক্ষেপণ নয়। এটি ভবিষ্যতের মহাকাশযাত্রার জন্য এক বিশাল পদক্ষেপ। প্রযুক্তির নতুন নতুন সীমানা ছুঁয়ে মানুষের মহাকাশ অভিযানের স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে চাইছে স্পেসএক্স। তাই এই উৎক্ষেপণকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। সূত্র: দ্য ভার্জ ও এনগ্যাজেট।