যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ভবিষ্যৎ নিয়ে আবারও আলোচনার ঢেউ উঠেছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, আসন্ন সোমবার বা মঙ্গলবার চীনের সঙ্গে এ বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা হতে পারে। তাঁর দাবি, টিকটকের মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন একটি চুক্তির দ্বারপ্রান্তে।
গতকাল শুক্রবার, এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, “আমি মনে করি, আমরা সোমবার বা মঙ্গলবার আলোচনা শুরু করব। হয়তো চীনের প্রেসিডেন্ট শি বা তাঁর কোনো প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলব। তবে আমাদের চুক্তিটি প্রায় হয়েই গেছে।”
অতীতের জটিলতা ও বর্তমান আশাবাদ
টিকটকের যুক্তরাষ্ট্র অংশ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। ২০২৪ সালের শুরুতে পরিকল্পনা ছিল-টিকটকের মার্কিন শাখাকে আলাদা করে একটি নতুন কোম্পানিতে রূপান্তরিত করা হবে, যার মালিকানা থাকবে পুরোপুরি মার্কিন বিনিয়োগকারীদের হাতে। তবে ট্রাম্প যখন চীনা পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, তখন চীন জানিয়ে দেয় তারা এই চুক্তিকে সমর্থন করবে না। ফলাফল-প্রক্রিয়াটি স্থবির হয়ে পড়ে।
তারপরও ট্রাম্প বলছেন, ‘‘চূড়ান্ত চুক্তির জন্য চীনের অনুমোদন প্রয়োজন হতে পারে। আমি আত্মবিশ্বাসী নই, তবে আমি মনে করি তারা রাজি হবে। প্রেসিডেন্ট শি ও আমার মধ্যে দারুণ সম্পর্ক রয়েছে এবং আমি মনে করি এটি চীনের জন্যও ভালো, আমাদের জন্যও ভালো।”
নতুন আগ্রহী বিনিয়োগকারীরা
এর আগেও ট্রাম্প জানিয়েছেন, টিকটক কিনতে আগ্রহী ‘অত্যন্ত ধনী একদল মানুষ’ আছেন। চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে তিনি আশাবাদী এবং আবারও বলেন, “টিকটকের জন্য আমাদের একজন ক্রেতা রয়েছে। আমি মনে করি, এর জন্য চীনের অনুমোদন প্রয়োজন হবে এবং প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং তা দেবেন বলেই আমি বিশ্বাস করি।”
টিকটকের অস্থায়ী বন্ধ ও আইনি প্রেক্ষাপট
২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারি, টিকটক যুক্তরাষ্ট্রে সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এর পেছনে কারণ ছিল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি আইন- “Protecting Americans from Foreign Adversary-Controlled Applications Act”, যেটি বিদেশি মালিকানাধীন অ্যাপস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা শঙ্কা থেকে তৈরি। যদিও বন্ধের মাত্র ১২ ঘণ্টা পরেই মার্কিন নাগরিকরা আবার টিকটকে প্রবেশ করতে সক্ষম হন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতেই ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে টিকটকের মেয়াদ এপ্রিলের শুরুতে বাড়ান, পরে আবার ১৯ জুন পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হয়।
টিকটক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের এই কূটনৈতিক রূপান্তর কেবল একটি অ্যাপের মালিকানা নিয়েই নয়, বরং বৃহত্তর প্রযুক্তি নিরাপত্তা, বিনিয়োগ এবং ভূরাজনীতির ক্ষেত্রেও বড় ইঙ্গিত বহন করে। এখন দেখার বিষয়-চূড়ান্ত আলোচনার পর টিকটক যুক্তরাষ্ট্রে কী ভবিষ্যৎ পায়। সূত্র: রয়টার্স