ফ্রান্টিয়ার প্রযুক্তি তথা এআই, ভয়েস ক্লোনিং, ইমেজ ও ভিডিও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেড়েছে সোশ্যাল বুলিং ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারীরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে ডিজিটাল গণ-স্বাক্ষরতা বাড়ানো, বিশেষ করে প্রাথমিক স্কুল থেকেই ডিজিটাল শিক্ষায় সাইবার নর্মস, এটিকেট ও হাইজিন বিষয় অন্তর্ভূক্তির প্রস্তাব দিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর ঢাকার গুলাশনাস্থ আমারি-তে অনুষ্ঠিত কর্মশালা ও বহুপক্ষীয় মত বিনিময় সভায় এসব পরামর্শ তুলে ধরেন বক্তারা।
ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ফান্ড (ইউএনএফপিএ) ঢাকার আয়োজনে ‘প্রযুক্তি নির্ভর নারী সহিংসতা’ নিয়ে অনুষ্ঠিত হাইব্রিড পদ্ধতির সভায় বাংলাদেশের বাইরেও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলংকার খাত সংশ্লিষ্টরা যুক্ত ছিলেন।
নেপাল থেকে আলোচনায় যুক্ত হন ডিজিটাল রাইট নেপালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সন্তোষ সিদেল; শ্রীলঙ্কার হ্যাশট্যাগ প্রোগ্রাম ম্যানেজার সারদী ইনুগালবন্দ্র, পাকিস্তানের মানবাধিকার কর্মী ফওজিয়া ইয়াজদানি এবং ভারতের ইউনি ইন্ডিয়ান ও ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের স্টাফ পিংকি প্রধান।
ইউএনএফপিএ ঢাকার প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট শামীমা পারভীনের সঞ্চালনায় কর্মশালায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মালিহা তাবাস্সুম কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বাংলাদেশে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার ভয়বহতার আগাম সতর্ক করেন। নিজের গবেষণার উপাত্ত তুলে ধরে তিনি জানান, দেশের ৯০ শতাংশ নারীই জানে না তারা বা তাদের ছবি এআই এর জালে জড়িয়ে গেছেন কি না। এআই দিয়ে কি কি করা সম্ভব সে বিষয়েও তারা জানে না। তাই এ বিষয়ে আমাদের প্রোঅ্যাক্টিভলি কাজ করতে হবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের প্রধান ড. এলিজা আজেই; টেকনিক্যাল স্পেশালিস্ট হায়ং চোই, ব্লাস্ট এর রিসার্চ অ্যাসিটেন্ট আফ্রিদা সামিহা নাবিলা, একশন এইড এর প্রোগ্রাম অফিসার ইশরাত জাহানা সিদ্দিকী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অর্থ সম্পাদক দিল আফরোজ বেগম, প্লান ইন্টারন্যাশনাল প্রতিনিধি ফারজানা আক্তার, আইআরসি’র সমন্বয়ক গ্লাগি মুইগা, ফ্যাক্ট ওয়াচ-এর গবেষণা সমন্বয়ক জুলকার নাঈম প্রমুখ।
এদের মধ্যে ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের প্রধান ড. এলিজা আজেই বলেন, অপতথ্য মোকাবেলায় ইউএনএফপিএ বিএসএসকে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করছে। ফলাফল শীঘ্রই পাওয়া যাবে এবং মার্চের শুরুর দিকে একটি গুণগত বিশ্লেষণী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
বক্তারা কিশোর-কিশোরী এবং তাদের অভিভাবকদের জন্য ডিজিটাল সাক্ষরতা, যৌন হয়রানি বিরোধী আইন, মিথ্যা এবং সঠিক তথ্যের পার্থক্য বোঝার জন্য সচেতনতা বাড়ানো এবং সামাজিক ও মানসিক উন্নয়নে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। একইসঙ্গে ডিজিটাল প্লাটফর্ম বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোকে আঞ্চলিক পর্যায়ের গাইডলাইন তৈরিতেও গুরুত্বারোপ করেছেন তারা। এক্ষেত্রে আন্তঃমন্ত্রণালয় এবং ক্রসবর্ডার ইন্টার কানেক্টিভিটির ওপর নজর দিতে সুপারিশ করা হয়েছে। তাদের আহ্বান-বটম-আপ অ্যাপ্রোচে সাইবার সচেতনতা ও সুরক্ষা প্রতিষ্ঠা এবং মেয়েদের হয়রানি বন্ধের পাশাপাশি দেশে একটি সাইবার ‘পজেটিভ অ্যাপ্রোচ’ আন্দোলনের দাবি জানিয়েছেন এই খাতের অ্যাক্টিভিস্টরা। তারা মনে করেন, নতুন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে নারীর সাইবার সুরক্ষায় তাদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও অন্তর্ভূক্ত করা দরকার। আর সাইবার স্পেসে মেয়েদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার-নাগরিক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যুথবদ্ধ প্রচেষ্টাই পারে আগামীর ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে।