শিল্প বিপ্লবের নতুন ধাপে প্রবেশ করেছে চীন। বিশ্বের অন্যতম প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত দেশটি এখন ‘ডার্ক ফ্যাক্টরি’ বা স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বচালিত কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে উৎপাদন খাতে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। ‘ডার্ক ফ্যাক্টরি’ বলতে এমন কারখানাকে বোঝানো হয়, যেখানে কোনো মানুষের উপস্থিতি ছাড়াই সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় মেশিন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্বারা উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
ডার্ক ফ্যাক্টরি কী?ডার্ক ফ্যাক্টরি এমন একটি উৎপাদন ব্যবস্থা, যেখানে কোনো শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। এই কারখানাগুলো রোবট, স্বয়ংক্রিয় মেশিন, সেন্সর ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে সক্ষম। ‘ডার্ক ফ্যাক্টরি’ নামটি এসেছে এই ধারণা থেকে যে, এসব কারখানায় মানুষের কাজ না থাকায় আলোও প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ, এক ধরনের ‘অন্ধকার’ বা ‘ডার্ক’ পরিবেশে এগুলো পরিচালিত হয়।
চীনে ডার্ক ফ্যাক্টরির উত্থানচীন ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি শহরে ডার্ক ফ্যাক্টরি স্থাপন করেছে এবং আরো নতুন কারখানা তৈরির পরিকল্পনা করছে। বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল, এবং ভোক্তাপণ্য উৎপাদনে এই প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। শেনজেন, সাংহাই, এবং গুয়াংডং-এর মতো শিল্প-সমৃদ্ধ এলাকাগুলোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এসব কারখানা স্থাপিত হচ্ছে।
প্রযুক্তি ও কর্মসংস্থান পরিবর্তনের সম্ভাবনাডার্ক ফ্যাক্টরি প্রযুক্তি উৎপাদন খাতে দক্ষতা ও গুণগত মান বাড়াবে, তবে এর ফলে প্রচলিত কর্মসংস্থানের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন প্রক্রিয়ার ফলে মানবশ্রমের চাহিদা কমে যাবে, তবে নতুন প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এআই, রোবোটিক্স ও স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন বাড়বে।
ডার্ক ফ্যাক্টরির সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ
সুবিধা:উৎপাদন খরচ কমানো: স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার ফলে শ্রম খরচ কমে যাবে।
উচ্চমান বজায় রাখা: রোবট ও এআই-এর মাধ্যমে নির্ভুল উৎপাদন সম্ভব।
২৪/৭ কার্যক্রম: মানুষের মতো বিশ্রামের প্রয়োজন নেই, তাই উৎপাদন নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে পারে।
নিরাপত্তা বৃদ্ধি: বিপজ্জনক কাজগুলো রোবট দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকি কমবে।
চ্যালেঞ্জ:মানবশ্রম হ্রাস: প্রচলিত উৎপাদন ব্যবস্থায় কর্মরত অনেক শ্রমিকের চাকরি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
প্রযুক্তিগত নির্ভরতা: পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় যেকোনো কারিগরি ত্রুটি উৎপাদনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
উচ্চ প্রাথমিক বিনিয়োগ: ডার্ক ফ্যাক্টরি স্থাপনে প্রচুর মূলধন বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়।
বিশ্বব্যাপী প্রভাব ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাচীনের এই অগ্রগতি বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর জন্যও দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপানসহ আরও কিছু দেশ ডার্ক ফ্যাক্টরির ধারণা নিয়ে কাজ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে শিল্প উৎপাদনের মূল ধারা হবে এই সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় কারখানা ব্যবস্থা।
চীনের এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী শিল্পখাতে বিপ্লব ঘটানোর পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আগামী দিনে ডার্ক ফ্যাক্টরির সংখ্যা বাড়তে থাকলে বিশ্বব্যাপী উৎপাদন খাতের চিত্রই বদলে যেতে পারে। সূত্র: এমইএস।