মানবসদৃশ রোবটের ম্যারাথন: প্রযুক্তির নতুন দিগন্তে চীন

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত
২১ কিলোমিটারের কিছুটা বেশি দূরত্বের একটি হাফ ম্যারাথন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে বেশ কয়েকটি মানবসদৃশ রোবট। যদিও অংশগ্রহণকারী ২১টি রোবটের মধ্যে মাত্র ছয়টি শেষ পর্যন্ত সচল ছিল, গবেষকরা এটিকে ব্যর্থতা নয়, বরং গবেষণার জন্য মূল্যবান তথ্যের উৎস হিসেবে দেখছেন।

চীনের বিভিন্ন প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরেই মানবসদৃশ রোবট নিয়ে কাজ করছে। সম্প্রতি রোবটের সাইকেল চালানো বা মার্শাল আর্ট চর্চার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। চীনা গণমাধ্যম এই উদ্যোগকে ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাব্য চালিকাশক্তি হিসেবে দেখছে। এ ম্যারাথনে অংশ নেয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তৈরি রোবটও।

ম্যারাথনে অংশ নিয়েছিল প্রায় ১২ হাজার মানুষ, যারা সবাই রোবটদের ছাড়িয়ে বহু আগেই দৌড় শেষ করেন। রোবটগুলোর অনেকে যান্ত্রিক ত্রুটি, অতিরিক্ত তাপ কিংবা ব্যাটারি সমস্যার কারণে মাঝপথে থেমে যায়। তবে ম্যারাথনের নিয়ম অনুযায়ী, রোবটদের ব্রেক নিয়ে ব্যাটারি বদল করার অনুমতি ছিল। প্রতিটি যন্ত্রাংশ বদলে ১০ মিনিট পেনাল্টি ধার্য করা হয়।

প্রথম স্থান অর্জন করে বেইজিং হিউম্যানয়েড রোবট ইনোভেশন সেন্টারের (BHRIc) তৈরি তিয়াংগং আলট্রা, যেটি মাত্র ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিটে সম্পূর্ণ ম্যারাথন শেষ করে। এর তুলনায় মানব বিভাগে বিজয়ী দৌড়বিদ একই দূরত্ব অতিক্রম করেন মাত্র ১ ঘণ্টা ২ মিনিটে। যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির রোবটিকস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অ্যালান ফার্ন বলেন, রোবটগুলো যে সময়ের মধ্যে দৌড় শেষ করতে পেরেছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

BHRIc-এর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ট্যাং জিয়ান জানান, তিয়াংগং আলট্রার মূল শক্তি ছিল লম্বা পা ও মানুষের মতো দৌড়ানোর অ্যালগরিদম। ম্যারাথনের পুরোটা পথে এটি মাত্র তিনবার ব্যাটারি বদলেছে, যদিও বিভিন্ন যান্ত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখে একজন সহকারী প্রয়োজন হয়েছিল।

রোবটগুলোর মধ্যে কিছু দৌড় শুরুর পরপরই পড়ে যায়। যেগুলোর রিমোট কন্ট্রোল ছিল, তাদের সহায়তা প্রয়োজন হয়নি। রোবটদের উপস্থিতিতে মানব প্রতিযোগীদের কোনো সমস্যা হয়নি; বরং অনেকেই রোবটের সঙ্গে ছবি তুলতে তাদের লেন ছেড়ে যান।

চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং জাপানসহ বিভিন্ন দেশ মানবসদৃশ রোবট তৈরিতে প্রতিযোগিতা করছে। চীনের শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালে এই খাতকে ‘প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতার নতুন দিগন্ত’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। ২০২৫ সালের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদন ও সরবরাহ চেইন গড়ে তুলতে দেশটির সরকার সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এ ম্যারাথনের আয়োজনেও ছিল চীন সরকার, যেটিকে তারা একটি ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিকস প্রযুক্তিতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ডিপসিকের মাধ্যমে আগেই চীন বিশ্বকে চমক দিয়েছে, আর এবার মানবসদৃশ রোবট ম্যারাথনে অংশগ্রহণ সেই প্রযুক্তিগত সক্ষমতার আরেকটি বহিঃপ্রকাশ।
image

আপনার মতামত দিন