ডিসমিসল্যাবের ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের তথ্য-যাচাই প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ভুল তথ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি হয়েছে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত আটটি তথ্য-যাচাই প্ল্যাটফর্মে মোট ৯১৭টি ভিন্নধর্মী ভুল তথ্যের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এসব ঘটনা নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকশ করা হয়েছে।‘রাজনৈতিক পরিবর্তন বাংলাদেশে রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় ভুল তথ্যের বৃদ্ধি।’ শিরোনামে প্রকাশ হওয়া এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে দেখানো হয়, এসব ঘটনার মধ্যে ৪২% রাজনৈতিক ভুল তথ্য ছিল, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি। ধর্মীয় ভুল তথ্যের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে, যা মোট যাচাইকৃত অনন্য ঘটনার ১২%।
গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ভুল তথ্যের বর্ণনাগুলোর মূল লক্ষ্য ছিল দুটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. ইউনূস এবং বর্তমানে ভারতে বসবাসরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া প্রতিবেদনে যেসব তথ্য উঠে এসেছে, সেখানে অস্থিরতার অভিযোগ, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দ্বারা নির্বাসনের দাবির কথা এবং জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে তার প্রত্যাবর্তনের দাবি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে আরও দেখানো হয়, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক খ্যাতিকে অতিরঞ্জিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তাকে ‘বিশ্বের তৃতীয় সৎ সরকার প্রধান’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাঁকে ক্ষমতায় ফিরতে জাতিসংঘের সমর্থনের দাবি করা হয়েছে। অন্যদিকে, কিছু বর্ণনায় তাঁকে বিচ্ছিন্ন ও দুর্বল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যার মধ্যে স্বাস্থ্য সংকটের ভুয়া খবর এবং আন্তর্জাতিক চাপের কারণে নির্বাসনের গুজব রয়েছে।
প্রতিবেদনে উঠে আসে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নানা দিক। যেমন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর আগস্ট মাসে ড. ইউনূসকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভুল তথ্য প্রকাশ করা হয়। সাধারণ জনগণ সোশ্যাল মিডিয়াতে ড. ইউনূসকে নিয়ে নানা ধরনের মতামত প্রকাশ করেছেন। এসব লেখায় কেউ কেউ তাঁকে দেশের সংস্কারক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। যেমন তিনি বিনামূল্যে শিক্ষা এবং সরকারি চাকরির নিশ্চয়তার মতো উদ্যোগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে, কিছু বর্ণনায় তাঁর রক্ষণশীল মূল্যবোধের সাথে সংযোগ স্থাপনের অভিযোগও উঠেছে।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি ‘জাতীয় সঙ্গীতের পরিবর্তে সূরা ফাতিহাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন’ এবং অন্যান্য ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি, যা একটি আদর্শগতভাবে বিভক্ত প্রশাসনের ধারণাকে উস্কে দিয়েছে। উভয় নেতাকে ভুয়া গ্রাফিক কার্ড এবং বিশ্বাসযোগ্য মিডিয়া সূত্রের নকল বিবৃতি ব্যবহার করে জড়িয়ে ফেলা হয়েছে, যা রাজনৈতিক মেরুকরণকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে আরও দেখানো হয়েছে যে, ধর্মীয় ভুল তথ্য সম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করার একটি সাধারণ উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যেখানে মিথ্যা বর্ণনাগুলোর মাধ্যমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণের ধারণা প্রচার করা হচ্ছে।
এক্স (পূর্বে টুইটার)-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে অনেক আগের আগুন সহিংসতার ছবি পোস্ট করা হয়েছে, যেগুলোকে ভুলভাবে সাম্প্রতিক আক্রমণ বলে উপস্থাপন করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি রেস্তোরাঁর আগুনের ভিডিও, যা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল, ভুলভাবে একটি হিন্দু মন্দিরে আক্রমণের ঘটনা হিসেবে দেখানো হয়েছে। এই বর্ণনাগুলো, যা অনেক সময় বাংলাদেশ থেকে বাইরে শুরু হয়। পরে এগুলোকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিকভাবে নানা ইস্যু তৈরি করে ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়।
ডিসমিসল্যাবের পুরো গবেষণা প্রতিবেদনটি পড়তে এখানে
ক্লিক করুন।