দেশের টেলিযোগাযোগ খাতকে ঢেলে সাজাতে নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তনের রূপরেখা প্রকাশ করেছে বিটিআরসি। নতুন লাইসেন্সিং কাঠামো প্রযুক্তি-নিরপেক্ষ করার পাশাপাশি নীতিমলায় ল্যাসেন্স তিনটিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়াও একই লাইসেন্সের আওতায় একাধিক ধরনের সেবা দিতে পারবেন অপারেটররা। একসইসঙ্গে ভয়েস, ডেটা, ইন্টারনেট, ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস ও ওভার-দ্য-টপ (ওটিটি) ডিজিটাল সার্ভিস দেওয়ার সুযোগ থাকছে নতুন লাইসেন্স নীতিমালায়। এছাড়াও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে এনআইসিএসপি লাইসেন্সে সর্বোচ্চ ৭০% এবং আইসিএসপি লাইসেন্সে ৪৯% পর্যন্ত বিদেশি মালিকানার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ‘টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং কাঠামো সংস্কার নীতিমালা ২০২৫’-এর খসড়া প্রকাশ করে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি। এতে পুরোনো নিয়মনীতিতে ব্যাপক সংস্কার ও নতুন নতুন নীতির কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে এই সংস্কার নীতিমালা অনুমোদনের তারিখ থেকেই কার্যকর হবে।
খসড়া নীতিমালায় তিনটি মূল লাইসেন্স ক্যাটাগরি প্রস্তাব করা হয়েছে। অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার (এনএনএসপি) মোবাইল ও ফিক্সড অপারেটরদের জন্য। ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড কানেক্টিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (এনআইএসপি) ফাইবার, টাওয়ার ও ব্যাকহল নেটওয়ার্কের জন্য এবং আন্তর্জাতিক ভয়েস ও ডেটা সংযোগের জন্য থাকবে ইন্টারন্যাশনাল কানেক্টিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (আইসিএসপি)। স্থানীয় পর্যায়ের ইন্টারনেট ও টেলিকম সেবা প্রদানকারীদের জন্য দুটি এনলিস্টমেন্ট ক্যাটাগরি প্রস্তাব করা হয়েছে, স্মল আইএসপি সার্ভিস ও স্মল টেলিকম সার্ভিস।
নীতিমালায়, দেশের নিজস্ব কনটেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক (সিডিএন), হাইপারস্কেলার এবং ডেটা সেন্টারগুলোকে উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ কানেক্টিভিটি সুবিধা নিশ্চিত করার কথাও উল্লেখ রয়েছে। তিন ধাপে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নীতিমালার প্রথম ধাপে বাজারে প্রতিযোগিতা, লাইসেন্সধারীদের মধ্যে যৌক্তিক সংহতি এবং নতুন বিনিয়োগে সহায়ক নীতি বাস্তবায়ন করা হবে। এটা করা হবে সরকারের অনুমোদনের পরপরই। এ পর্যায়ে বিটিআরসি নীতিমালার আলোকে প্রয়োজনীয় নীতিগত ও সংবিধিবদ্ধ পরিবর্তন আনা হবে।
দ্বিতীয় ধাপে বিটিআরসি নতুন লাইসেন্স ক্যাটাগরির গাইডলাইন কার্যকর করার পরেই কেবল নতুন লাইসেন্স ক্যাটাগরিতে আবেদন করা যাবে। পুরনো লাইসেন্সধারীরা কেবল নতুন কাঠামোর আওতায় রিনিউ করতে পারবে এবং বিদ্যমান লাইসেন্সধারীরা নির্ধারিত রূপান্তরপথ অনুযায়ী নতুন লাইসেন্স ক্যাটাগরিতে পরিবর্তনের সুযোগ পাবে।
২০২৭ সাল থেকে শুরু হবে তৃতীয় ধাপের নীতি বাস্তবায়ন। এই সময়ের মধ্যে সকল বিদ্যমান লাইসেন্সধারীদের নতুন কাঠামোর অধীনে স্থানান্তরিত হতে হবে। তবে যেসব ক্যাটাগরি আগেই সম্পূর্ণ রূপান্তর সম্পন্ন করবে, সেগুলোর জন্য এই ধাপ আরও আগে কার্যকর হতে পারে। বর্তমান মেয়াদের ভিত্তিতে প্রতিটি লাইসেন্স ক্যাটাগরির জন্য চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারিত হবে।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিশেষজ্ঞ, বিনিয়োগকারীরাসহ অন্যান্য খাত সংশিষ্ট ও সাধারণ জনগণ এই খসড়া নীতিমালায় মতামত দিতে পারবেন। ৩০ এপ্রিল সময়ের মধ্যে ই-মেইলে মতামত দেওয়া যাবে। পাশাপাশি ডাকযোগে কমিশনার (ইএন্ডও), বিটিআরসি, প্লট ই-৫/এ, আগারগাঁও প্রশাসনিক এলাকা, শেরে বাংলা নগর, ঢাকা-এই ঠিকানায় মতামত পাঠানো যাবে।
এখানে ক্লিক করে এই খসড়া লাইসেন্সের অনুলিপি পাওয়া যাবে।
এর আগেই একটি সভায় বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী জানিয়েছিলেন, বর্তমানের ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স), ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইডিডব্লিউ) ও ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) লাইসেন্স মেয়াদ শেষে বাতিল হবে। এর ফলে অপারেটরদের মধ্যে সরাসরি সংযোগ প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি হবে, সেবার গুণগত মান উন্নত হবে এবং খরচ কমবে।
একইভাবে নীতিমালাটি কার্যকর হলে দেশের বিদ্যমান লাইসেন্সিং কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন আসলেও সেবাপ্রদান সহজতর হবে, বাজারে প্রতিযোগিতার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হবে এবং উদ্ভাবন ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে বলে মনে করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।