প্রসঙ্গ: ইস্টার সানডেতে ঐচ্ছিক ছুটি ও কিছু কথা

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png টেকভয়েস২৪  ডেস্ক
https://techvoice24.com/assets/images/logoIcon/logo.png
  ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বের সব খ্রিস্টান ভাই-বোনদের জন্য ‘ইস্টার সান ডে’ বা ‘পাস্কা পর্ব’ এক বিশেষ ও মহান ধর্মীয় উৎসব। এটাকে খ্রিস্ট বিশ্বাসীরা ‘পুনরুত্থান উৎসব’ বলেন। দীর্ঘ ৪০ দিন উপবাস, ধ্যান-প্রার্থনা ও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং আধ্যাত্মিক প্রস্তুতির পর আসে এই বিশেষ দিনটি।

আমরা যারা খ্রিস্ট বিশ্বাসী তারা বিশ্বাস করি প্রভু যীশুখ্রিস্ট মৃত্যুকে জয় করেছেন। সশরীরে পুনরুত্থিত হয়েছেন। তাই, আমরা পুনরুত্থান উৎসব উদযাপন করে থাকি। পুনরুত্থান উৎসব। আমাদের জন্য এক মহা আনন্দের দিন। ‘ইস্টার সান ডে’-কে ঘিরে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান শুরু হয় সপ্তাহব্যাপী।

 ১৩ এপ্রিল, রবিবারের (তালপত্র রবিবার) মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পুণ্য সপ্তাহ। আজ পুণ্য বৃহস্পতিবার। সারা পৃথিবীর ধর্শ যাজকদের পর্ব দিবস। আগামীকাল পুণ্য শুক্রবার। যীশুখ্রিস্ট ক্রুশে মৃত্যুবরণ স্মরণানুষ্ঠান। পুণ্য শনিবার রাতে  তিন ঘণ্টাব্যাপী মহানিস্তার জাগরণী অনুষ্ঠান ও রবিবার সকালে ‘পুনরুত্থান উৎসবে’র মধ্য দিয়ে ‘ইস্টার সান ডে’ পালন করা হবে। সপ্তাহব্যাপী চলছে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান মালা।

ঈদুল ফিতর মুসলিম ভাই-বোনদের জীবনে একটি অনন্য দিন। মহান ধর্মীয় উৎসব। দীর্ঘ এক মাস (৩০ দিন) সিয়াম সাধনা ও রোজা পালনের পর আসে এই পবিত্র ঈদ। নৈতিক, আত্মিক ও সামাজিক পরিশুদ্ধির সীমানা পেরিয়ে সামষ্টিক কল্যাণ নিয়ে ঈদ আসে। ঈদ আসে কৃচ্ছ্রতা ও শুদ্ধতার প্রতীক হয়ে।

মুসলিম ভাই-বোনদের মহান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। অন্যদিকে, খ্রিস্টান ভাই-বোনদের জন্য ‘ইস্টার সান ডে’ মহান ধর্মীয় উৎসব। ৩০ দিন সিয়াম সাধনা ও রোজা পালনের পর আসে এই পবিত্র ঈদ। আমাদের দীর্ঘ ৪০ দিন উপবাস, ধ্যান-প্রার্থনা ও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং আধ্যাত্মিক প্রস্তুতির পর আসে ‘ইস্টার সান ডে’।

ধর্মীয় ‍দৃষ্টিকোণ থেকে এই একই অধ্যাত্মিক মর্যাদার দুটি ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে সরকারিভাবে যে ছুটির তালিকা দেওয়া হয়েছে সেটা দেখে একজন খ্রিস্ট বিশ্বাসী হিসেবে মন খারাপ হয়েছে।

ঈদুল ফিতর (ঈদের পূর্বের দুদিন ও পরের দুদিন দিন) শনিবার, রবিবার, মঙ্গলবার ও বুধবার, ২৯, ৩০ মার্চ ও ১, ২ এপ্রিল ২০২৫ নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ৪ দিন। ঈদুল ফিতর সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫ সাধারণ ছুটি ১ দিন। ঈদুল ফিতর (ঈদের পরের তৃতীয় দিন) বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল ঐচ্ছিক ছুটি (মুসলিম পর্ব) ১ দিন। ৪ এপ্রিল শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটি। সব মিলে টানা এক সপ্তাহ ছুটি ছিল।

অন্যদিকে, ইস্টার সানডে, রবিবার, ২০ এপ্রিল ঐচ্ছিক ছুটি (খ্রিস্টান পর্ব) ১ দিন। এটা খ্রিস্টান ভাই-বোনদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। বিশ্বাসের নবায়নের উৎসব। মহা আনন্দের দিন। পুনরুত্থিত খ্রিস্টের মৃত্যুকে জয় করার দিন।

১৩ এপ্রিল,  রবিবার। চৈত্র সংক্রান্তি (চৈত্রের শেষ দিন) উপলক্ষে ১৩ এপ্রিল পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। দেশের অন্য জেলাগুলোতে চৈত্র সংক্রান্তি সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য ঐচ্ছিক ছুটি ছিল।

মানবতার ফেরিওয়ালা ও নীতি বাক্য বিক্রি করে খাওয়াওয়ালারা সব সময় বলে থাকেন ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আমরা সব ধর্মাবলম্বীদের শ্রদ্ধা ও সম্মানের চোখে দেখি। তারা একতা, সাম্য, মৈত্রী ও সম্প্রীতি ও মিলেমিশে বাস করার কথা বলেন। বাস্তবে এই চিত্রটা হলো ভিন্ন। তা না হলে বাংলাদেশে সংখ্যা লঘু হিসেবে খ্রিস্টান ভাই-বোনরা কি এক দিনের জন্য কি সরকারিভাবে সাধারণ ছুটি পেতে পারেন না?

অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আছে যারা ‘ইস্টার সান ডে’ কখন আসে তারা মনে রাখে না। ছুটি তো পরের কথা। আর অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা? অন্য ধর্মের ভাই-বোনরা এত ঘটা করে সব সুযোগ-সুবিধা নিলে আমাদেরও তো সেটা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

এবারের ইস্টার সানডে, রবিবার, ২০ এপ্রিল। গতানুগতিকভাবে দিনটি ঐচ্ছিক ছুটি হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়ে আসছে। ধর্মীয় দিক থেকে দেশের সংখ্যা লঘু হিসেবে ‘ইস্টার সান ডে’ উৎসবকে একটা দিনের জন্য অন্তত সাধারণ ছুটি দেওয়া যেতে পারতো। এটাকে সেভাবে কখনও মূল্যায়ন করা হয়নি। এখনও হচ্ছে না। মানবতা ও সম্প্রীতির বাণী শুধু মুখেই থেকে গেল। বাস্তবে আর রূপ নিল না।

লেখক: উজ্জ্বল এ গমেজ, হেড অব অনলাইন, টেকভয়েস২৪, লেখক ও সাংবাদিক


আপনার মতামত দিন